বিশ্লেষণ:
ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার প্রতি ইউরোপের অবস্থান
-
ইইউ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাইয়া কালাস
পার্স টুডে – ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কালাস ঘোষণা করেছেন যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হলে তার পর ইইউ সদস্যরা রাশিয়ার উপর চাপ বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রমকে সমর্থন করবে।
পার্স-টুডে জানিয়েছে, ২৯শে আগস্ট, শুক্রবার ইইউ প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর ক্যালাস বলেছেন যে, "ইউক্রেনে যেকোনো যুদ্ধবিরতির পর ইইউ'র সামরিক মিশন সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়ার কার্যক্রমের প্রতি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।" তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধ-বিরতির পর এইসব পদক্ষেপ দেশটির প্রতি পাশ্চাত্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গ্যারান্টিগুলোর অন্যতম।
তিনি আরও বলেছেন, আমাদের আরও পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ইউক্রেনীয় সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ইইউ'র প্রশিক্ষণ বাহিনী পাঠানোর কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সম্পর্কে ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান বিশ্বাস করেন যে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন স্পষ্টতই শান্তি চায়, কিন্তু যে পক্ষ শান্তি চায় না সেই পক্ষটি হল রাশিয়া।
কায়া আরও বলেছেন, "সবাই জানে যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি প্রচেষ্টাকে উপহাস করছেন, তাই একমাত্র কার্যকর পথ হল চাপ প্রয়োগ"। এখন পর্যন্ত ২৭টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র ৮০ হাজারেরও এরও বেশি ইউক্রেনীয় সৈন্যকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হওয়ায় রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে বিশাল সীমান্তের অধিকারী এই দেশটিকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার কথা বিবেচনা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ওয়াশিংটন ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর ইউরোপীয় পরিকল্পনাকে সমর্থন করতে পারে, কিন্তু আমেরিকান সেনা সেই দেশে পাঠানো হবে না।
সুতরাং, ইউক্রেনীয় যুদ্ধের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর রাশিয়ার প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলির অবস্থান হল ইউক্রেনকে সমর্থন করা ও রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি জোরদার করা, কিন্তু একই সাথে ইইউতে মতবিরোধ ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেন-রুশ ইস্যুতে ইউরোপীয় জোটের অভিন্ন অবস্থানগুলো বেশ কয়েকটি তৎপরতাকেন্দ্রীক:
- রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা: ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে।
- ইউক্রেনের জন্য সামরিক ও আর্থিক সহায়তা: ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্ত্র, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান খাতে বাজেট নির্ধারণ করছে।
- রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জনের প্রচেষ্টা: রাশিয়ান গ্যাস ও তেলের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা ইউরোপীয় দেশগুলোর একটি প্রধান লক্ষ্য, যার ফলে জ্বালানি নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
তবে, ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে মতপার্থক্য এবং চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- অবস্থানের তীব্রতার পার্থক্য: কিছু দেশ, যেমন লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, অন্যদিকে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশগুলি আরও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
- ট্রাম্পের অস্থির অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ: ইউক্রেন যুদ্ধ ও কিয়েভকে সামরিক সহায়তা প্রদানের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানের ঘন ঘন ওঠানামার পরিপ্রেক্ষিতে, কোনো কোনো ইউরোপীয় কর্মকর্তা, যারা ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন, তারা স্বাধীন পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে ট্রাম্পের চুক্তি অনুসারে, এই দেশগুলিকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইউক্রেনে পাঠানো অস্ত্রের জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে।
- ইউক্রেনেরও ইউরোপের কাছে সুনির্দিষ্ট অনুরোধ রয়েছে। রাশিয়ার সাথে যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলো যেন শান্তিরক্ষী হিসেবে তাদের সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সেই আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।