চিন্তিত সৌদি আরব: আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে আরব বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া
(last modified Wed, 18 Aug 2021 10:57:53 GMT )
আগস্ট ১৮, ২০২১ ১৬:৫৭ Asia/Dhaka

আফগানিস্তানের তালেবানরা ক্ষমতা দখল করার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির ব্যাপারে আরব দেশগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, ব্যক্তিত্ব ও সরকারগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তালেবানরা গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করার একই সময়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ গণি কাবুল ত্যাগ করেন। এরপরই আফগান সরকারের পতন ঘটে এবং কাবুলে প্রবেশ করার পর তালেবানরা যুদ্ধ অবসানের ঘোষণা দেয়।

আফগানিস্তানে ফের তালেবান গোষ্ঠীর উত্থানের ব্যাপারে আরব দেশগুলোর বিভিন্ন মহল থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসছে। বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়ায় তালেবানদের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আরোহণের বিষয়টিকে মেনে নেয়ার কথা জানালেও অনেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে এবং তারা চিন্তিত। তালেবান ইস্যুতে আরব বিশ্বে তিন ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তালেবান সরকারের সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখবে সে বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান না জানালেও তারা আফগান জনগণের প্রতি সমর্থনের দাবি করেছে এবং ওই দেশটিতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজের মন্ত্রী পরিষদ জানিয়েছে, তার দেশ আফগান জনগণের পাশে থাকবে এবং আমরা আশা করি খুব দ্রুত যুদ্ধ বিধ্বস্ত ওই দেশটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার জানিয়েছে, আফগান পরিস্থিতির ওপর তারা গভীর নজর রাখছে যত দ্রুত সম্ভব দেশটিতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশা করি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রিয়াদ ও আবু ধাবির সতর্ক প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখা নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত ও চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে। কেননা এটা প্রমাণিত হয়েছে প্রয়োজনে মিত্রদের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটুও সময় লাগবে না। এর আগে ২০১১ সালে ওয়াশিংটনের মিত্র মিশরের হোসনি মোবারক কিংবা তিউনিশিয়ার যেইনাল আবেদিন বিন আলীর মতো শাসকদের প্রতি মার্কিন সমর্থন না থাকার ঘটনায় খুব অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল সৌদি সরকার। তাই আশরাফ গনি সরকারের পরিণতিতে সৌদি আরবও চিন্তিত।

তালেবান ইস্যুতে আরব বিশ্বের দ্বিতীয় মত হচ্ছে, কাতারের মতো দেশের অবস্থান। অনেক বছর ধরে কাতারে তালেবানদের দফতর রয়েছে এবং দোহায় তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে  বহুবার শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কয়েকটি আরব দেশের মতো কাতারেরও তালেবানের ওপর প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে তারা ওই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতি বা শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। এ কারণে কাতারের  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তানের বেসামরিক মানুষদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দোহার বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তানে এমন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হোক যাতে রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্র তৈরি হয় এবং সরকারে সব পক্ষের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, কাতারের অবস্থান থেকে বোঝা যায় তারা আফগানিস্তানের ঘটনাবলীতে বেশি করে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে এবং কার্যত তালেবান শাসনকে তারা মেনে নিয়েছে। 

তালেবান ইস্যুতে আরব বিশ্বের তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায় ইয়েমেন ও এ অঞ্চলের অন্যান্য ইসলামি প্রতিরোধ শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকে। ইয়েমেনিরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত মিত্র আশরাফ গণি সরকারের পতনের ঘটনা থেকে সবাইকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিনীদের বিতাড়িত করায় ইরান সমর্থক আরব কোনো কোনো ইসলামি প্রতিরোধ সংগঠনও তালেবানদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছে তালেবানদের প্রতিরোধের কারণেই শেষ পর্যন্ত দখলদার বিদেশী সেনারা চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

মোটকথা, আরব বিশ্বের প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর দৃষ্টিতে আফগানিস্তানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দখলদার ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তির উত্থান ইতিবাচক এবং এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। তারা পাশ্চাত্য-ঘেঁষা পক্ষগুলোকে এ থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।#   

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৮

ট্যাগ