সেপ্টেম্বর ০১, ২০২২ ১৮:৫৪ Asia/Dhaka

গত আসরে বলার চেষ্টা করেছি, বারবার আমরা যে কাজগুলো করি সেগুলো আমাদের অবচেতন মনে মজুত থাকে; সেগুলোর বাইরে নতুন কিছু করতে গেলেই অবচেতন মন তাতে সায় দিতে চায় না, বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।

 

সাধারণত মানুষ যেহেতু নির্ঝঞ্ছাট থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পছন্দ করে সে কারণে এই অভ্যাসটাই অবচেতন মনে শেকড় গেড়ে বসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আমাদের আরেকটি অভ্যাস হলো কোনো বিষয়ে গভীর চিন্তা না করা। এ কারণে অভ্যাসের বাইরে কোনো বিষয়ে গভীর চিন্তার প্রসঙ্গ এলেই তা অবচেতন মন এড়িয়ে যেতে চায়। নিজেকে চেনা-জানার জন্য কিছু বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই তা করতে চান না, কারণ এ ক্ষেত্রে তারা অভ্যস্ত নয়। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আজ কথা বলার চেষ্টা করব।

নিজেকে চেনা বা জানার চেষ্টা মানে নিজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করা। এই পরিবর্তনের জন্য দৃঢ়সংকল্প হতে হবে। এরপর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে এবং অভ্যাসগত নেতিবাচক কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিজেকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত করতে হবে। আমি কে, আমাকে কেন এই পৃথিবীতে আনা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা কে, সৃষ্টিকর্তা কেন আমাদের সৃষ্টি করেছেন, কোন কাজগুলো ইহকালের পাশাপাশি পরকালের জন্যও পাথেয় হতে পারে-এমন মৌলিক প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের অবচেতন মনকেও এই ভাবনায় জড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে একত্ববাদে বিশ্বাসীদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। ধর্ম নির্দেশিত এবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে মশগুল রাখা খুবই জরুরি। নামাজে যেসব সূরা বা বাক্য পড়া হচ্ছে সেগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। এবাদতে সৃষ্টিকর্তার ধ্যানে মগ্ন হওয়ার চেষ্টা জোরদার করতে হবে। এর ফলে আমাদের একাগ্রতা বাড়বে। এলোমেলো অবস্থা থেকে মন মুক্তি পাবে।

বলা হয়, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আসলে এটা কিন্তু বাস্তবতা।  আমরা যখন কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি তখন আর নানা নেতিবাচক ভাবনা বা শয়তানের প্ররোচনা আমাদের মনকে কাবু করতে পারে না। এর ফলে সচেতনভাবেই আমরা নিজের কাজটিতে পরিপূর্ণ একাগ্রতা দান করতে পারি। কিন্তু যখন আমরা অলস সময় কাটাই, তখনই আমাদের মন-মগজে বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তার মাত্রা বেড়ে যায়, যা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্ররোচনা দিতে থাকে। তাছাড়া মনকে নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা থেকে পরিস্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে। অতীতে আমাদের সাথে যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে এবং কোনো নতুন উদ্যোগের ফলাফল যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে, সেই স্মৃতি আমাদের অবচেতন মনে খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। যখনই আবার আমরা ওই একই ধরনের কিছু একটা করতে উদ্যত হই, অবচেতন মনে ফের ওইসব স্মৃতি উঁকি দিয়ে যায়, ফলে আমাদের পক্ষে নতুন কিছুতে হাত দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

নেতিবাচক স্মৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সচেতনভাবে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নেতিবাচক চিন্তা না করা ও নেতিবাচক কথা না বলার পাশাপাশি নেতিবাচক মানসিকতার মানুষদের সংসর্গও ত্যাগ করতে হবে, কেননা তাদের সাথে মিশলে নেতিবাচক আবেগ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব হবে না। অনেক সময়ই দেখা যায় যে, আমরা কোনো কাজ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু অবচেতন মনের বিভিন্ন নেতিবাচক আবেগের কারণে কাজটিতে হাত দিতে ভয় হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইতিবাচক কাজের ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে হবে। যদি আমাদের আকাঙ্ক্ষার মাত্রা অনেক বেশি হয়, মানসিকতা যদি এমন হয় যে কাজটি করতেই হবে, তাহলে অতীত অভ্যাস পিছু টানতে পারবে না। আসলে প্রতিদিন কত ছোটখাট চাওয়াই তো আমাদের মনের কোণে উঁকি দিয়ে যায়, আবার পরমুহূর্তে আমরা সেগুলোর কথা ভুলেও যাই। শুধু চাইলেই হবে না, মন থেকে চাইতে হবে। চাওয়ার মাত্রা অনেক বেশি হতে হবে অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা যদি খুব তীব্র হয়, তাহলেই ভালো কাজটি করা সম্ভব হবে।   

আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। সব কিছুর জন্য আগে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। আমরা অনেক সময়ই অজ্ঞতার কারণে আমাদের  জীবনধারা নিয়ে পুরোপুরি অসন্তুষ্ট থাকি। আমরা যে কাজে নিয়োজিত আছি, সেই কাজে হয়তো আমরা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ফলটিই লাভ করেছি, কিন্তু ভালোভাবে উপলব্ধির অভাবে তা আমাদের মধ্যে সন্তুষ্টি বা কৃতজ্ঞতার জন্ম না দিয়ে অকৃতজ্ঞতা ও অসন্তুষ্টি জন্ম দিচ্ছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে অসুখী মনে করি, কারণ আমরা নিজেকে কেবল নিজের মাপকাঠিতে বিচার করি না, নিজেকে তুলনা করি আশেপাশের অন্য আরো অনেকের সাথেও। আমাদের আশেপাশে যারা আমাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সফল, তাদের দেখে আমরা হীনম্মন্যতায় ভুগি। এই হীনম্মন্যতাবোধ ক্রমেই অবচেতন মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয়। ফলে আমরা নিজেদের ব্যক্তিজীবনে পূর্ণতা পেলেও প্রশান্তিবোধ আসে না।

সব সময় মনে হয় কোথায় জানি অপূর্ণতা রয়ে গেছে। এ জন্য সর্বপ্রথম নিজের সাফল্য ও সুখকে স্বীকার করে নিতে হবে। নিজের মনকে এটি বোঝাতে হবে যে আমি আসলেই সফল ও সুখী। এজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এবাদত বা প্রার্থনার মাধ্যমে এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমরা। তাছাড়া একটি নোটবুকে নিজের সাফল্যের খতিয়ান টুকে রাখা যেতে পারে। প্রতিদিন আমাদের সাথে যা যা ভালো হয়েছে, সেগুলো ওই নোটবুকে লিখে রাখতে পারি এবং মাঝেমাঝেই নোটবুকটির পাতা উল্টাতে পারি। এই কাজটি নিয়মিত করতে থাকলে একপর্যায়ে অবচেতন মনও এটা মেনে নিতে বাধ্য হবে যে, আমি আসলেই সুখে আছি। মনের ভেতরে এই উপলব্ধি দৃঢ় হলে অহেতুক দুঃখবোধ আর পীড়া দিতে পারবে না। অবসর সময় ইতিবাচক উপায়ে কাটানোও এ ক্ষেত্রে জরুরি। কেবল নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে অন্যদের উপকার করার ইচ্ছা-বাসনা মনের ভেতর লালন করতে হবে। গোটা মানবতা তথা পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে মানুষ হিসেবে করণীয় কী তা নিয়ে ভাবতে হবে।

ভবিষ্যতে কোন কাজটি কীভাবে করলে ভালো হয় তা আগেই ভেবে রাখা উচিত। ইতিবাচক কাজের পরিণতি কী হবে তা নিয়ে খুব বেশি না ভেবে কাজটি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করতে হবে। ভালো কাজের ফল যদি ভালো না হয় তাতেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ এর পুরস্কার নিশ্চিতভাবেই  মৃত্যুপরবর্তী জগতে পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে যে কাজগুলো করতে চাই আমরা সেগুলোর পরিণতি নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আবুসাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ