কেন আমেরিকার অধিকাংশ জনগণ ইরানে সামরিক পদক্ষেপ চাননি?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154784-কেন_আমেরিকার_অধিকাংশ_জনগণ_ইরানে_সামরিক_পদক্ষেপ_চাননি
পার্সটুডে: বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক ইরানবিরোধী সামরিক পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
(last modified 2025-12-06T12:54:13+00:00 )
ডিসেম্বর ০৬, ২০২৫ ১৮:৫১ Asia/Dhaka
  • ইরানে বিমান হামলার ঘোষণা ট্রাম্পের
    ইরানে বিমান হামলার ঘোষণা ট্রাম্পের

পার্সটুডে: বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক ইরানবিরোধী সামরিক পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

পার্সটুডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫ ডিসেম্বর পরিসংখ্যানভিত্তিক সাইট স্ট্যাটিস্টা  ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাম্প্রতিক হামলা সম্পর্কে একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এই জরিপ অনুযায়ী, অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।

সাইটটি লিখেছে, গত জুন মাসে মার্কিন হামলার পরপরই অনুষ্ঠিত জনমত জরিপগুলো দেখিয়েছে যে,, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২২–২৩ জুন ২০২৫ তারিখে (ইরানের প্রতিক্রিয়া ও ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণার আগে) সিএনএন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে, ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরি ট্রাম্পের হামলা শুরুর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

এই জরিপে দলগত বৈপরীত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে- ৮২% রিপাবলিকান এই পদক্ষেপের সমর্থন করেছিলেন, যেখানে ৬০% স্বতন্ত্র এবং ৮৮% ডেমোক্রেট এর বিরোধিতা করেছিলেন। তবে লক্ষণীয় যে, রিপাবলিকান ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, অর্থাৎ প্রায় প্রতি পাঁচজনে একজন, এই হামলার বিরোধিতা করেছিলেন।

এই বিরোধিতার পেছনে কয়েকটি মৌলিক কারণ রয়েছে:

প্রথমত, সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ মানুষের অবিশ্বাস। সিএনএন জরিপে অনেক উত্তরদাতা বলেছেন, সামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিচারক্ষমতার ওপর তাদের আস্থা নেই। তারা মনে করেন, ট্রাম্প জাতীয় স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক চাপ ও বিদেশি লবির প্রভাব বেশি বিবেচনা করেছেন।

দ্বিতীয় কারণ, আমেরিকার বিরুদ্ধে হুমকি বৃদ্ধির ভয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০% বলেছেন যে, ইরানের উপর হামলা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই উদ্বেগ বিশেষত তরুণ ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, নতুন যুদ্ধে প্রবেশ না শুধু আমেরিকার নিরাপত্তা শক্তিশালী করে না, বরং নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি করে।

তৃতীয় কারণ, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সাথে সংঘাত। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি "অনহীন যুদ্ধ" শেষ করতে এবং আমেরিকাকে বৈদেশিক সংঘাত থেকে দূরে রাখতে চান। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ ঠিক এর বিপরীত ছিল এবং অনেক ভোটার, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্ররা, এই হামলাকে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরোধী শ্লোগানের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করেছেন।

চতুর্থ কারণ, যুদ্ধের মানবিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়ের বিষয়ে উদ্বেগ। জরিপে মাত্র ৯% আমেরিকান ইরানে স্থল সৈন্য পাঠানোর সমর্থন করেছেন, যেখানে ৬৮% এর বিরোধিতা করেছেন। এর মানে হলো, যারা বিমান হামলা সমর্থন করেছেন, তারাও যুদ্ধের ব্যাপক ব্যয় বহন করতে ইচ্ছুক নন। আমেরিকার জনগণ ভালো করেই জানে যে, বৈদেশিক যুদ্ধ করদাতাদের উপর বিশাল বোঝা চাপায় এবং এর প্রধান শিকার সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ বা সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স নয়।

পঞ্চম কারণ, দলীয় ও প্রজন্মগত বিভাজন। যদিও ৮২% রিপাবলিকান ইরানের ওপর বিমান হামলার সমর্থন করেছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ৪৪% শক্তিশালী সমর্থন দেখিয়েছেন, যা ট্রাম্পের ভোটার বেসের কিছু অংশের মধ্যে সন্দেহের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও, ৩৫ বছরের কম বয়সী তরুণরা অন্যান্য বয়সী গ্রুপের তুলনায় এই পদক্ষেপের বেশি বিরোধিতা করেছেন এবং তাদের ট্রাম্পের প্রতি আস্থার মাত্রা কম ছিল। এটি প্রমাণ করে যে, আমেরিকার নতুন প্রজন্ম কূটনীতি ও যুদ্ধ এড়ানোর দিকে বেশি ঝুঁকছে।

সর্বোপরি, ট্রাম্পের ইরান হামলার ব্যাপক বিরোধিতাকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস, নিরাপত্তাজনিত পরিণতির ভয়, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সাথে সংঘাত, যুদ্ধের ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ এবং সামাজিক বিভাজনের সমন্বয় হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই কারণগুলো একত্রিত হয়ে বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক, এমনকি কিছু রিপাবলিকানকেও ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করতে পরিচালিত করেছে। ফলে এই হামলা শুধু জাতীয় ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হয়নি, বরং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনকে আরও গভীর করেছে এবং পুনরায় প্রমাণ করেছে যে, আমেরিকার জনমত নতুন কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না।#

পার্সটুডে/এমএআর/৬