নভেম্বর ১৫, ২০২১ ২২:২৮ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা পাশ্চাত্যে শয়তান পূজার প্রবণতা এবং এর উৎপত্তি ও প্রভাব নিয়ে খানিকটা আলোচনার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শয়তানের পূজা করার কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। শয়তান পূজারীদের তৎপরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে,কয়েক বছর আগে তারা মার্কিন শিক্ষা দপ্তরের কাছে বড় ধরণের এক আবেদন পেশ করেছে। এই আবেদনে বলা হয়েছে,প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শয়তান পূজা সংক্রান্ত শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সম্প্রতি আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ইউটার ৩৫ বছর বয়সী শয়তান পূজারী এক শিক্ষকের কর্মকাণ্ড দেশটির অভিভাবকদেরকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলেছে।

ব্রায়ান আলতিস নামের ঐ শিক্ষক সাড়ে তিনশ'শিক্ষার্থীকে প্রতারিত করে শয়তান পূজার দিকে নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক ছাত্র পুলিশকে বলেছে, ঐ শিক্ষকের মাধ্যমে সে শয়তান পূজারীদের গ্রুপে যোগ দিয়েছিল এবং বাধ্য হয়ে এমন অনেক কাজ করেছে যা ভাবা যায় না। ঐ কিশোর জানিয়েছে,শয়তান পূজারিরা তাকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছিদ্র তৈরি করতে বাধ্য করেছে, অসংখ্য ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়তে প্ররোচিত করেছে এমনকি সে শয়তান পূজারীদের প্ররোচনায় মানুষের মল খেয়েছে। 

শয়তান পূজারীরা নিজেদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য বিভিন্ন ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে থাকে। শয়তান পূজারীরা যেসব চিহ্ন ব্যবহার করে থাকে তার মধ্যে রয়েছে ছাগলের বেশধারী শিং-ওয়ালা ব্যক্তির ছবি যা বাফোমেট নামে পরিচিত। এছাড়া পাঁচ কোণ বিশিষ্ট তারা,ভগ্ন ক্রস,শয়তানের কাল্পনিক চোখ,ট্রিপল সিক্স এবং শিংওয়ালা হিংস্র পশুদের মাস্কও শয়তান পূজারীদের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসসহ বিভিন্ন উপকরণে এসব চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া জনসমাগমস্থলে এসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়  যাতে শয়তান পূজার প্রতি অন্যদেরও আগ্রহ তৈরি হয়। শয়তান পূজারীদের রয়েছে বিশেষ পোশাক-আশাক,জুতা,আংটি,চুরি,ঘড়ি এবং গাড়িতে সাজিয়ে রাখার মতো পুতুলসহ বিভিন্ন পণ্য। মানুষ জেনে অথবা না জেনে এসব পণ্য ব্যবহার করছে। শয়তান পূজারীরা প্রথমে মানুষের মধ্যে এসব সাংকেতিক চিহ্নের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির চেষ্টা করে। কারণ এর ফলে তাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার অনেক সহজ হয়ে ওঠে।

এখন পাশ্চাত্যে এমন তরুণদের অহরহই দেখা যায় যাদের পোশাক-আশাকসহ বাহ্যিক অবস্থাও অস্বাভাবিক। তারা সমাজ-সংস্কৃতিকে পরোয়া করে না। এমনভাবে পোশাক পরে যাতে তাদেরকে দেখলেই মনের ভেতর এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়। তাদের কনসার্টগুলোতে উচ্চ শব্দে মিউজিক বাজানো হয়। পারফর্মাররা অদ্ভুত ধরণের সাজসজ্জার মাধ্যমে বিকট ও ভয়ানক শব্দে গান গাইতে থাকে। এক পর্যায়ে জানিয়ে দেয়,তারা শয়তান পূজারী। শয়তান পূজারীরা তাদের চিন্তা-বিশ্বাস প্রচারের জন্য এখনও মিউজিককেই বড় ধরণের অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে। শয়তানবাদের মিউজিকের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো কোনো মিউজিককে বিকৃত করার পাশাপাশি মিউজিকের যন্ত্রপাতিতেও পরিবর্তন আনতে দেখা যায়। এছাড়া মিউজিকের তালে তালে বীভৎস নানা দৃশ্য প্রদর্শনের প্রবণতা রয়েছে শয়তান পূজারীদের মধ্যে। কখনো কখনো মিউজিকের তালে তালে পারফর্মারকে বিড়ালের চার পা ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায়। এমনও দেখা যায় গায়ক গান গাইতে গাইতে জ্যান্ত বাদুড়ের মাথা কামড় দিয়ে ছিঁড়ে ফেলছে। এছাড়া মঞ্চেই সঙ্গীতের যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস ধ্বংস করা এবং নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

গবেষকরা ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে,রক ও মেটালের মতো সঙ্গীতের কনসার্টগুলোতে যারা অংশ নেয় অথবা যারা নিয়মিত এসব মিউজিক শোনে তাদের মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক সেবন ও আত্মহত্যার প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। প্রতিটি কনসার্টের পর গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দেখা যায়,এর মধ্যে আত্মহত্যাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পিঙ্ক ফ্লয়েড গ্রুপের কনসার্টকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায়। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে,রক মিউজিক শোনার পর আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। পাশ্চাত্যে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী রক মিউজিকের নিয়মিত শ্রোতাদের মধ্যে প্রতি সাত তরুণের একজন আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথে এগোয়। এরপরও পাশ্চাত্যে তরুণদের মধ্যে শয়তান পূজারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শূন্যতা পূরণ করার কোনো পথ পাশ্চাত্যের যুব শ্রেণীর সামনে নেই। আসলে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে সামাজিক জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। প্রযুক্তির দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মিক প্রশান্তির পথগুলো ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে শূন্যতা।

এই শূন্যতাই তরুণদেরকে অযৌক্তিক ও অমানবিক পথে যেতে প্ররোচিত করছে। এই সুযোগে শয়তান পূজারীরা সব সময় এমন ভাব দেখায় যে,তাদের কাছে এ ধরণের সমস্যার সমাধান রয়েছে এবং তাদের পথে গেলে ব্যক্তি শক্তিধর ও ক্ষমতাবান হয়ে ঠবে। এ কারণে শয়তান পূজারীদের নেতারা সব সময় নানা সামাজিক সমস্যার কথা তুলে ধরে। তারা তরুণদের ব্যর্থতা ও বঞ্চনার কথা বারবার সামনে নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে তারা শয়তান পূজাকে সমাধান হিসেবে তুলে ধরে। তাদের একটি বড় দাবি হলো,শয়তান পূজার মাধ্যমে ব্যক্তি ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। শয়তান পূজারীরা আরও বলছে,তাদের কাছে রয়েছে সীমাহীন শক্তির উৎস। কিন্তু পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন,শয়তানের ক্ষমতা অতি সামান্য। শয়তান কেবল খারাপ পথে প্ররোচিত করতে পারে। শয়তানের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে মানুষ নিজেই সেই অন্যায় ও খারাপ কাজ সম্পাদন করে। শয়তান কেবল প্রতিশ্রুতি দেয়,মানুষের অন্তরে অপকর্মের প্ররোচনা দিয়ে মানুষের মাধ্যমেই খারাপ তৎপরতা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।  

সূরা বনি ইসরাইলের ৬৪ ও ৬৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, মিথ্যাচার ও ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না। আমার বান্দাদের উপর তোর কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তাদের পালনকর্তা রক্ষাকারী।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ