ইসরায়েল-মিশরীয় গ্যাস চুক্তি কেন ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i154356-ইসরায়েল_মিশরীয়_গ্যাস_চুক্তি_কেন_ভেঙে_পড়ার_দ্বারপ্রান্তে
পার্সটুডে - ইহুদিবাদী ইসরায়েলি শাসক গোষ্ঠী এবং মিশরের মধ্যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত পার্থক্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন তেল আবিব এবং কায়রোর মধ্যে বৃহত্তম গ্যাস চুক্তিটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
(last modified 2025-11-23T13:34:19+00:00 )
নভেম্বর ২৩, ২০২৫ ১৯:২১ Asia/Dhaka
  • ইসরায়েল-মিশরীয় গ্যাস চুক্তি কেন ভেঙে পড়ার  দ্বারপ্রান্তে?

পার্সটুডে - ইহুদিবাদী ইসরায়েলি শাসক গোষ্ঠী এবং মিশরের মধ্যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত পার্থক্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন তেল আবিব এবং কায়রোর মধ্যে বৃহত্তম গ্যাস চুক্তিটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

পার্সটুডে অনুসারে,মিশরে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি চুক্তিগুলোর মধ্যে একটি এখন ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। এই চুক্তির মূল্য প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং এর লক্ষ্য হল ২০৪০ সালের মধ্যে মিশরে ১৩০ বিলিয়ন ঘনমিটারেরও বেশি গ্যাস রপ্তানি করা এবং এটি এখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

উল্লেখিত চুক্তি অনুসারে, ইসরায়েলের প্রতিদিন মিশরে প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রপ্তানি করার কথা ছিল; কিন্তু এটি এখন অধিকৃত ফিলিস্তিনে একটি জটিল রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অচলাবস্থায় প্রবেশ করেছে। মিশরের তেল মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুসারে, ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী থেকে বর্তমানে আমদানি করা গ্যাসের পরিমাণ প্রতিদিন ৮৫০ মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে। এই পরিমাণটি ২০১৯ সালের চুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ২০২০ সালে কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলি শাসক ২০২৫ সালের জুলাই মাসে চুক্তির সংশোধনীতে উল্লেখিত নতুন প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি - যার মধ্যে ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানি ধীরে ধীরে ১.৮ থেকে ২ বিলিয়ন ঘনফুটে বৃদ্ধি করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে, চুক্তি বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত এবং নিয়ন্ত্রক সমস্যাগুলোও পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। তেল আবিব প্রথমে প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য ঘাটতিকে দায়ী করে ঘোষণা করেছিল যে ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে সমস্যাটি সমাধান করা হবে; কিন্তু পরে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এবং কিছু নেসেট (ইসরায়েলি সংসদ) কমিটি গাজার পরিস্থিতি এবং সিনাইতে মিশরীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে মিশরের সাথে রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে চুক্তির নতুন পর্যায়ের বাস্তবায়ন স্থগিত করতে চায় এবং এমনকি ভবিষ্যতে গ্যাসের দাম নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে চায়।

প্রকৃতপক্ষে, নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এই অর্থনৈতিক চুক্তিকে অতি ডানপন্থীদের সমর্থন বজায় রাখার এবং দুর্নীতির মামলা এবং নিরাপত্তা সমালোচনার ফলে সৃষ্ট আইনি চাপ থেকে বাঁচতে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করেছে। গ্যাস চুক্তিটি নষ্ট করে, ইসরায়েলি ডানপন্থীরা গাজায় যুদ্ধের পরিবেশ বজায় রাখতে এবং মিশরের সাথে উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে যাতে তারা তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এটি ব্যবহার করতে পারে।

ইসরায়েলি অর্থনৈতিক ওয়েবসাইট "বিজপোর্টাল" এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে ইসরায়েলের সাথে গ্যাস বাণিজ্য থেকে মিশর বার্ষিক বিলিয়ন ডলার আয় করে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েল "লেভিয়াথান" গ্যাসক্ষেত্রের মাধ্যমে মিশরে তার গ্যাস রপ্তানি করে এবং এর একটি বড় অংশ মিশরের গ্যাস তরলীকরণ সুবিধার মাধ্যমে ইউরোপে পরিবহন করা হয়। এই রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত লাভের প্রায় ৮০ শতাংশ মিশরে যায়। বিদ্যমান চুক্তি অনুসারে, ইসরায়েল আগামী পনেরো বছরে মিশরে ১৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গ্যাস বিক্রি করার কথা রয়েছে, যার একটি বড় অংশ মিশরের অর্থনীতিতে থাকবে।

ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বাস করে যে মিশরে গ্যাস রপ্তানি অব্যাহত রাখলে কায়রোর অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং এটি গাজার উপর চাপ সৃষ্টি করার এবং গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার হুমকির পথে যেকোনো বাধা প্রতিরোধ করার তাদের পরিকল্পনার পথে একটি বাধা হবে। তারা আরও উদ্বিগ্ন যে ভবিষ্যতে গ্যাসের দাম "ইসরায়েলের জন্য ন্যায্য হবে না"। নেতানিয়াহু মিশরে গ্যাস রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে পারবেন না, কারণ লেভিয়াথান গ্যাস ক্ষেত্রের অংশীদার আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি - বিশেষ করে আমেরিকান কোম্পানি শেভরন - ইসরায়েলি সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা এই ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে এবং গ্যাস রপ্তানির একমাত্র অর্থনৈতিক পথ হল মিশরীয় গ্যাস ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক। অন্যান্য বিকল্পগুলি হয় খুব ব্যয়বহুল অথবা তাদের কোনও রপ্তানি ক্ষমতা নেই।

এই সময়ে মিশর ইসরায়েলি শাসন থেকে গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে; এমন পর্যায়ে যেখানে ২০২৬ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে আমদানি আংশিক বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিশর এখন উত্তর আফ্রিকার বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিকারক হয়ে উঠেছে এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য মাসিক টেন্ডার করার পরিকল্পনা করছে। মিশর সম্প্রতি স্পট মার্কেট থেকে তিনটি কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার জন্য একটি টেন্ডার করেছে এবং বছরের শেষ নাগাদ সৌদি, ফরাসি, ডাচ এবং আজারবাইজানি কোম্পানি থেকে আরও ২০টি কার্গো আমদানি করতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থা থেকে গ্যাসের ঘাটতি পূরণের জন্য ২০২৬ সালে প্রায় ১২৫টি কার্গো আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইতিমধ্যে, গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের প্রয়োজনীয় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল প্রদানের সমাধান উপস্থাপনের জন্য মিশরের সামরিক কমান্ডার, অর্থনীতিবিদ এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সাথে নিবিড় বৈঠক চলছে। মিশর ২০৩০ সাল পর্যন্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং তার জ্বালানি সরবরাহকারীদের বৈচিত্র্যময় করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিও চাইছে।

পরিশেষে, মিশর-ইসরায়েলি গ্যাস চুক্তি, যা এই অঞ্চলের বৃহত্তম জ্বালানি সহযোগিতাগুলোর মধ্যে একটি হওয়ার কথা ছিল, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক কারণের এখন ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই পরিস্থিতি দেখায় যে ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থা এবং মিশরের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এই অঞ্চলের রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা উন্নয়নের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত।#

 

পার্সটুডে/এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।