নবী-পরিবারের (আ) অনন্য আত্মত্যাগের প্রশংসায় নাজিল হয় ১৭টি আয়াত
https://parstoday.ir/bn/news/world-i21319
১৪২৮ চন্দ্র-বছর আগে ২৫ শে জিলহজ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের অনন্য আত্মত্যাগের প্রশংসায় নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআনের সুরা ইনসান বা দাহরের ৫ থেকে ২২ নম্বর আয়াত।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬ ১৬:৪১ Asia/Dhaka
  •  নবী-পরিবারের (আ) অনন্য আত্মত্যাগের প্রশংসায় নাজিল হয় ১৭টি আয়াত

১৪২৮ চন্দ্র-বছর আগে ২৫ শে জিলহজ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের অনন্য আত্মত্যাগের প্রশংসায় নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআনের সুরা ইনসান বা দাহরের ৫ থেকে ২২ নম্বর আয়াত।

এ ছাড়াও ১৪০২ বছর আগে ৩৫ হিজরির এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফতের দায়িত্ব পালন শুরু করেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)।

একবার হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) অসুস্থ হয়ে পড়লে হযরত আলী (আ.) মানত করেন যে তাঁরা সুস্থ হলে তিন দিন রোজা রাখবেন। একই মানত করেন হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) ও তাঁর সন্তান হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) এবং পরিচারিকা ফিজ্জা। ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) সুস্থ হলে তারা মানত বা প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য রোজা রাখেন। ইফতারের জন্য কিছুই ছিল না ঘরে। হযরত আলী (আ.) এক রাত ধরে শ্রমিকের কাজ করে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে সামান্য আটা কিনে আনেন। সেই আটার এক তৃতীয়াংশ দিয়ে ৫টি রুটি বানান হযরত ফাতিমা (সা. আ.)। কিন্তু ইফতারির সময় একজন নিঃস্ব বা হতদরিদ্র ব্যক্তি এসে খাবার চাইলে ৫ জনই তাঁদের ৫টি রুটি দিয়ে দেন ওই নিঃস্ব ব্যক্তিকে। তাঁরা শুধু পানি পান করে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত কাটান এবং পরদিনও রোজা রাখেন। 

হযরত ফাতিমা (সা.) পরের দিনের ইফতারের জন্য সেই আটার অন্য এক তৃতীয়াংশ দিয়ে আরো ৫টি রুটি বানান। এই দিন ইফতারের সময় আসে এক ইয়াতিম। সবাই তাঁদের রুটিগুলো ওই ইয়াতিমকে দিয়ে দেন এবং কেবল পানি পান করে রাত কাটান। 

তৃতীয় দিনেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা। এবার এসেছিল মুক্তিপ্রাপ্ত অমুসলিম এক বন্দী। তাকে রুটিগুলো দিয়ে দেয়ায় ঘরের সব আটা শেষ হয়ে যায়। ফলে তারা তিন দিন ইফতার ও সাহরির সময় কেবলই পানি পান করেছেন। কোনো প্রতিদান ও এমনকি সামান্য মৌখিক কৃতজ্ঞতারও আশা না করে নিজের  জরুরি খাদ্যও এভাবে দান করার নজির ইতিহাসে বিরল।    

এ অবস্থায় রাসূল (সা.) এসে দেখেন যে সদ্য রোগমুক্ত তাঁর প্রিয় দুই নাতি হযরত হাসান ও হুসাইন (আ.) (ক্ষুধার কষ্টে কাতর হয়ে) কাঁপছেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বললেন, তোমার অবস্থায় আমি খুবই দুঃখিত। তিনি ফাতিমা (সা.)’র কাছে গিয়ে দেখলেন দুর্বল হয়ে পড়া ফাতিমা (সা.)’র চোখ দুটি গর্তে নেমে গেছে। ফাতিমা (সা.)-কে কাছে টেনে নিয়ে তিনি বললেন: আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি! তোমরা তিন দিন ক্ষুধার্ত!

এ সময় আবির্ভূত হন হযরত জিবরাইল (আ.)। তিনি সুরা দাহরের প্রথম থেকে ২২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়ে শোনান রাসূল (সা.)-কে। ইমাম ফাখরে রাজি, আবুল ফারাজ জাওজি ও জালাল উদ্দিন সিয়ুতিসহ বেশ কয়েকজন বিখ্যাত সুন্নি মনীষী এই শা’নে নাজুলকে সমর্থন করেছেন।

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে বিশ্বনবী (সা.) এই ঘটনার পর শিশু ইমাম হুসাইন (আ.)'র ইচ্ছার আলোকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে তাঁদের জন্য বেহেশত থেকে খুরমা বা খেজুর পাঠানো হয়। বিশ্বনবী (সা.) নিজের পবিত্র হাতে ইমাম হুসাইন (আ.), হাসান (আ.), ফাতিমা (সা.) ও আলী (আ.)'র মুখে বেহেশতি খেজুর তুলে দেন। এ সময় ফেরেশতারা অভিনন্দনসূচক বাক্য উচ্চারণ করলে রাসূল (সা.)ও তা পুনরাবৃত্তি করেন। সুরা দাহরে এসেছে:

৫। নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা বা পুণ্যাত্মারা পান করবে এমন পানীয় যাতে বেহেশতি কাফুর মিশ্রিত থাকবে, ৬। এটা এমন একটি ঝর্ণা বা প্রস্রবণ যেখান থেকে আল্লাহ্‌র ভক্ত বান্দাগণ পান করবে, এবং তা প্রবাহিত করতে পারবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ৭। তারা মান্নত বা প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট ছড়িয়ে পড়বে ব্যাপক ভাবে।৮। তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।৯। তারা বলে: কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। ....

আজকের এই দিনটিতে বিশ্বনবী (সা.)’র এই আদর্শ পরিবারের সম্মানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে পালিত হয় আদর্শ পরিবার ও অবসরপ্রাপ্তদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিবস। #

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/২৭