পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আফগান সহকর্মীদের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152384-পশ্চিমা_দেশগুলো_তাদের_আফগান_সহকর্মীদের_সাথেও_বিশ্বাসঘাতকতা_করেছে
পার্সটুডে-পশ্চিমা দেশগুলো পূর্বের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে গিয়ে তাদের আফগান সহকর্মীদের পরিত্যাগ করেছে।
(last modified 2025-09-29T12:37:45+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫ ১৭:২৩ Asia/Dhaka
  • • ব্রিটেনের আফগান সহকর্মীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
    • ব্রিটেনের আফগান সহকর্মীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

পার্সটুডে-পশ্চিমা দেশগুলো পূর্বের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে গিয়ে তাদের আফগান সহকর্মীদের পরিত্যাগ করেছে।

ইংরেজি সংবাদপত্র ডেইলি মেইল এর বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে , যে ব্রিটিশ সরকার হঠাৎ করে এবং পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে কাজ করা আফগানদের পুনর্বাসন কর্মসূচি, (যা "RP" স্কিম নামে পরিচিত) নতুন আবেদনকারীদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত শত শত আফগানকে হতবাক এবং চিন্তিত করে তুলেছে যারা ব্রিটেনে নিরাপদে বসবাসের সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মিডিয়া লিখেছে যে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে সহযোগিতার কারণে এই লোকেরা লন্ডন থেকে সহায়তা পাওয়ার আশা করেছিল, কিন্তু এখন তারা তালেবানের প্রতিশোধের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই লোকদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে তাদের ব্রিটেনেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের জবাবের অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু ব্রিটেনের এ্ই আকস্মিক সিদ্ধান্ত এই লোকদেরকে বিরাট বিপদের মধ্যে ফেলেছে।

অন্যদিকে, মার্কিন সরকারও সম্প্রতি অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা (টিপিএস) বাতিল করার পর দেশটিতে বসবাসকারী অনেক আফগান শরণার্থীকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে ফেলেছে। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর, মার্কিন বাহিনীর সাথে কাজ করা প্রায় ৯,৬০০ আফগান অস্থায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল, কিন্তু এখন অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা (টিপিএস) বাতিল হওয়ার ফলে, তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি বিলটি পাস হলে, যেসব আফগান তাদের আশ্রয় মামলা প্রক্রিয়াকরণের জন্য অপেক্ষা করছেন তাদেরও বার্ষিক অনেক ফি দিতে হবে, যদিও তাদের বেশিরভাগই খুবই কম বেতনের চাকরিতে কাজ করছেন।

এছাড়াও, ২০২৫ সালের ৮ জুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তানসহ আরো ১১টি দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার আদেশ কার্যকর হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির মধ্যে থাকা আফগান ইতিমধ্যেই যে ভয়, হাতাশা ও  পাশ্চাত্যের বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি অনুভূতি অনুভব করছিলেন তা আরও বেড়ে গেল। আফগানদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বেশ কয়েকটি অভিবাসন পথ রয়েছে, তবে প্রায় সবগুলিই ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধের চেষ্টা করছে। মার্কিন বাহিনীর সাথে কর্মরত হাজার হাজার আফগান নাগরিকের পরিষেবা হ্রাস এবং ভিসার জন্য আবেদন করতে সহায়তা করার জন্য স্থাপিত সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি এবং অন্যান্য ন্যাটো দেশগুলি বারবার তাদের আফগান সহযোগিতাকারীদেরকে তালেবানদের হাত থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ অভিবাসী ভিসা (SIV), যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসন সহায়তা কর্মসূচি (ARAP) এবং জার্মানি, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া পক্ষ থেকেও অনুরূপ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলের পতনের পর, এই প্রতিশ্রুতিগুলির অনেকগুলিই পূরণ হয়নি। ফলস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে আফগানদের আশ্রয় দেয়া সংক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মামলা অনিশ্চিত অবস্থায় রয়ে গেছে। বিপুল সংখ্যক আফগান দীর্ঘ অপেক্ষমাণ তালিকায় আটকে ছিল। কিছু ইউরোপীয় দেশ হঠাৎ করে প্রোগ্রামগুলি বন্ধ করে দেয় (উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্য ২০২৫ সালে "RP" প্রোগ্রামটি বন্ধ করে দেয়)। ফলস্বরূপ, অনেক আফগান সহযোগিতাকারী আফগানিস্তানে রয়ে যায় এবং তালেবান হুমকির ছায়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন যে এই আচরণ পশ্চিমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নৈতিকতার অভাব ফুটে উঠেছে। কেননা যখন পশ্চিমারা যখন আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ শেষ হয়ে যেতে দেখল তাদের তাদের রক্ষায় মানবিক বাধ্যবাধকতা টুকুও আর অনুভব করছে না। এই আচরণের বিরুদ্ধে কিছু অবসরপ্রাপ্ত পশ্চিমা সৈন্য আপত্তি জানিয়েছে। তারা ঘোষণা করেছে যে "আমাদের আফগান সহকর্মীদের রক্ষায় উদাসিনতা আমাদের সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতার উপর কলঙ্ক।" সাবেক ব্রিটিশ সৈনিক ডসন বলেছেন: "যদি আমরা এই লোকদের তালেবানদের হিংস্র থামার মুখে ছেড়ে দিই, তাহলে আমরা অনেক বড় ভুল করব। কেননা তারা আমাদের সাথে কাজ করেছেন তাদের সমর্থন করা আমাদের কর্তব্য।"

সবশেষে বলা যায়, "পশ্চিমা দেশগুলোর তাদের আফগান সহকর্মীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা" এর একটি মানবিক দিক রয়েছে, যা হাজার হাজার মানুষকে তালেবান প্রতিশোধের মুখে ফেলবে। #

পার্সটুডে/এমআরএইচ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।