জুলাই ২১, ২০২২ ১৯:১৪ Asia/Dhaka

পারস্পরিক ভালোবাসা পরিবারের ভিত্তি এবং এর স্থিতি, স্থায়িত্ব, সংরক্ষণ ও ক্রমবিকাশেরও মাধ্যম তথা পরিবারের প্রাণ।

পরিবার কেবল রক্তের বন্ধন নয় সম্মান, আনন্দ ও তৃপ্তির সমাহার। আর প্রেম ও ভালোবাসাই এর উৎস। পারস্পরিক ভালোবাসা পরিবারের সবগুলো ভিত্তির মধ্যে আনে ভারসাম্য। তাই এ যেন এক অমূল্য ধন যা ছাড়া নর ও নারীর উভয়েরই জীবন রয়ে যায় অপূর্ণ। নর-নারীর প্রেমময় সহাবস্থান ও পারিবারিক রীতি নীতির সমন্বয়ই হচ্ছে পূর্ণতা অর্জনের প্রধান শর্ত। সুশৃঙ্খল জীবন ও অর্থপূর্ণ জীবন তথা সুখের নীড় গড়ার সোনার জিয়নকাঠি রয়েছে এই প্রেমময় সহাবস্থানের মধ্যেই। পরিবারই হল সমাজের প্রাথমিক ইউনিট। পরিবারই মানুষকে সামাজিক ও সভ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার এবং নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা ও ধৈর্য শেখানোর প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র। মানুষের শারীরিক, আত্মিক ও নৈতিক বিকাশেরও কেন্দ্র হল পরিবার।

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ-বন্ধন কেবল শুস্ক আইনি সম্পর্কের বিষয় নয়, প্রেমময় ও নৈতিক বন্ধনেরও বিষয়। প্রাচীন যুগের বিজ্ঞ পণ্ডিত ও দার্শনিকরা পরিবারের ওপর সরকার ও রাজনীতির হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতেন। মানব-রচিত মনগড়া আদর্শগুলো এবং স্বৈরতান্ত্রিক রাজা বা সরকারগুলো পরিবারের ওপর তাদের স্বৈরতান্ত্রিক নানা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পরিবারগুলোকে বিপর্যস্ত করেছে যুগে যুগে। কিন্তু ঐশী ধর্মগুলো সব সময়ই পরিবার ব্যবস্থাকে সযত্নে লালনের চেষ্টা করেছে। ইবনে সিনাও বলেছেন, বিয়ে করা ছাড়া আত্মিক প্রশান্তি অর্জন সম্ভব নয়। তার মতে সম্পদের সুরক্ষার জন্য মানুষের দরকার স্বামী বা স্ত্রী ও বাড়ি। বাড়ি ও সম্পদের সুরক্ষা কোনো নারী বা নরের একার পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য কথায় পুরুষের সম্পদ রক্ষার জন্য তার সহযোগী ও বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হতে পারে একমাত্র স্ত্রী। সন্তানের প্রশিক্ষণ ও প্রতিপালনের জন্যও স্ত্রী থাকা জরুরি। তাই নিরাপত্তা ও ভালোবাসার নীড় হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম।

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে যথারীতি ইরানিদের বিয়ের প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে কথা বলব। - বউ-ভাত বা বিয়ের মূল উৎসব অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে তার পরের দিন যে উৎসবটি হয় ইরানিদের ভাষায় তা 'পা-তাখতি' দিবস তথা কনের প্রতি সবার উপহার প্রদানের দিবস।  বর ও কনে পক্ষের সব আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা এ দিন পৃথকভাবে নানা সামগ্রী উপহার দিয়ে বর ও কনের সুখ কামনা করেন।  এরপর আরও কয়েক ঘণ্টা ধরে চল ফুর্তি বা আনন্দ-উৎসব। তবে আজকাল বেশিরভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায় বেশিরভাগ মেহমানই বিয়ের রাতেই তাদের উপহারগুলো দিয়ে যান। বিয়ের উৎসব অনুষ্ঠানের শেষের পর্বটি হল কনের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত। এ পর্বকে 'কনের মাকে সালাম' বলে উল্লেখ করেন ইরানিরা। এই অনুষ্ঠানে কনের মা বরের পরিবারকে দাওয়াত করেন। তারাও নিমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে আসেন। এরপর বর নিজে শাশুড়িকে একটি উপহার প্রদান করেন। এভাবে বর সুশিক্ষিত ও সুযোগ্য কন্যা গড়ে তোলার জন্য শাশুড়িকে ধন্যবাদ জানান।

কোনো কোনো সমাজ-বিশেষজ্ঞ মনে করেন ইরানি পরিবারগুলো বাহ্যিক গঠনের দিক থেকে সনাতন হলেও ভেতরের চরিত্রের দিক থেকে আধুনিক। কারণ এখনও ইরানি পরিবারগুলো সামাজিকতাকে গুরুত্ব দেয়। আর বিয়ের নানা পর্বের অনুষ্ঠানই এর প্রমাণ। গত দুই দশকে ইরানিদের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো হয়ে পড়েছে বিচিত্রময় । অন্যদিকে আধুনিক বলা যায় এ কারণে যে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থ চিন্তা মাথায় রেখে ইরানিরা বিয়ে করছেন এবং এরই আলোকে তাদের সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। সার্বিকভাবে বলা যায় যে ইরানিরা পরিবার ব্যবস্থা ও পারস্পরিক সম্পর্কের নানা দিক রক্ষা করাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। 

পরিবারগুলোতে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ককে আনন্দময় করে তুলতে মাঝে মধ্যে সফর ও চিত্ত-বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা জরুরি।  চিত্ত-বিনোদনের জন্য মাঝে মধ্যে ঘরের ডেকোরেশন বা আসবাবপত্রের বিন্যাসে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। মাঝে মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানের নানা স্মৃতিগুলোকে আবারও তাজা করে তুলতে পুরনো ছবি বা বিয়ের ভিডিও চিত্রগুলো একসঙ্গে বসে দেখাও পারস্পরিক সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করতে সহায়তা করে। একসঙ্গে পার্কে বা বিনোদনের অনুষ্ঠানে যাওয়াও এ ধরনের কর্মসূচির মধ্যে রাখা যেতে পারে। কখনও কখনও কোনো নোটিশ দেয়া ছাড়াই স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রেস্তোঁরায় বা কফি হাউজেও যাওয়ার কর্মসূচি একঘেঁয়ে বা ক্লান্তিকর মানসিকতা দুর করতে সাহায্য করে।  সন্তানদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালনও এ ধরনেরই একটি কর্মসূচি।   নতুন নতুন জায়গায় সফর করুন এবং সফরের আকর্ষণীয় স্থান নিজেরই নির্বাচন করুন। এসব সফরের সময় বা অন্য সময়ও আপনার প্রিয় খাবার বা রান্না-বান্নারও ব্যবস্থা করুন। তাতে দেখবেন পারিবারিক জীবনে কোনো তিক্ততা বা একঘেয়েমি অবস্থা দেখা দিলে তা দুর হয়ে যাবে। একসঙ্গে হাঁটতে বের হন। কখনও দুরের কোনো ঝর্ণা বা কৃত্রিম ঝর্নার কাছে যেতে পারেন।

এভাবে আকস্মিক নানা পদক্ষেপ নিয়ে উত্তেজনাময় আনন্দ সৃষ্টি করুন পরিবারে।  সাগর তীরে বা প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়াতে গেলে মন সবারই প্রফুল্ল হয়ে যায়। তবে সফরে থাকুন বা ঘরে থাকুন পারস্পরিক সংলাপ বা আলাপচারিতাকে কম গুরুত্ব দেয়া কখনও ঠিক হবে না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ