ওয়াশিংটন কেন ইউক্রেনের জয়ের আশাকে ইউরোপের কল্পনা বলে মনে করে?
-
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স
পার্সটুডে–রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনের জয়ের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশাকে কল্পনা বলে মূল্যায়ন করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
পার্সটুডে আরও জানায়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সোশ্যাল নেটওয়ার্ক 'এক্স'-এ লিখেছেন: ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং কিয়েভের সংঘাতে জয়লাভের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার ধারণাটি কেবল একটি 'কল্পনা'। ভ্যান্স আরও বলেছেন: একটি ধারণা রয়েছে যে আমরা যদি কেবল আরও অর্থ দেই; আরও অস্ত্র পাঠাই বা নিষেধাজ্ঞা কঠোর করি, তবে বিজয় নিকটবর্তী। কল্পনার জগতে বসবাসকারী কূটনীতিক বা রাজনীতিবিদদের দ্বারা শান্তি অর্জিত হয় না বরং বুদ্ধিমান এবং বাস্তববাদী ব্যক্তিদের দ্বারা অর্জিত হয়।
আমেরিকার এই কর্মকর্তা ইউক্রেনে ২৮-দফা মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার সমালোচকদের এমন লোক বলে মনে করেন যারা হয় পরিকল্পনা সম্পর্কে যথেষ্ট জানেন না অথবা বাস্তবতা বোঝেন না। ভ্যান্স জোর দিয়ে বলেন সংঘাত সমাধানের যে কোনও প্রস্তাব রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে কারণ সংঘাতের দুটি পক্ষ এবং তাদের লক্ষ্য হল শত্রুতা পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করা।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে ইউরোপের বিজয়ের আশাকে কাল্পনিক বলে মনে করেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন ইউরোপীয় বিশ্লেষণ স্থল যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে এবং অবাস্তব অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। জেডি ভ্যান্স বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কে ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যধিক আশাবাদী এবং অবাস্তব।
এই বিষয়ে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার সমালোচনাকে 'কল্পনার জগতে বসবাস' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ভ্যান্সের মতে, ইউক্রেনের ওপর সম্পূর্ণ বিজয়ের জন্য ইউরোপের আশাকে অবাস্তব বলে মনে করার বেশ কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:
- ইউক্রেনের সামরিক শক্তির ক্ষয়: প্রায় চার বছরের যুদ্ধের পর, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী সৈন্য, সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই দুর্বলতাগুলো দীর্ঘ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হ্রাস করেছে এবং একটি সিদ্ধান্তমূলক বিজয়ের সম্ভাবনা হ্রাস করেছে।
- বিদেশী সাহায্যের উপর অত্যধিক নির্ভরতা: পশ্চিমা আর্থিক ও সামরিক সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম নয়। ভ্যান্স বিশ্বাস করেন যে এই সহায়তার মূল বোঝা ইউরোপের বহন করা উচিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়। কারণ, ওয়াশিংটন আর ভারী খরচ দিতে ইচ্ছুক নয়।
- রাশিয়া পরাজয় মেনে নিতে রাজি নয়: রাশিয়া এখনও একটি প্রধান সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি, তাই যুদ্ধক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অতএব, রাশিয়ার সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের ব্যাপারে ইউরোপের ধারণা অবাস্তব।
- শান্তি চুক্তির প্রয়োজনীয়তা: ভ্যান্স জোর দিয়ে বলেন, যে-কোনো শান্তি পরিকল্পনা ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তিনি বলেন হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা এবং ন্যূনতম ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা একটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের স্বপ্ন দেখার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ফলস্বরূপ, ভ্যান্সের দৃষ্টিতে, ইউক্রেনের বিজয়ের ব্যাপারে ইউরোপের আশা একটি বাস্তব দৃশ্যকল্পের চেয়ে বেশিরভাগই রাজনৈতিক বিভ্রম। তিনি বিশ্বাস করেন এই পদ্ধতি অব্যাহত রাখলে যুদ্ধ কেবল দীর্ঘায়িত হবে। সেইসাথে ইউরোপ এবং বিশ্বের ওপর আরও বেশি মানবিক ও অর্থনৈতিক মূল্য চাপবে।
এই একই যুক্তি ওয়াশিংটনকে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য ২৮-দফা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে প্ররোচিত করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রায় এক মাস ধরে 'নীরবে' এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন তিনি আশা করছেন 'আগামী দিনে' মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। এ প্রসঙ্গে, মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যানিয়েল ড্রিসকলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ২০ নভেম্বর ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে মার্কিন প্রশাসনের শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার জন্য কিয়েভের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য ছাড় প্রয়োজন। মার্কিন সরকার ইউক্রেনকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে এই পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করতে বলেছে, অন্যথায় অস্ত্র সরবরাহ এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা স্থগিত করা হবে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ২১ নভেম্বর দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় ঘোষণা করেছিলেন যে মস্কো আলোচনার জন্য প্রস্তুত এবং মার্কিন পরিকল্পনা সংকট সমাধানের ভিত্তি হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত ২৮-দফা পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনকে মস্কোর আঞ্চলিক এবং নিরাপত্তা ছাড় দিতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেনের ২০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড দখল করবে। খসড়ার বিধান অনুসারে, রাশিয়া G8-এও ফিরে আসবে এবং তাদের ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। ইউক্রেনের সেনাসংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ ইস্যুটি বাদ দেওয়া হবে। রাশিয়া আবার ইউক্রেন আক্রমণ করলে 'সমন্বিত এবং সিদ্ধান্তমূলক সামরিক প্রতিক্রিয়া' দেখানোর প্রতিশ্রুতি এই পরিকল্পনায় দেওয়া হয়েছে। যদিও এই ধরণের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা পালন করবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে বাস্তব নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য এই প্রথমবারের মতো তার প্রস্তুতির কথা প্রকাশ করেছে।#
পার্সটুডে/এনএম/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন