মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমন: উদ্দেশ্য এবং পরিণতি?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151314-মার্কিন_যুক্তরাষ্ট্রে_ফিলিস্তিনপন্থী_শিক্ষার্থীদের_বিক্ষোভ_দমন_উদ্দেশ্য_এবং_পরিণতি
পার্স টুডে - মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত হওয়ার কারণে ৬,০০০ এরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে।
(last modified 2025-08-26T11:51:50+00:00 )
আগস্ট ২১, ২০২৫ ১৬:০৯ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন পুলিশ
    ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন পুলিশ

পার্স টুডে - মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত হওয়ার কারণে ৬,০০০ এরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে।

শারীরিক আক্রমণ, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো, চুরি ও "সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন" করার মতো মামলাসহ একাধিক বেআইনি তৎপরতার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে অনেক বিদেশী ছাত্রের আন্তর্জাতিক ছাত্র ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফলে নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। 

একদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জোর দিয়ে বলেছে যে ভিসা বাতিল আইনের কাঠামোর ভিত্তিতে এবং জননিরাপত্তা রক্ষার জন্য করা হয়েছে।

কিন্তু অন্যদিকে, বিশেষ করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখিত "সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন" বিভাগটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এই শব্দটিকে ব্যাপকভাবে এবং অস্পষ্টভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও ব্যক্তিদের মতামত প্রকাশের সাথে সম্পর্কিত করা হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অনেক মনোযোগ পেয়েছে তা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ: ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক সংঘাতে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো।আমেরিকান ক্যাম্পাসগুলোতে অনেক আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং কর্মী ফিলিস্তিনের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন প্রকাশের অধিকার প্রয়োগ করছেন। এই সমর্থন কার্যক্রমের মধ্যে র‍্যালিতে অংশগ্রহণ, অনলাইনে মতামত প্রকাশ, নাগরিকসুলভ সক্রিয়তা এবং এমনকি শিক্ষামূলক প্রচারণা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

কিন্তু এই ধরণের কার্যকলাপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভিসা সীমাবদ্ধ করার ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে যে এই পদক্ষেপগুলি মৌলিক আমেরিকান নীতির সাথে, বিশেষ করে বাক স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক কিনা। মার্কিন সংবিধান, বিশেষ করে এর প্রথম সংশোধনী, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। এই নীতি অনুসারে, প্রত্যেকেরই মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে, এমনকি সেই মতামতও যা সমাজের একটি অংশের কাছে অপ্রিয় বা বিতর্কিত হতে পারে।

তাই কেবল রাজনৈতিক সমর্থনের কারণে অথবা গাজায় গণহত্যার নিন্দা এবং মানবজীবন রক্ষায় তাদের মতামত প্রকাশের কারণে শাস্তি দেয়া বা সীমাবদ্ধ আরোপের জন্য শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা এই নীতির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়। মার্কিন সরকার  বিদেশী বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে এবং তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা ও বসবাসের সুযোগ হারানোর হুমকি দিচ্ছে যাতে তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে এবং ইসরায়েল ও গাজায় গণহত্যার সমালোচনা বা প্রতিবাদকে দমন করা যায়। এই প্রচেষ্টা এমন পর্যায়ে অব্যাহত রয়েছে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বৃহত্তম শিক্ষা কেন্দ্রকে তথাকথিত 'ইহুদি-বিদ্বেষে' জড়িত থাকার অভিযোগে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা দিতে হয়েছে।

অন্যদিকে, "সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন"-এর মতো লেবেলগুলোকে অবশ্যই সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং এসব অভিযোগের দৃঢ় প্রমাণ আছে কিনা দেখতে হবে যাতে এসবের রাজনৈতিক অপব্যবহার এবং এসবের মাধ্যমে বৈধ কার্যকলাপের দমন রোধ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, যদি এই শব্দটি ব্যাপকভাবে এবং সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছাড়াই ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি রাজনৈতিক বিরোধী ও সামাজিক কর্মীদের দমন করার একটি হাতিয়ার হয়ে  উঠবে। এমনকি এ ধরনের অপব্যবহার দেশগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতারও ক্ষতি করতে পারে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, মার্কিন সরকার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের সমর্থকরা ফিলিস্তিনের প্রতি যেকোনো সমর্থন ও গাজায় গণহত্যার বিরোধিতা অথবা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিরোধিতাকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে, যাতে তারা আরও সহজেই তাদের ভয় দেখাতে পারে এবং গাজার ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে ক্ষুব্ধ জনমতের চাপ থেকে ইসরায়েলকে মুক্ত করতে পারে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এবং দেশটির মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি নাগরিকদের মধ্যেও, সমাজের এমন কিছু অংশ রয়েছে যারা ফিলিস্তিনি অধিকারকে সমর্থন করে এবং এটিকে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের বিষয় বলে মনে করে এবং তারা অন্যান্য এমন কয়েকটি গোষ্ঠীর সাথে দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্বে লিপ্ত যারা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী নীতির বিরোধিতা বা এমনকি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন হিসাবে দেখে। এই দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক বিষয় ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের নীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

পরিশেষে এটা বলা যায়, ট্রাফিক লঙ্ঘনের মতো নির্দিষ্ট কিছু আইন লঙ্ঘনের ভিত্তিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সিদ্ধান্ত জননিরাপত্তা বজায় রাখার দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায্য, তবে এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং বৈধ রাজনৈতিক কার্যকলাপকে সীমিত করতে পারে না, বিশেষ করে  শিক্ষাঙ্গনে ও ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে।

এই বিষয়টি আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে যখন শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করার জন্য বা এর সাথে সম্পর্কিত নাগরিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের দায়ে দমন-পীড়নের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।