নভেম্বর ৩০, ২০২১ ১৭:৩৭ Asia/Dhaka

দয়াময় আল্লাহর আসমাউল হুসনার অন্তর্ভূক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হ'ল হক্ব বা হাক্ব।

এর অর্থ মহান আল্লাহ অপরিবর্তনীয়, পবিত্র ও সব ধরনের ত্রুটি থেকে মুক্ত। এর আভিধানিক অর্থ সত্য, ন্যায় ও সঠিক। সাদৃশ্যপূর্ণ বা মিলযুক্ত ও সমন্বিত অর্থেও এই শব্দের ব্যবহার রয়েছে। মহান আল্লাহকে হক্ব বলা হয় এ কারণে যে তিনি হলেন সবচেয়ে বড় বাস্তবতা ও অনস্বীকার্য এবং অপরিহার্য বাস্তবতা।  পবিত্র কুরআনে বার বার হক্ব শব্দটি এসেছে। এর মধ্যে চার বার আল্লাহ অর্থে এর ব্যবহার দেখা যায়। সুরা লোকমানের ২৯ ও ৩০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন

হে নবী  তুমি কি দেখনা ও  হে মানুষেরা! তোমরা কি দেখছ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট নিয়মে পরিভ্রমণ করে। তোমরা কি জানো না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?-

এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ-ই  পরিপূর্ণ তথা নিরেট সত্য বা হাক্ব এবং আল্লাহ ছাড়া তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহই সত্য ও প্রকৃত অস্তিত্ব হিসেবে সর্বোচ্চ, মহান।

যিনি সত্য বা হক্ব তিনি সবকিছু সঠিকভাবে করেন এবং প্রজ্ঞার আলোকে সব কিছুকে তার যথাযোগ্য স্থানে রাখেন। তাই আল্লাহর সব কাজই সঠিক বা সত্য। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ সুরা হিজর-এর ৮৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন: মহান আল্লাহ আকাশমণ্ডল ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা সত্য বা সঠিকভাবে ছাড়া সৃষ্টি করেননি। অন্য কথায় আল্লাহ উদ্দেশ্যহীন বা অর্থহীনভাবে কোনো কিছু করেন না। -

পবিত্র কুরআন সম্পর্কেও সুরা মায়েদার ৪৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গ্রন্থ সত্যসহকারে, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। - তাই এটা স্পষ্ট সত্যের বিপরীতে অবস্থান নেয়া সব ব্যক্তির মতামতই মূল্যহীন। কাঁচকে যদি সবাই হীরা বলে তার মূল্য কাঁচের সমানই থাকবে, আর হীরাকে সবাই যদি কাঁচ বলে তাতেও এর আসল মূল্য কমবে না।

মহান আল্লাহর দাসত্ব বা ইবাদাত করতে হলে আল্লাহর মোকাবেলায় হতে হবে সদা-বিনম্র ও আত্মসমর্পিত। এক্ষেত্রে গোড়ামি দেখানো মানে আল্লাহ থেকে দূরে থাকা ও সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া। যারা নিজ ইচ্ছা বা কামনা-বাসনার দাসত্ব করে তারা সত্য ও বাস্তবতাকে এবং মহান আল্লাহকে তাদের স্বার্থের প্রতিকূলে দেখতে পায়। ফলে তারা এর সঙ্গে দ্বন্দ্বে নামে ও সত্য থেকে দূরে পালিয়ে যায়। সুরা মু'মিনুনের ৭১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: যদি সত্য তাদের কাছে কামনা-বাসনার অনুসারী হত, তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যেত। -এরই আলোকে বলা হয় সব কিছুই হয় সত্য অথবা মিথ্যা। এর মাঝামাঝি কিছু নেই। সুরা ইউনুসের ৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: অতএব, এ আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা। আর সত্য প্রকাশের পরে উদভ্রান্ত ঘুরার মাঝে কি রয়েছে গোমরাহী ছাড়া? সুতরাং কেন সত্যকে বাদ দিয়ে বিপথে ঘুরছ? -

কোনো কিছুই একই সময়ে সত্য ও মিথ্যা হতে পারে না। যদিও কখনও কখনও মিথ্যা নিজেকে সত্যের বেশ নিয়ে হাজির করে। সুরা রাআদ-এর ১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী অর্থাৎ এরফলে  প্রত্যেক নদ-নদীই ধারণ-ক্ষমতা অনুযায়ী পানি গ্রহণ করে ও পানি বিপদসীমার নিচে থাকে। অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে এবং অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্রের জন্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকে। এমনি ভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা বা মিথ্যা তো খুব দ্রুত শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।

সত্যের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা নিজেই নিজেকে স্পষ্ট বা প্রকাশ করে ও জানিয়ে দেয় এবং এ জন্য অন্যদের প্রচারের দরকার হয় না। অন্য কথায় সত্য বা বাস্তবতা নিজেই এক মাণদণ্ড। আর অন্য সব কিছুর পরিচয় এরই আলোকে ফুটে উঠে। অনেক সময় মানুষ সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিকেও মিথ্যার পক্ষে দেখতে পেয়ে সত্যের অনুসারী কারা তা নিয়ে সন্দেহের শিকার হয়। তাই খোদ সত্যকে ও মিথ্যাকে ভালোভাবে চেনা ছাড়া সত্য বোঝার উপায় নেই। কারণ অনেক বড় মাপের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বও এক সময় বিভ্রান্ত হতে পারেন। আর এ কারণেই মহানবী (সা) বলেছেন, কুরআন ও আমার আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরলে কখনও বিভ্রান্ত হবে না। তারা ও কুরআন কখনও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। 

শয়তানি শক্তিগুলো সত্য ও মিথ্যাকে মিশিয়ে ফেলে বলে সত্যকে চেনা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন, বর্তমান যুগেও আধিপত্যকামী পশ্চিমা শক্তিগুলো গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ তাগুতি ও খোদাদ্রোহী শক্তিগুলোর পক্ষে প্রচারণা চালায় তাদের এবং পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বার্থ ও খোদাদ্রোহী নীতির কারণে। এরা এমনভাবে কথা বলে যেন তারাই সত্যের পক্ষে রয়েছে।

আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন: ফেতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হবার ভিত্তি হলো সেসব কামনা-বাসনা যা অনুসরণ করা হয় এবং সেসব আদেশ যা কুপ্রথা বা বেদাআত। এ দুটোই আল্লাহর কিতাবের বিপরীত। অথচ মানুষ একে অপরকে এ দু’টোতে সহযোগিতা করে। অন্যায় যদি নিরেট অন্যায় এবং অমিশ্রিত থাকে তবুও যারা এর অন্বেষণকারী তাদের কাছে গোপন থাকে না অর্থাৎ তারা তা আকড়ে ধরে। আর ন্যায় যদি অন্যায়ের অপমিশ্রণ থেকে খাঁটিও থাকে তবুও ন্যায়ের প্রতি যাদের অবজ্ঞা রয়েছে তারা নিশ্চুপ হয়ে থাকে অর্থাৎ ন্যায়কে গ্রহণ করে না। যা করা হয় তা হলো-এটা থেকে কিছু ওটা থেকে কিছু নিয়ে দুটোর সংমিশ্রণ। এ পর্যায়ে শয়তান তার বন্ধুদের শক্তিশালী করে তোলে এবং কেবল তারাই রক্ষা পায় যাদের জন্য পূর্ব থেকেই আল্লাহ মঙ্গল নির্ধারণ করে রেখেছেন। নাহজুল বাগাঘার ৫০ নম্বর খুতবা দ্র.#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।