সৌদি বাদশাহ ফয়সাল নিহত হয়েছিলেন সিআইএ'র ষড়যন্ত্রে
(last modified Sat, 25 Mar 2017 19:03:33 GMT )
মার্চ ২৬, ২০১৭ ০১:০৩ Asia/Dhaka
  • সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ (ফাইল ফটো)
    সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ (ফাইল ফটো)

৪২ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ সৌদি রাজবংশের সবচেয়ে কম নিন্দিত এবং কিছুটা উদার ও বিচক্ষণ রাজা হিসেবে পরিচিত বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ নিহত হন তারই ভাতিজার হাতে।

ফয়সাল ইবনে মুসায়িদ খুব কাছ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ১১ বছর ধরে ক্ষমতায়-থাকা তার চাচা বাদশাহ ফয়সালকে। মুসায়িদ মার্কিন প্রভুদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৯।

১৯৭৩ সালে ফিলিস্তিন দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের যুদ্ধ চলার সময় বাদশাহ ফয়সাল বর্ণবাদী এই অবৈধ রাষ্ট্রের সমর্থক পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে তেল-অবরোধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফলে অচল হয়ে পড়েছিল পশ্চিমাদের অর্থনীতি।  

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ফয়সাল হত্যায় জড়িত ছিল। সৌদি এ বাদশাহ তার বাবার বিপরীতে উদার অবস্থান নিয়েছিলেন মুসলমানদের বিষয়ে। তিনি  তার বাবা আবদুল আজিজ সৌদের অপরাধী চরিত্র সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। আজিজ ব্রিটেনের সহায়তা নিয়ে তুর্কি খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নামে এবং ওয়াহাবি জঙ্গিদের সহায়তা নিয়ে আরব উপদ্বীপের বহু অঞ্চল দখল করে এর নাম দেয় সৌদি আরব। ভবিষ্যতে ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র গঠনে তার কোনো আপত্তি থাকবে না বলে ব্রিটিশরা আবদুল আজিজ সৌদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার-পত্র আদায় করেছিল।  এক সময় ব্রিটিশদের অনুচর হিসেবে মাসোহারাপ্রাপ্ত আবদুল আজিজ সব-সময়ই ব্রিটেনের অনুগত থাকবেন বলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন: ‘ব্রিটেন ইহুদিদের ‘ফিলিস্তিন’ দান করলে আমার আপত্তি নেই: ইবনে সৌদ’ শীর্ষক ফিচার।

বাদশাহ ফয়সাল এই উপদ্বীপের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেন যার তেল-সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ অধিবাসীই হলেন শিয়া মুসলমান। দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমের আসির, নাজরান ও জিজান প্রদেশের বেশিরভাগ জনগণ ইসমাইলি শিয়া মুসলমান। (এই তিনটি প্রদেশই ইয়েমেন থেকে কেড়ে নেয় সৌদি আরব যদিও এই প্রদেশগুলোকে কয়েক দশক আগেই ইয়েমেনের কাছে ফেরত  দেয়ার কথা ছিল সৌদি-ইয়েমেন চুক্তি অনুযায়ী।  কিন্তু রিয়াদ আজও এইসব প্রদেশ ফেরত দেয়নি।) তুর্কি শাসনামলে আরব উপদ্বীপের হিজাজ অঞ্চল ছিল হাশেমীয় রাজবংশের অধীনে। এই হিজাজের রাজধানী ছিল পবিত্র মক্কা শহর। 

ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ ও সৌদি বাদশাহ ফয়সাল 

বাদশাহ ফয়সাল তার সরকারে  অ-ওয়াহাবি এবং মক্কা ও জেদ্দার সুন্নি হিজাজিদেরকেও স্থান দেন। তিনি হজের মওসুমে প্রখ্যাত শিয়া গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মুহসিন আল হাকিমকে  পবিত্র কাবাঘর-সংলগ্ন মসজিদুল হারামে সম্মিলিত ইবাদত-অনুষ্ঠানের ও জামায়াতে নামাজ পড়তে দেয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।

ফলে সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন সংখ্যালঘু ওয়াহাবি সম্প্রদায় বাদশাহ ফয়সালকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। ফয়সাল নিহত হওয়ার পর সৌদি আরবের সব ক্ষেত্রে আবারও ওয়াহাবিদের কর্তৃত্ব জোরদার হয়। সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রবাদ, আঞ্চলিকতা ও লিঙ্গ-ভিত্তিক নানা বৈষম্যই প্রাধান্য পেতে থাকে যা আজও বজায় রয়েছে।  #

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/২৫