ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ ১৩:০৭ Asia/Dhaka

মানুষ সামাজিক জীব, এ কারণে প্রত্যেক মানুষেরই যোগাযোগ ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন জরুরি। কর্মক্ষেত্র, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগ দক্ষতা আপনার পথচলাকে সহজ করে দেবে। আপনি হয়তো ভাবছেন যোগাযোগ দক্ষতা না থাকায় আপনি পিছিয়ে পড়ছেন। আপনার সব ধরণের যোগ্যতা থাকার পরও যোগাযোগ ক্ষেত্রে অদক্ষতাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেনশনের কিছু নেই। চেষ্টা ও চর্চা করলেই এই দক্ষতা বাড়ানো যায়।

আত্মবিশ্বাসের অভাব অথবা শিশুকালের কিছু সমস্যার কারণে কখনো কখনো কাঙিক্ষত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যোগাযোগ দক্ষতা ‌আসলে কী? কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারেন আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে পারছেন না।  ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে অন্যের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা এবং নিজের তথ্য অন্যের কাছে সহজে বোধগম্য করে তোলার যে দক্ষতা, তা হলো কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা। এখানে ‘যোগাযোগ’ হতে পারে মানুষ বা যন্ত্র অথবা কোনো প্রাণীর সঙ্গে।                                                             

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন বা সামাজিক সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজন।  প্রাচীন যুগে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চেপে নিজে গিয়ে বা দূত মারফত খবর দেওয়া। বর্তমান যুগে যোগাযোগের অনেক সহজ মাধ্যম রয়েছে। মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ অন্যতম। কর্মজীবন বা পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে হলে আপনাকে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে এবং বিশেষ কিছু টিপস মেনে চলতে হবে। পেশাগত জীবনে সর্বপ্রথম নিজের কর্ম দক্ষতা বাড়াতে হবে। নিজের কর্ম দক্ষতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আপনার কর্মদক্ষতা যতো বাড়বে, আপনি ততটাই সফল হবেন। ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা অনেক। তাছাড়া সামাজিক ও কর্মজীবনে যোগাযোগের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে, সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা খুব কাজে দেয়। উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলে সবার সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।

নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন দুষ্ট লোকের সাথে নেটওয়ার্কিং গড়ে না ওঠে, এটা আপনার জন্য মঙ্গল বয়ে না এনে অমঙ্গলের কারণ হতে পারে। তাই ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবার সাথে পরিচয় বহাল রাখতে হবে। এতে আপনি চলার পথে অনেক সহায়তা পাবেন। সব ক্ষেত্রেই সফলতার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে যোগাযোগ দক্ষতা। আমরা আমাদের নিত্য দিনে পরিচিত হই অনেক মানুষের সাথে কিন্তু সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক একরকম হয় না। কারণ, আমরা তাদেরই পছন্দ বা প্রাধান্য দেই, যারা আমাদের কাছে খুব সহজেই মনোভাব প্রকাশ করেন কিংবা আমাদের কথা বুঝতে পারেন। তাছাড়া কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা মানে এই নয় যে, জোরালো বক্তব্য দিতে পারতে হবে। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে, যার সাথে কথা বলা হবে, তার কথা বলার ভঙ্গিমা কিংবা ধরনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে কোনো কিছু বোঝাতে পারার সক্ষমতা। যেকোনো বিষয় সহকর্মী কিংবা ক্রেতা সবার কাছেই সহজভাবে বোঝাতে পারা। এছাড়া নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও সবার আগে এই গুণটির দরকার হয়।

যোগাযোগ দক্ষতা ভালো হলে সহজেই সহকর্মীদের সাথে বোঝাপড়া করা সম্ভব হয়। সবার সাথে যত বেশি যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে, নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় ও চিন্তা-বুদ্ধি বিনিময় তত বেশি হবে এবং বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া শেয়ারিংয়ের মাধ্যমেই উৎপাদন বাড়বে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে দক্ষ হতে চাইলে কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন, তিনি যদি অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমে থাকে সুন্দরভাবে সালাম দিন। নিজের পুরো নাম বলুন। এটা হচ্ছে যোগাযোগের শিষ্টাচার। অন্যের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রভাবে কথা বলুন। কথায় যাতে কখনোই অহংকারের ছাপ না থাকে। যিনি আপনার সাথে কথা বলছেন, তাকে এটা বুঝিয়ে দিন যে, আপনি তার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছেন। সে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে তার কিছু কথা রিপিট করে তার কথার প্রশংসা করুন। এতে সে বুঝবে আপনি তার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছেন। মানুষ তাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, যে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

কথা বলার সময় ভুল করেও তর্কে জড়াবেন না। কেউ যদি আপনাকে অপমান করে কিছু বলে অথবা অযৌক্তিকভাবে কথাবার্তা বলে এর অর্থ দাঁড়ায়, তার ভেতর জ্ঞানের অভাব আছে। এ সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তর্কে জড়ানো যাবে না। এতে কোনো ভালো ফল পাওয়া যাবে না। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ৮০/২০ রুলস মেনে চলুন। ৮০ শতাংশ কথা শুনবেন এবং ২০ শতাংশ কথা বলবেন।  আপনার দুটো কান রয়েছে বেশি করে শোনার জন্য এবং একটা মুখ আছে কম কথা বলার জন্য। বুদ্ধিমান মানুষ সবসময় বেশি করে কথা শোনেন এবং যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কথা বলেন। মানুষের প্রশংসা করুন। ভালো কিছু গুণাবলী তুলে ধরুন। কেউ কোনো ব্যক্তির প্রশংসা করলে ঐ ব্যক্তি মনের ভেতর থেকে প্রশংসাকারী ব্যক্তির প্রতি বেশি শ্রদ্ধা অনুভব করেন  অন্য লোক আপনাকে নিয়ে কী ভাবছেন তা তাদের একান্ত ব্যাপার। তাদের ভাবতে দিন। আপনার এইসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। সবসময় রুচিশীল ও শালীন পোশাক পরুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ