ইরানের বিরুদ্ধে বাতিল প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করার দাবির কোনো আইনি বৈধতা নেই
https://parstoday.ir/bn/news/world-i153424-ইরানের_বিরুদ্ধে_বাতিল_প্রস্তাব_পুনরুজ্জীবিত_করার_দাবির_কোনো_আইনি_বৈধতা_নেই
পার্সটুডে-ভিয়েনায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত পিটার জেনকিন্স বলেছেন, প্রস্তাবের বৈধতা শেষ হওয়ার পরে 'স্ন্যাপব্যাক' পদ্ধতির মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে বাতিল নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার দাবির আইনি বৈধতা নেই।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
অক্টোবর ২৭, ২০২৫ ১০:৪৬ Asia/Dhaka
  • ভিয়েনায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত পিটার জেনকিন্স
    ভিয়েনায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত পিটার জেনকিন্স

পার্সটুডে-ভিয়েনায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত পিটার জেনকিন্স বলেছেন, প্রস্তাবের বৈধতা শেষ হওয়ার পরে 'স্ন্যাপব্যাক' পদ্ধতির মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে বাতিল নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার দাবির আইনি বৈধতা নেই।

তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ ধারার আইনি পর্যালোচনার পর জোর দিয়ে একথা বলেছেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের  ২২৩১ ধারার আইনি ব্যাখায় তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে বাতিল প্রস্তাবগুলি পুনরুজ্জীবিত করার দাবির আইনি বৈধতা নেই এবং স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া সক্রিয় করার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের পদক্ষেপ কেবল অন্যায্যই নয় বরং একটি রাজনৈতিক ভুল।  আর এ ভুল আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

'পিটার জেনকিন্স' এর মতে, ২২৩১ ধারার  ৮ অনুচ্ছেদ এর বিধানগুলি বাস্তবায়নের জন্য ১০ বছরের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। এই সময়ের শেষে পূর্ববর্তী সমস্ত বিধিনিষেধ এবং রায় শেষ হয়ে যাবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, অনুচ্ছেদ ১২-এ সংজ্ঞায়িত স্ন্যাপব্যাক কেবলমাত্র সেই সময়ের জন্য বৈধ। ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ সালের পর এটি সক্রিয় করার কোনও আইনি ভিত্তি নেই।

সাবেক বৃটিশ রাষ্ট্রদূত তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, যদি এই ১০ বছরের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলির (অনুচ্ছেদ ৭(ক) সাপেক্ষে) কোনও কারণে পুনর্বহাল করা হয় তাহলে অনুচ্ছেদ ৮-এ নির্ধারিত সময়কালের সমাপ্তি তাদের সমাপ্তিও বোঝাবে।

১৮ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২২৩১-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান, চীন এবং রাশিয়া ঘোষণা করে যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত সমস্ত বিধিনিষেধ শেষ হয়ে গেছে। আগের প্রস্তাবগুলোর বিধান বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ট্রোইকা, যা কয়েক মাস আগে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার অপব্যবহার করে তথাকথিত 'স্ন্যাপব্যাক' ব্যবস্থা সক্রিয় করেছিল। তারা দাবি করে যে বাতিল করা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলি পুনর্বহাল করা হয়েছে। এই অস্পষ্টতা নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত ব্যাখ্যাগুলিতে একটি নতুন আইনি বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।

১৬ অক্টোবর, ইরান, রাশিয়া এবং চীন একটি যৌথ চিঠিতে জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ২২৩১ ধারার ৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে,'সকল বিধান' পূর্বোক্ত তারিখ থেকে বাতিল করা হয়েছে। ফলে'পূর্ণ এবং সময়োপযোগী অবসান হলো। এরমাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পারমাণবিক সমস্যার সমাপ্তি ঘটবে। ২২৩১ ধারার ৮ অনুচ্ছেদ ৮ অনুসারে 'গ্রহণের তারিখ ১০ বছরের মেয়াদ সময় নির্ধারণ করা হয়। এই সময়ের শেষে, ২২৩১ ধারা সমস্ত বিধান বাতিল বলে বিবেচিত হবে এবং কাউন্সিলের এজেন্ডা থেকে 'অপ্রসারণ (ইরান)' শিরোনামটি সরিয়ে ফেলা হবে।

এই ধারা ছাড়াও, বর্তমান ব্যাখ্যায় আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনুচ্ছেদ ৭(ক), অনুসারে 'বাস্তবায়নের দিন' থেকে ইরানের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাতিল করার শর্ত দেয় এবং অনুচ্ছেদ ১২ মতে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল বা 'স্ন্যাপব্যাক' করার প্রক্রিয়া সংজ্ঞায়িত করে।

এতে বলা হয়, যদি কোনও পক্ষ 'প্রতিশ্রুতিগুলোর গুরুতর লঙ্ঘন করে তাহলে বাতিলকৃত প্রস্তাবগুলির স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল সম্ভব। আজকের বিতর্ক এই বোঝাপড়া নিয়ে, ২২৩১ ধারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কি স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় থাকতে পারে?

এই ব্রিটিশ কূটনীতিকের মতে, যদি ধরে নেওয়া হয় যে স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় করার যে নীতিমালা তৈরি করা হয় সেটি অবৈধ ছিল না, তবুও এই পদক্ষেপটি স্বভাবতই 'অন্যায় এবং রাজনৈতিকভাবে স্পষ্টতই ভুল' ছিল। কারণ সেই সময়ে ইউরোপীয় ত্রয়ী তার নীতিমালা বা বাধ্যবাধকতা পূরণ করেনি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  চুক্তি থেকে অযৌক্তিভাবে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে,  বিশ্ব সভায় এই ধরনের আচরণ রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার বিরাট ক্ষতি করে।

ব্রিটিশ কূটনীতিক তার বিশ্লেষণের আরেকটি অংশে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইহুদি*বাদী সরকারের সাম্প্রতিক আক্রমণের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এ আক্রমণের কোনো আইনি বৈধতা নেই। তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই ধরণের পদক্ষেপের অনুমোদন করে না। ফলে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক আক্রমণ 'আগ্রাসনমূলক কাজ এবং জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থি'।#

পার্সটুডে/জিএআর/২৭