বিচ্ছিন্নতা প্রশ্নে এবার কুর্দিস্তানে গণভোটের বিরোধিতা করল জাতিসংঘ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে ইরাকের স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান এলাকাকে সেদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রশ্নে প্রস্তাবিত গণভোটের বিরোধিতা করেছে।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইরাকের সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং প্রতিবেশী দেশগুলো কুর্দিস্তানে গণভোটের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ইরাক থেকে কুর্দিস্তান এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রশ্নে পরিকল্পিত গণভোট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এতো বেশি বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইরাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। এ ব্যাপারে ইরাকের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আদেল আজ জাবুরির উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক আল আহাদ বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কুর্দিস্তানে অনুষ্ঠেয় গণভোট অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে গণভোট হয় স্থগিত করতে হবে নয়তো পিছিয়ে দিতে হবে।
ইরাকের একটি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. ওয়াসেক আল হাশেমিও বলেছেন, কুর্দিস্তানের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারাজানি ওই এলাকাকে ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য গণভোটের যে চেষ্টা চালাচ্ছেন তা কার্যত ব্যর্থ হতে চলেছে। এ অবস্থায় তাকে হয় গণভোট পিছিয়ে দিতে হবে অথবা সব সময়ের জন্য এ গণভোটের চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাসুদ বারাজানি কুর্দিস্তানকে ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে ষড়যন্ত্র করছেন তা শুধু যে দেশটির সংবিধান বিরোধী তাই নয় এমনকি খোদ কুর্দিস্তানের জনগণও এর আগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে ইরাকের অখণ্ডতা বজায় রাখার পক্ষে রায় দিয়েছিল। ১৯১৭ এবং ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে কুর্দি এলাকার জনগণ ইরাকের সঙ্গে থেকে যাওয়ার এবং দেশটির সংবিধান মেনে চলার পক্ষে রায় দিয়েছিল। ফলে কুর্দিস্তান ইরাক ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে টিকে থাকে এবং বর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বায়ত্বশাসিত এলাকা এটি।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ইরাক থেকে কুর্দিস্তানকে আলাদা করার উদ্যোগ একতরফা হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক অধিকার ও নীতিমালার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এ ধরণের গণভোটের কোনো যৌক্তিকতা কিংবা ব্যাখ্যা থাকতে পারে না।
বর্তমান বিশ্বের দেশগুলোর একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিটি দেশেই একাধিক জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের অনুসারীদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার কাঠামো ও জাতীয়তার ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে মাত্র ১৪টি দেশে একাধিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে না। অর্থাৎ ওইসব দেশে একটি মাত্র জাতির বসবাস। আর যদি সংখ্যালঘু ভিন্ন জাতির মানুষ থাকেও তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ অবস্থায় ইরাকের কুর্দিস্তানের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারাজানি গণভোটের যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
যাইহোক, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কুর্দিস্তানে গণভোটের বিরোধিতা করলেও মাসুদ বারাজানি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বোঝা যায় তিনি ইরাককে কঠিন সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে চাইছেন। জাতিসংঘও সেখানে গণভোটের ধ্বংসাত্মক পরিণতির ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।#
পার্সটুডে/মো. রেজওয়ান হোসেন/২২