আগস্ট ১৭, ২০২২ ১৯:০০ Asia/Dhaka

ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর সঙ্গে ইরানি যোদ্ধাদের সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী ও উত্তেজনাকর কিছু মুহূর্তের জন্য ছিল না বরং যোদ্ধারা ইমামকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন এবং এই ভালোবাসায় কৃত্রিমতার কোনো ছাপ ছিল না।

ইরাক-ইরান যুদ্ধে শহীদ ইরানি যোদ্ধাদের অছিয়তনামা পড়লে দেখা যাবে তারা তাদের অসিয়তের কোনো না কোনো স্থানে ইমাম খোমেনীর প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আনুগত্যের কথা জানিয়ে গেছেন। এমনকি ইরাকি বন্দিশিবিরগুলোতে আটক ইরানি যোদ্ধাদেরকে চরম নির্যাতন করেও ইমামের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে বাধ্য করা যায়নি। কারণ, ইমামের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল ঈমানি চেতনায় বলীয়ান। ইরানি যোদ্ধারা ইমাম খোমেনীকে শুধুমাত্র তাদের রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক কমান্ডার মনে করতেন না বরং তারা তাঁকে হক্কানি পীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন।  একজন পীরের মুরিদগণ যেভাবে তাদের পীরের নির্দেশ মেনে চলে ইরানি যোদ্ধারা ঠিক সেভাবে ইমামের নির্দেশ মেনে চলতেন।

ইমামের প্রতি ভালোবাসার অভূতপূর্ব বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শহীদ মোহাম্মাদ জাহান-আরা’র অছিয়তনামায়। এই যোদ্ধা ছিলেন ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় খোররামশাহরের আইআরজিসি কমান্ডার। তিনি ন্যুনতম অস্ত্র নিয়ে খোররামশাহরের তরুণ ও যুবকদের সঙ্গে করে আগ্রাসী ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আগ্রাসনের প্রথম প্রহরেই সাদ্দাম বাহিনী ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর খোররামশাহর অবরোধ করে। এ সময় জাহান-আরা’র নেতৃত্বাধীন ইরানি যোদ্ধারা ৩৪ দিন পর্যন্ত আগ্রাসী বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখে।  এ সময় বহু ইরানি যোদ্ধা আগ্রাসী বাহিনীর ট্যাংক ও গোলার সামনে অকাতরে তাদের জীবন বিলিয়ে দেন। আট বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের ইতিহাসে এ সময় আত্মত্যাগের এক মহাকাব্য রচিত হয়। ওই লড়াইয়ে জাহান-আরা প্রাণে বেঁচে গেলেও যুদ্ধ শুরুর এক বছরের মাথায় এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

আইআরজিসি’র এই তরুণ অফিসার তার অছিয়তনামায় ইমাম খোমেনী (রহ.)কে উদ্দেশ করে লিখেছেন: হে ইমাম! আপনি এক জীবনে বহু শতাব্দীর কষ্ট সহ্য করেছেন, যেমন সহ্য করেছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম। তবে আপনি জেনে রাখুন আপনি আপনার বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর মুক্তি নিশ্চিত করেছেন। তবে আপনার এই কষ্ট, ত্যাগ, তিতিক্ষা উপলব্ধি করে এমন মানুষ কোথায়? কে আছে একথা বোঝার যে, আপনার অনুগামীদের কেউ যদি বিন্দুমাত্র তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে অথবা নিষ্ক্রিয়তা দেখায় তাহলে তা হবে গোটা মানবজাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।”

শহীদ মোহাম্মাদ ইব্রাহিম হেম্মাত ছিলেন আইআরজিসি’র মোহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্রিগেডের কমান্ডার। বিভিন্ন ফ্রন্টে একাধিকবার ইরাকি বাহিনীকে পরাজিত করেছিল এই ব্রিগেড। শহীদ হেম্মাত মায়ের কাছে লেখা এক অসিয়তে লিখেছেন: একটি সমাজের অধিপতি যখন মূর্খ ও বর্বর হয় তখন সে ওই সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। বর্তমান সময়ের মূর্খ রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের নিজ নিজে দেশকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যতদিন না গোটা বিশ্বের জন্য একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকের আবির্ভাব হয় ততদিন মানবজাতিকে এভাবে দুঃখ ও নির্যাতন  সহ্য করে যেতে হবে। সেরকম একজন শাসকের হাতে আমাদের সমাজের দায়িত্ব তুলে দিতে ইমাম খোমেনী (রহ.) যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মা আমার! তোমার মনে আছে আমি ইমামের একটি লিফলেট বিলি করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলাম? দেশের জন্য যদি আমার জীবন চলে যায় তাহলে তুমি ইমামকে আমার জন্য এই দোয়া করতে বলবে যে, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। ”

পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সময় আইআরজিসি’র সাইয়্যেদুশ শোহাদা (আ.) ব্রিগেডের কমান্ডার শহীদ আলীরেজা মোয়াহ্‌হেদ দানেশ তার ভাইকে উদ্দেশ করে লেখা অছিয়তনামায় বলেছেন: আলীরেজা! মুমিন ভাই আমার! জীবনে কখনো জুলুম/নির্যাতন সহ্য করবে না।  সব সময় মহান নেতা ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে জালেমদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবে। ভাই আমার! আমার কাছে থেকে শুনে রাখো, এই মহান খোদায়ী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কখনও সম্পর্ক ছিন্ন করো না; কারণ তিনি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলেন।

ইস্পাহান শহর রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন অপর ইরানি শহীদ জাফর আলী খোররামাবাদি। তিনি তার অছিয়তনামায় ইরানি জনগণকে উদ্দেশ করে লিখেছেন: “আমাদের প্রিয় ইমাম থেকে আপনারা এক মুহূর্তের জন্যও বিচ্ছিন্ন হবেন না বরং তার নির্দেশ পালনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাবেন। কারণ আমাদের ইমাম এমন এক মুত্তাকী ব্যক্তি যিনি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। ”

ইস্পাহান হচ্ছে এমন এক শহর যেখান থেকে আট বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন। এই নগরীর বহু পরিবার আছে যারা ইরাকি আগ্রাসন রুখে দিতে তাদের দুই থেকে তিনজন পর্যন্ত ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবাই শহীদ হয়ে যান। 

ইস্পাহানের অপর শহীদ আহমাদ আলী বিয়াবানপুর তার অছিয়তনামায় ইমাম খোমেনীর প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ যে, আমাকে এই মহান ইমামের সমসাময়িক যুগে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আপনি আমার দেশের জনগণকে এতটুকু জ্ঞান দান করুন যাতে তারা তাদের এই মহান নেতাকে ভালোভাবে চিনতে এবং তাঁর আনুগত্য করতে পারে।#

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ /১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ