জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত
পরমাণু আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি: পাওনাদারের সুরে কথা বলছেন ব্লিংকেন
-
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক আলোচনায় ওয়াশিংটনের ফিরে আসার সম্ভাবনাকে খুবই ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন। এমন সময় তিনি এ কথা বললেন যখন সবারই এটা জানা আছে যে মার্কিন সরকার একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার কারণেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
তিনি জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক আলোচনা থেকে সরে আসার চিন্তাভাবনা করছে ওয়াশিংটন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ঠিক কবে নাগাদ আমরা আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াবো সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ আমরা জানাবো না কিন্তু এমন একটি সময়ের কাছাকাছি আমরা পৌঁছে গেছি যেখানে আলোচনায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে। এ সাক্ষাতে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় ইরান ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকটা পাওনাদারের সুরে কথা বলছেন। তিনি বাস্তবতার ঠিক বিপরীত অবস্থানে গিয়ে বর্তমানে পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় অচলাবস্থার দায় ইরানের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। তিনি ওয়াশিংটনের বেআইনি ও ভুল কর্মকাণ্ডের বিষয়টি উপেক্ষা করে উল্টো ইরানকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জো বাইডেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময়ে বলেছিলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে এসে অনেক বড় ভুল করেছেন যা কিনা মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী এবং এতে করে যুক্তরাষ্ট্র আরো বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়বে। কিন্তু দেখা গেল ক্ষমতায় আসার পর প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্পের নীতিই অনুসরণ করে চলেছেন এবং কারা বেআইনিভাবে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সংকট তৈরি করেছে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ না করে পরমাণু সমঝোতায় ওয়াশিংটনের ফিরে আসার জন্য উল্টো তেহরানকে নানান শর্ত দিয়েছেন।
বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইরান যদি পরমাণু সমঝোতায় পুরোপুরি ফিরে আসে তাহলে ওয়াশিংটনও পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসবে। তবে এতে ফিরে এসে বাইডেন ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন কিনা সে প্রতিশ্রুতি বাইডেন দিচ্ছেন না। আর এখানেই ইরানের মূল আপত্তি। মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোসেফ স্রাইন সিওন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখনো ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন অথচ বাস্তবতা হচ্ছে তিনি যতক্ষণ না নিজের অবস্থান থেকে সরে না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিপরীতে ইসলামি ইরান জানিয়েছে তারা কেবল তখনই পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করবে যদি মার্কিন সরকার মুখে বা কাগজে কলমে নয় বরং বাস্তবে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হলো কিনা তা যাচাই বাছাই করেই ইরান এতে ফিরবে। এ ব্যাপারে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, আমরা পরমাণু সমঝোতায় ফিরে যেতে আগ্রহী কিন্তু এ ব্যাপারে মার্কিন চাপ ও তাদের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন অবশ্যই ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
যাইহোক, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরমাণু বিষয়ক আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ানোর যে হুমকি দিয়েছেন তাতে ইরানের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৯