ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ ১৩:৩৫ Asia/Dhaka

আমরা অনেকে যোগাযোগ দক্ষতাকে গুরুত্ব দিতে চাই না। অনেকেই কথা বলাটাকেই যোগাযোগ করা বুঝি। কিন্তু আসলে কথা বলা আর অন্যের সাথে যোগাযোগ করা একই কথা না। আসলে বিষয়টা এতটা সহজ নয়। যোগাযোগ দক্ষতা যার যত সে তত বেশি সফলভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবে।

আপনি যখন আপনার কোনো বন্ধুর সাথে কিছু শেয়ার করেন, তখন আপনার উদ্দেশ্য থাকে, আপনার মনকে হালকা করা কিংবা তার মতামত জানা কিংবা তাকে ব্যাপারটা জানানো। এই উদ্দেশ্য তখনই হাসিল হবে যখন আপনি সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন। আর সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে হলে শুধু কথা বললেই বা লিখলেই হবে না বরং সেই কথার বা লেখার মাঝে থাকতে হবে কিছু বৈশিষ্ট্য। আপনার কথা বা লেখায় সবসময় আপনার শ্রোতা, দর্শক বা পাঠকের মনে জাগ্রত প্রশ্নগুলোর উত্তর থাকা জরুরি। কথাটা যেন আপনার শ্রোতা বা পাঠকের সবরকমের জানার আগ্রহকে নিবারণ করতে সক্ষম হয়। কথা বলার বা লেখার সময় মাথায় রাখতে হবে যে আপনার কথার বা লেখার উপর ভিত্তি করেই শ্রোতা বা পাঠক তার প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

মনে রাখতে হবে পরিপূর্ণ যোগাযোগ একটা সংগঠন বা ব্যক্তির পেশাদারিত্বকে বৃদ্ধি করে। এটা সময় এবং অর্থের অপচয় কমায়। ধরে নিন, আপনি একটা চিঠি লিখেছেন তা কুরিয়ার করতে কিছু খরচ হয়েছে। এখন তাতে যদি পরিপূর্ণ তথ্য নাই থাকে তবে আপনার তা আবার পাঠাতে হবে এবং আবারো কুরিয়ারের খরচ হবে। আপনি কাউকে কিছু বর্ণনা করেছেন। সে অনেক কিছুই বুঝতে পারে নি। তখন আপনাকে আবার পুরো ব্যাপারটা তাকে বোঝাতে হবে। এর ফলে আপনার অনেক সময় ব্যয় হবে। বক্তব্য বা লেখা সংক্ষিপ্ত হওয়া চাই। মূল কথাটাকে যতটা সম্ভব কম শব্দে বলা এবং তাতে যেন সুষ্ঠু যোগাযোগের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তা মেনে চলা। যোগাযোগের সময় একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, শ্রোতা বা পাঠক ব্যস্ত। তাই দীর্ঘ কথা বললে কিংবা লিখলে, কথার মূলভাব বোঝার জন্য তার অনেক সময় ব্যয় হবে এবং সে বিরক্ত হবে। লেখা বা কথা সংক্ষিপ্ত হলে এমনটা হয় না। এর দ্বারা সময় অপচয় রোধ হয়।

যোগাযোগের সময় নিজেকে শ্রোতা বা পাঠকের স্থানে বসিয়ে দেখতে হবে। এখানে শ্রোতার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। একসময় অনেক মূল কথা বলতে গেলে শ্রোতা দ্বিধান্বিত হয়ে যায় এবং কোনও কথাই ঠিকমত বলা হয় না। এভাবেই যোগাযোগের সময় নিজেকে শ্রোতা বা পাঠকের জায়গায় রেখে তারপর করতে হবে। শ্রোতার বোধগম্যতার বাইরে যায় এমন কিছুও যেমন বলা যাবে না, তেমনি শ্রোতা নিজেকে তুচ্ছ মনে করে বা তার বিশ্বাসে আঘাত হানে এমন কিছু বলা যাবে না। কথা বলার সময় নেতিবাচক শব্দের পরিবর্তে যতটা সম্ভব ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। যোগাযোগের সময় একটা মূল কথাতেই জোর দিতে হবে। একসময় অনেকগুলো মূল কথা বলতে গেলে শ্রোতা দ্বিধান্বিত হয়ে যায় এবং কোনও কথাই ঠিকমত বলা হয় না। এক সময় একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে তা শ্রোতার বুঝতে সুবিধা হয়। ব্যাপারটা আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলতে গেলেই বুঝবেন। অনেক

বন্ধু-বান্ধব একসাথে কথা বলতে থাকলে সেখানে অনেক রকমের কথা মিশে যায় এবং অনেক কম সময়ই দেখবেন যে ঐখানে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে।

যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই নির্দিষ্ট করতে হবে। ধরে নিন, আপনাকে কেউ বলল কালকে সকালে তার সাথে দেখা করতে। এখন আপনি কখন দেখা করবেন? সকাল ৮ টায় না ১১ টায়? আবার সে দেখা করার স্থানে উল্লেখ করেছে, অমুক ভবন কিন্তু কত তলা তা বলে দেয়নি। এখন আপনি কোন তলায় খুঁজবেন তাকে? এই দুই ধরনের যোগাযোগে কিছু অস্পষ্টতাই সমস্যার মূল কারণ। স্পষ্টতার অভাবে শ্রোতা বা পাঠকের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এটা তাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগায়। আবার অনেক সময় শ্রোতা বা পাঠক অস্পষ্ট বার্তার ভুল ব্যাখ্যাও করে। ধরে নিন, একই নামে দু’টি ভবন রয়েছে। এখন, বার্তা প্রেরক একটা ভবনের কথা চিন্তা করেছেন, কিন্তু প্রাপক ভেবেছেন আরেকটা। এতে করে অনেক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। সব কিছু নির্দিষ্ট না থাকলে বার্তাটি । বার্তা যোগাযোগের সকল বৈশিষ্ট্য বহন করলেও তা পেয়ে প্রাপক সন্তুষ্ট হবে না যদি না তা ভদ্র ভাষায় লেখা হয়। বার্তায় প্রাপককে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। এবং বোঝাতে হবে যে প্রেরক আসলেই প্রাপকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। এর জন্য বার্তা বলতে কিংবা লিখতে হবে শ্রোতা বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং বার্তাটা যেন কোনোভাবে পক্ষপাতিত্বমূলক না হয়। এখানে সৌজন্যমূলক অনেক শব্দ থাকবে কিন্তু অবশ্যই তা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়।

বার্তা আদান-প্রদানে শুদ্ধতা জরুরি। শিক্ষিত সমাজে এটা বেশি জরুরি। আপনার বার্তায় কোনোরকমের ব্যাকরণগত ভুল থাকা উচিত হবে না। আপনার লিখিত প্রতিটা বাক্য আপনাকে উপস্থাপন করে। আপনার বাক্যে ব্যাকরণগত ভুল থাকলে, আপনি যতই দক্ষ হোন না কেন, সেই বাক্যটি আপনাকে প্রাপকের সামনে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করবে। যদি নিজের ব্যাকরণগত জ্ঞানের উপর ভরসা না থাকে, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে চেক করিয়ে নিন। একটা ব্যাকরণগত ভুল শুধু আপনারই নয় বরং আপনি যে সংগঠনের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠাচ্ছেন, তার মর্যাদাও কমিয়ে দেয়।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ