অক্টোবর ০৩, ২০২২ ১৫:০৩ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- খাদ্যে ভেজাল নিয়ে আজ আমরা কথা বলব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে আছেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন।

রেডিও তেহরান: জনাব নূর খান লিটন, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রথমে জানতে চাইব আপনার কাছে, বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল অনেকটাই সাধারণ ঘটনা অথচ এটি মানুষের বেঁচে থাকা ও সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত। মনুষ্য সৃষ্ট ‘আধুনিক’ এই সংকট কেন তৈরি করা হলো?

নূর খান লিটন: দেখুন, এই জায়গায় একবাক্যে আমি একটি কথা বলতে চাই। সেটি হচ্ছে একটি সমাজ যখন আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় এবং সমাজে যখন নৈতিকতার বালাই থাকে না তখন সেই সমাজে দুর্নীতি হবে। সেই সমাজে মানুষ  যে কোনো অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে পরস্পরকে ঠকিয়ে শুধু অর্থ উপার্জন করবে। যে সমাজের লক্ষ্য এটা হয়ে যায় সেই সমাজে প্রবেশ করেছি অনেক আগে। আর সে কারণে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নৈতিক জায়গা যেখানে খুব শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল সেটা না হয়ে খাদ্যে যখন ভেজাল হয় সেখানে জীবনহানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। আর সেই জায়গায় শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী বা কিছু আইন দিয়ে সেটি পরিবর্তন করা যাবে এমনটি আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। এখানে যে কাজটি করা খুবই দরকার ছিল সেটি হচ্ছে, সমাজে নৈতিকতা চর্চার উপর জোর দেয়া। কিন্তু দুর্ভ্যাগ্য হচ্ছে আমাদের এখানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বা যাদের আমার ভালো মন্দ দেখভাল করার কথা তারা  আমার ভালো দিকটি দেখার চেয়েও আমার মন্দ দিকটির যত দ্রুত সফলতা অর্জন করা যায় সেই কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা, একে কী আমরা মানুষের মানবতাবোধ ও বিবেকবোধের চরম অবক্ষয় বলতে পারি?

নূর খান লিটন: দেখুন, আমরা এখন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছি যেখানে মানবিক অবক্ষয় যে হয়েছে সেকথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর এই অবক্ষয়ের মাত্রাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে।

রেডিও তেহরান: অবশ্য এখানে একটি আশার দিক রয়েছে সেটি হলো যেহেতু এটা মনুষ্য সৃষ্ট একটা সংকট ফলে মানুষের পক্ষে এ সংকটের সমাধান করা সম্ভব। আপনি কী বলবেন?

নূর খান লিটন: দেখুন, এটি মনুষ্য সৃষ্ট সংকট এবং অতি মাত্রায় লোভ এই সংকটকে ঘনীভূত করেছে। আর সেটি সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে। যাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বা সমাজের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করার কথা সেই রাজনৈতিক শক্তি যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের মধ্যে আদর্শিক ও নৈতিক একটা মান থাকা দরকার ছিল। সেখানে অবক্ষয় এরইমধ্যে হয়েছে। ফলে আমরা দেখি সরকারি দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একে অপরকে হত্যা করছে। ভোটে একই জায়গায় একাধিক প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! খাদ্যে ভেজাল নিয়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটনের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি আমাদের সাথেই থাকুন।

 রেডিও তেহরান: মিউজিক বিরতির পর আবার ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে।  জনাব নূর খান লিটন, বলা হয়- পুঁজিবাদী সভ্যতার অনুষঙ্গরূপেই জন্ম নিয়েছে ভেজালের অমানবিক কারবার। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

নূর খান লিটন: দেখুন, একটি পুঁজিবাদী সমাজেও কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে নৈতিকতার কিছু মানদণ্ড থাকে। তবে আমাদের মতো দেশগুলোর সেই মানদ্বণ্ডের জায়গাটি নেই। এই দেশটিকে একেবারে নিরেট পুঁজিবাদী দেশ বলাও কঠিন। অর্থাৎ এই দেশটি একটি ভয়াবহ অবক্ষয়ের মধ্যে আছে। আমরা আছি ভয়াবহ অবক্ষয়ের মধ্যে। এই দেশটি সম্পর্কে আমি যেটি দেখতে পাচ্ছি সেটি হচ্ছে, একটি হায়ানার একটি লুটেরা সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

রেডিও তেহরান: নূর খান লিটন, নিশ্চয়ই আপনি দেখেছেন, বাংলাদেশে এক সময় ভেজাল-বিরোধী বড় বড় অভিযান চলেছে এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট বেশ বিখ্যাত হয়েছিলেন। কিন্তু আজকাল তা আর চোখে পড়ছে না। এর কারণ কী? তাহলে কী দেশে কী ভেজাল-বিরোধী অভিযান থিতিয়ে পড়েছে?

নূর খান লিটন: এর কারণ হচ্ছে যেই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে আমরা দেখেছি ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কিছু সিদ্ধান্ত বা কিছু ব্যবস্থা নেয়ার কারণে মানুষের ভেতরে একধরণের বার্তা পৌঁছে যায় যে সততার সাথে নির্ভীক চিত্তে কাজ করে টিকে থাকা খুব কঠিন। এরকম একটি বার্তা কিন্তু সমাজে এরইমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি ঐ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের ঘটনার মধ্য দিয়ে।

রেডিও তেহরান: জ্বি জনাব নূর খান লিটন আমারা সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। ছোট করে জানতে চাইব, বাংলাদেশে ভেজাল নিয়ন্ত্রণের মূল সমস্যাটা কী আইনের নাকি আইনের যথাযথ প্রয়োগের? এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

নূর খান লিটন: দেখুন, আইনের যথাযথ প্রয়োগটাই এখানে প্রধান সমস্যা। কারণ ভালো আইন থাকলেও সেটি তো প্রয়োগ করবেন আপনার আমার মতো কোনো মানুষ। মানুষগুলো যখন চরিত্রহীন হয়ে যায়, দুর্নীতি, অনাচার ভর করে তখন সে আর মানুষ থাকে না। আমাদের সমাজে অবক্ষয়ের জায়গাটা এমন একটা অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে যে কোনো জায়গায় আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই।

তো জনাব নূর খান লিটন বাংলাদেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাদ্যে ভেজাল নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩

ট্যাগ