ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭ ১৭:১৬ Asia/Dhaka

কসোভো ও সার্বিয়ার মধ্যে কয়েক সপ্তাহের টানাপড়েনের পর কসোভোর সংখ্যালঘু সার্ব জনগোষ্ঠী মিতরোভিতসা শহরের মাঝখানে নিজেদের নির্মিত প্রাচীর ভেঙে ফেলেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল কসোভোর সার্বরা।

সার্বরা দাবি করেছিল, ভূমিধসের হাত থেকে মিতরোভিতসা শহরকে রক্ষা করার লক্ষ্যে প্রাচীর নির্মাণ করছে তারা কিন্তু প্রিস্টিটা সরকার অভিযোগ করে, কসোভোকে জাতিগত দিক দিয়ে আরো বেশি বিভক্ত করার লক্ষ্যে এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। কসোভোর প্রধানমন্ত্রী ঈসা মোস্তফা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, সার্বরা প্রাচীরটি ভেঙে না ফেললে তার সরকার এটি গুঁড়িয়ে দেবে।

মিতরোভিতসা শহরের এই প্রাচীর নির্মাণ ও তা ভেঙে ফেলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ কসোভো ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত সার্বিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে বহুকাল ধরে টানাড়েন থাকলেও ২০০৮ সালে কসোভো একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়ার কারণে প্রিস্টিনার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করতে পারেনি বেলগ্রেড। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইইউ এ পর্যন্ত ২৩ বার সার্বিয়া ও কসোভোকে আলোচনার টেবিলে বসিয়েছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বেলগ্রেড এখন পর্যন্ত কসোভোর স্বাধীনতা মেনে না নেয়ায় শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে মাঝেমধ্যেই নানা কারণে টানাপড়েন দেখা দেয়।

প্রাচীর নির্মাণ নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা যদিও কসোভোর অভ্যন্তরীণ বিষয় কিন্তু তারপরও দেশটির সংখ্যালঘু সার্ব জনগোষ্ঠীকে উস্কানি দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে সার্বিয়া। কিন্তু তারপরও আপাতত এবারের উত্তেজনায় প্রিস্টিনারই জয় হয়েছে। কারণ, সার্বিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও কসোভো সরকারের হুমকির মুখে সার্বরা নিজেদের তৈরি প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।

১৯৯০-এর দশকের বলকান যুদ্ধের মাধ্যমে সাবেক ইউগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর কসোভো ছিল সার্বিয়ারই একটি প্রদেশ। বর্তমানে কসোভোর ১৮ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই আলবেনীয় বংশোদ্ভূত মুসলমান। ২০০৮ সালে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার পর জার্মানি, আমেরিকা ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের ১০৮টি দেশের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে কসোভো। এ ছাড়া, বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও সদস্যপদ পেয়েছে দেশটি। কিন্তু সার্বিয়ার পাশাপাশি রাশিয়া, গ্রিস, চীন ও স্পেনের মতো দেশগুলো এখনো স্বাধীন দেশ হিসেবে কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়নি। হেগের আন্তর্জাতিক আদালত ২০১০ সালে কসোভোর স্বাধীনতাকে বৈধ হিসেবে রায় দিয়ে জানায়, বেলগ্রেড সরকারের অনুমতি ছাড়াই স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশে কসোভোর বাধা নেই।

এদিকে বেলগ্রেড কসোভোর স্বাধীনতা মেনে না নিলেও দেশটির সঙ্গে ইইউ’র মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। এ আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হলেও দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ১৫ ধারাবিশিষ্ট একটি সমঝোতায় সই করেছে। কিন্তু কসোভোর উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত সার্ব জনগোষ্ঠীর ভাগ্য নির্ধারণ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েই গেছে।#

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/৬

ট্যাগ