জুলাই ১৪, ২০২২ ২১:১৮ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বজনুর্দ্ শহরটি দেখার মধ্য দিয়ে উত্তর খোরাসান প্রদেশের সৌন্দর্যের সঙ্গে খানিকটা পরিচিত হবার চেষ্টা করেছি। বজনুর্দ্ শহর উত্তর খোরাসান প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং এই শহরটিই কেন্দ্রিয় প্রাদেশিক শহর।

আজকের আসরে আমরা এই শহরের ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনার সঙ্গে পরিচিত হবার মধ্য দিয়ে বজনুর্দ্ শহর সম্পর্কে আরও বেশি পরিচিত হবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। দ্বাদশ শতাব্দির শেষ দিকে এবং ত্রয়োদশ শতকের শুরুর দিকে অর্থাৎ কাজার শাসনামলে ইয়ার মুহাম্মাদ খান শাদলুর আদেশে শহরের কেন্দ্রে সাবজে মেইদুন কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। ইয়ার মুহাম্মাদ খান শাদলু কিন্তু সর্দার মোফাখখাম নামে বেশি পরিচিত। এই কমপ্লেক্সটি সাবজে মেইদুন, সরাইখানা, হাটবাজার, কয়েকটি কফিখানা এবং হাম্মামখানার সমন্বয়ে গঠিত। এই কমপ্লেক্স এক সময় সবচেয়ে জনবহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। কেনাকাটার প্রধান কেন্দ্র তো ছিলই, বেশিরভাগ উৎসব এবং সামাজিক রীতি-আচার চর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিল এই কমপ্লেক্স। এ নিয়ে আরও কথা হবে বিরতির পর।

এই কমপ্লেক্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো সরাইখানা। যার ডিজাইন পরিকল্পনাটি বেশ সুন্দর। মাঝখানে একটি বড় হলরুল বা অভ্যর্থনাগার আর তার চারপাশে চৌত্রিশটি কক্ষ রয়েছে। কারুকাজ করা খিলানসহ সরাইখানার বিভিন্ন অংশ ইটের আদলে সজ্জিত। সরাইখানার উত্তর-পূর্ব অংশে তিন শ পাঁচ বর্গ মিটার আয়তনের হাম্মামখানা ভবনটি অবস্থিত। এটি হিজরি ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের এবং এর স্থাপত্যের কাঠামোটি খোরাসানের ঐতিহ্যবাহী হাম্মামখানার ডিজাইনের মতো। ভবনটিতে ইট দিয়ে তৈরি বিচত্র কারুকাজ রয়েছে। ভবনটির স্থাপত্য শৈলী খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সাবজে মেইদুন কমপ্লেক্সটি ইরানের জাতীয় নিদর্শনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

বাবা আমান বিনোদন পার্ক

হোসেইনিয়া এমন একটি স্থাপনা যা ইরানসহ শিয়া দেশগুলিতেই সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বখশিবাজারের চান খাঁরপুলে যেমন হোসেনী দালান রয়েছে তেমনি প্রতিষ্ঠানকে ইরানে হোসাইনিয়া বলে। এখানেও সেরকম একটি ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে। বলা যায় বহু শহরেই হোসাইনিয়া গড়ে উঠেছে ইরানে। বজনুর্দের জজোরমি হোসাইনিয়া খুবই নামকরা একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই স্থাপনাটি অনন্য স্থাপত্যের কারণে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বোজনৌর্দের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই হোসেইনিয়া কাজার যুগের শেষ দিককার একটি স্থাপনা। পুরোণো শিলালিপিতে পাওয়া তথ্য অনুসারে তের শ পঁচিশ হিজরিতে বিশিষ্ট প্রকৌশলী গোলামরেজা বানা' ইয়াজদি এই হোসাইনিয়াটি নির্মাণ করেছিলেন।

এই হোসাইনিয়াটির আয়তন ছয় শ বর্গমিটার। দ্বিতল বিশিষ্ট এই ভবনের নীচতলা দোতলার তুলনায় প্রাচীন। এই তলাটি ছিল আবাসিক। দ্বিতীয় তলাটিতে সাধারণত ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হতো। হোসাইনিয়া ভবনের মাঝখানে একটি প্রশস্ত উঠোন রয়েছে। উঠোনের চারপাশে সকল কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। কক্ষগুলোর দরোজা জানালা উঠোনমুখি। এর কারণ হলো উঠোনের আলোর ব্যবহার। ভবনের বিভিন্ন অংশে চমৎকার সব কারুকাজ করা হয়েছে। স্থাপত্য বিন্যাসে সুসজ্জিত এই ভবনে রয়েছে ইটের কারুকাজ, প্লাস্টারিং এবং শিলালিপির কাজ। এই ধরণের অন্তর্মুখী স্থাপত্য সাধারণত ইরানের শুষ্ক ও মরুঅঞ্চলের জন্যই উপযোগী। বজনুর্দে খুব একটা প্রচলন নেই এ ধরনের স্থাপত্য ডিজাইনের। তারপরও বলা যেতে পারে যে পানির হাউজ, ঝর্ণা এবং আশপাশের বাগানসহ পুরো বিল্ডিংটির সকল আয়োজন ও কারুকাজ ইরানের চার ঋতুর সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আর মহররমের দিনগুলোতে এখানেই শোকানুষ্ঠানগুলো পালন করা হয়। এই হোসাইনিয়াটিও ইরানের জাতীয় নিদর্শনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই হোসাইনিয়ার বাইরেও এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক বহু নিদর্শন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। রয়েছে বহু সংরক্ষিত এলাকা। বনাঞ্চল, ঔষুধি গুণ সম্পন্ন গরম পানির ঝরনা, বিস্ময়কর বহু গূহা, আকর্ষণীয় অনেক জলপ্রপাত, চোখ ধাঁধানো বহু উপত্যকা এবং ঘুরে বেড়ানোর মতো অনেক গ্রাম। এগুলো বজনুর্দের পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকা। বাবা আমান বজনুদ পর্যটনকেন্দ্রও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি নিদর্শন। এটি মূলত একটি বিশাল পার্ক। সবচেয়ে সুন্দর এবং প্রাচীন পার্ক হিসেবে বাবা আমান পর্যটনকেন্দ্রটি সবার কাছেই পরিচিত।

এই অবকাশ যাপনকেন্দ্রে একটি কবরও রয়েছে। ইমাম মূসা কাজেম (আ) এর সন্তান শাহজাদা ইসমায়িলের এই কবরটি ইমামযাদা বাবা আমান নামেই বিখ্যাত। এই সুন্দর পার্ক এবং অবকাশ যাপন কেন্দ্রে চার লাখের মতো গাছ রয়েছে। যেমন বাবলা, চেনর বা প্লেইন ট্রি, এপ্রিকট, অ্যাশ-ট্রির মতো বিচিত্র আরও বহু প্রজাতির গাছ রয়েছে এই পার্কে। বাবা আমান বিনোদন পার্কের পশ্চিমে রয়েছে পারদিসান বনাঞ্চল। এখানে উত্তর খোরাসানের গাছপালা এবং প্রাণীর বৈচিত্র্য দেখতে পাওয়া যায়। বাবা আমান অবকাশ যাপন কেন্দ্রটি বজনুর্দের দশ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বজনুর্দ-মাশহাদ সড়কের পাশে অবস্থিত।

বন,উদ্যান এবং দর্শনীয় পুলসহ এই প্রমোদ কাননটি ক্লান্তি দূর করার জন্য বেশ উপযোগী। সে কারণে অনেক ভ্রমণকারী এই কাননের প্রতি ভীষণ আকর্ষণ বোধ করে এবং অতীতেও করেছে। বাবা আমানে চমৎকার একটি ঝরনা রয়েছে। এই ঝরনাটি পাথরের বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে। এখানকার পানি সুইমিং পুলগুলিতে প্রবাহিত হয়। বাবা আমানের আবহাওয়া খুবই উপভোগ্য। রাতের বেলা এখানকার মনোরম ও সুন্দর দৃশ্য প্রতিটি পর্যটককেই আকৃষ্ট করে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ