সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ ২০:১৯ Asia/Dhaka
  • দর্পন: পাশ্চাত্যে হিজাবের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পাশ্চাত্যে ইসলাম আতঙ্ক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারীদের ইসলামি শালীন পোশাক বা হিজাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়টি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ম্যালডেন শহরে 'মিস্টিক' স্কুল খোলার পর প্রথম দিনেই ইসলামি শালীন পোশাক বা হিজাব পরার অপরাধে অষ্টম শ্রেণীর মুসলিম ছাত্রীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে হিজাব স্কুল ড্রেসের পরিপন্থী হওয়ায় ওই ছাত্রীদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং ছাত্রী বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত লক্ষ্য করা গেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গ পাব।  

ইসলামোফোবিয়া ও ইসলাম বিদ্বেষ পশ্চিমে নতুন কোনো ঘটনা নয় এবং ইউরোপের ইতিহাসে বিশেষ করে ক্রুসেডের যুদ্ধে এর শেকড় নিহিত। কিন্তু বর্তমান তৃতীয় সহস্রাব্দিতে এসে ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামভীতি নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। পাশ্চাত্য বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশ্চাত্যের সরকারগুলো এমনভাবে বিশ্বব্যাপী ইসলামভীতি ছড়িয়ে দিতে চাইছে যাতে ইসলামের সৌন্দর্য ও মানব সমাজ উন্নয়নে এর শক্তিশালী ভূমিকার বিষয়ে কেউ অবহিত না হতে পারে এবং পাশ্চাত্য সমাজে যাতে ইসলামের বিস্তার ঘটতে না পারে। এ লক্ষ্যে পাশ্চাত্য সরকারগুলোর অন্যতম একটি টার্গেট হচ্ছে ইসলামের প্রতীক 'হিজাব' নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা। কারণ পাশ্চাত্যে হিজাব ব্যবহারের পরিমাণ বহুগুণে  বেড়ে যাওয়ায় এটাকে সেখানকার পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা  ও সংস্কৃতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে যা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রভাব বাড়ার প্রমাণ। পাশ্চাত্যের সরকারগুলো কোনোভাবেই এ অবস্থা মেনে নিতে পারছে না এবং এ কারণে তারা হিজাবের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছে।

পাশ্চাত্যের সংবাদ ও রাজনৈতিক মহলে বহুকাল থেকে মুসলিম নারীদের ইসলামি শালিন পোশাক বা হিজাব নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মুসলিম নারীদের এই ধর্মীয় প্রতীক এখন আর তারা সহ্য করতে রাজি নয়। এমনকি আমেরিকার একটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের হিজাব কেড়ে নেয়ার মতো ন্যক্কারজনক কাজ করতেও দ্বিধা করেনি। অথচ হিজাব ধর্মীয় ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অংশ এবং অন্যের অধিকার খর্ব করা কিংবা সমস্যা সৃষ্টি না হলে হিজাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার কোনো সরকারের নেই। কিন্তু আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের সরকারগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের প্রভাব বিস্তারের ভয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কিত হয়ে থাকে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে লাখ লাখ মুসলমান বসবাস করে এবং হিজাব তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের অংশ। কিন্তু তারপরও ওই সরকারগুলো শুধু বিদ্বেষবশত: হিজাব কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ দেশগুলো ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের কথা বলে অথচ  ইসলামের মতো একটি বৃহৎ ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে তারা মোটেই তোয়াক্কা করছে না।

আমেরিকার ওই স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার পর ম্যালডেন শহরের মেয়র এক সাক্ষাতকারে হিজাব নিষিদ্ধ করার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, অন্যান্যদের মতো আমিও ম্যালডেন শহরের এই স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিস্মিত হয়েছি। স্কুলের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের গুরুত্বের বিষয়টি আমি উপলব্ধি করি এবং এর প্রতি আমি সম্মান জানাই। কিন্তু আমি এটাও চাই মুসলিম নারীদেরও তাদের ধর্মীয় পোশাক ব্যবহারের অধিকার রয়েছে এবং এটা কেউ কেড়ে নিতে  পারে না।'

আজকের বিশ্বে হিজাব ও মহিলাদের পোশাকের বিষয়টি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। হিজাবের বিরুদ্ধে লড়াই বিশ্বে ইসলাম বিদ্বেষ চরিতার্থ করার অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এর পাশাপাশি পশ্চিমারা তাদের অশ্লীল সংস্কৃতি এমনভাবে অন্য জাতিগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে যাতে নারীদেরকে তাদের আত্মপরিচিতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়।

কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নারীদের শালীন পোশাক পরিধানে আগ্রহ একটি স্বাভাবিক বিষয়। সাধারণত কোনো কিছু যতবেশি মূল্যবান তা ততবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে সেটির রক্ষণাবেক্ষণে আরো বেশি যত্নবান হতে হয়। আল্লাহতাআলা সুস্থ পরিবার গঠনের সুবিধার্থে নারীকে সুন্দর ও যোগ্যতাসম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছেন এবং পুরুষকে নারীর প্রতি আকৃষ্ট করে গড়ে তুলেছেন। এজন্য বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে সুস্থ যৌন সম্পর্ককে উৎসাহিত করেছেন মহান সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু এ যৌন সম্পর্ক যদি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয় অর্থাৎ যদি অবাধ যৌনাচার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সমাজ কলুষিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হবে।

এ কারণে ইসলামের দৃষ্টিতে হিজাব নারীর আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি এবং পুরুষদের কামুক আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুসলিম নারী ও পুরুষের দৃষ্টিকে সংযত করার এবং শালিন পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা নুরের ৩০ ও ৩১ নম্বর আয়াতে বলেছেন,  'মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য মঙ্গল আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত আছেন।' 'ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পাদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।'

যাইহোক, পাশ্চাত্যের সরকারগুলো নানান রকম আইন তৈরি  করে হিজাবের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের চেষ্টা করছে। এমনকি তারা কোনো কোনো মুসলিম দেশেও হিজাব বিরোধী আইন তৈরিতে চাপ সৃষ্টি করছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে পাশ্চাত্য বিশ্বে হিজাবের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফরাসি নওমুসলিম মালানি দিয়াময্‌ বলেছেন, নারীদের জন্য হিজাব হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং আমি কিছুতেই এটাকে হাতছাড়া হতে  দেব না। কেননা হিজাব আমার ব্যক্তিত্বকে  বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ