সুখের নীড়- পর্ব ৪
আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রশান্তি লাভ। সুখী পরিবার গড়তে চাইলে দুঃখের দিনে বা বিপদের দিনে হতে হবে ত্যাগী। কিন্তু যদি কেবল নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি প্রকৃত সুখী পরিবার গড়ার জন্য এখনও প্রস্তুত নন। তাই বিয়ের আগেই এ বিষয়ে প্রস্তুত হতে হবে।
যারা ভালবাসা ও নৈতিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল বৈষয়িক স্বার্থের জন্য বিয়ে করে তাদের বন্ধন সুদৃঢ় হয় না।
একটি গল্পে দেখা যায় একবার এক শিয়াল এক বসা-অবস্থায়-থাকা একটি উটের পাশে বসতে আগ্রহী হয়। সে উটের পাশে বসে উটের লেজের সঙ্গে নিজের লেজ বেঁধে দিল। উট যখন উঠে দাঁড়াল তখন শিয়াল ঝুলে থাকল। তাকে বলা হল: তোমার এ অবস্থা কেন? সে তখন বলল বড়দের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আমার এমন অবস্থা হল। যারা কন্যার পরিবারের সম্মান ও সম্পদের মোহে তাকে বিয়ে করে তাদেরও অবস্থা এই শিয়ালের মতই হবে।
আর্থ-সামাজিক কারণে পরিবারের কাঠামো বদলে গেছে। ইরানও এর ব্যতিক্রম নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যবাহী একান্নবর্তী পরিবারের স্থান করে নিয়েছে অনু-পরিবার, আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক পরিবার । অবশ্য ঐতিহ্যবাহী পরিবারের রেশ দেখা যায় এখনও অনেক বড় পরিবারে। সমাজ-বিজ্ঞানীরা আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক এবং অনু-পরিবারগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ অনু-পরিবার বলে উল্লেখ করছেন। এ ধরনের পরিবার নতুন ধরনের নানা পরিবার জন্ম দিচ্ছে।
ত্রুটিপূর্ণ অনু-পরিবারগুলোর বৈশিষ্ট্য হল এই যে কোনো না কোনো কারণে এ ধরনের পরিবারের অন্যতম প্রধান সদস্যরা যেমন, পুরুষ বা স্বামী কিংবা স্ত্রী বা শিশু না থাকা। এ ধরনের পরিবারগুলোর মধ্যে 'ক্ষুদ্রতম পরিবার' অন্যতম। কারণ এমন পরিবারে যুবক ও যুবতী দাম্পত্য জীবন শুরু করার পরও সন্তান গ্রহণে আগ্রহী নন! বিশ্বের নানা দেশে এ জাতীয় পরিবার রয়েছে। আবার এমন পরিবারও আছে যেখানে বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী একাকী বসবাস করছেন সন্তানরা বিয়ের পর তাদের ছেড়ে দূরে চলে যাওয়ার কারণে! আবার অনেকে বন্ধ্যত্বের কারণে সন্তানহীন পরিবারের অধিকারী। বিচ্ছিন্ন পরিবারও ত্রুটিপূর্ণ অনু-পরিবারগুলোর অন্যতম। এ ধরনের পরিবারে স্বামী বা স্ত্রীর একজন মারা গেছেন অথবা তালাকের কারণে কিংবা প্রবাসী হওয়ার কারণে স্বামী বা স্ত্রী একাকী জীবন যাপন করছেন।
ইরানে পরিবারগুলো পুরোপুরি ক্ষুদ্র বা অনু-পরিবার হয়ে উঠছে। এ ধরনের পরিবারের ওপর ইরানি ও ইসলামী প্রথাগুলোর যেমন প্রভাব রয়েছে তেমনি আধুনিকতার ইতিবাচক দিকগুলোরও প্রভাব রয়েছে। ইরানের নীতি-নৈতিকতা ও সংস্কৃতি উপেক্ষিত হচ্ছে না ইরানি পরিবারগুলোতে। ইরানে পরিবারগুলো এখনও ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী গড়ে উঠছে, তবে কাঠামোগত ক্ষেত্রে পশ্চিমা কাঠামো ভর করেছে এর ওপর।
আধুনিক যুগের মানুষ এখনও পরিবারের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত শিক্ষা-ব্যবস্থা, সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং প্রথা ও ঐতিহ্যগুলোর প্রশিক্ষণ মানুষ পরিবার থেকেই সবচেয়ে বেশি পেয়ে থাকে। তবে শিক্ষা-বিভাগ, সরকার ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থাও এক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। ইরানি পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। পরিবারগুলোর বিস্তার ও টিকে থাকার বিষয়টিই এ থেকে ফুটে উঠছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।