জানুয়ারি ০৮, ২০২৩ ১৪:৪৭ Asia/Dhaka
  • সুন্দর জীবন- পর্ব ২৩ (একটু হাসিই অনেক কিছু)

কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সফল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রথম ধাপটি হলো আই-কন্টাক্ট বা চোখে চোখ রাখা। সাক্ষাতের শুরুতেই সাক্ষাতকারীর চোখের দিকে তাকান এবং খেয়াল রাখতে হবে আপনার চোখে যেন আপনার ইতিবাচক মনোভাবই প্রতিফলিত হয়। এরপর একটু হাসুন। হাসি এই বার্তা দেয় যে, আপনি আন্তরিক।

কথোপকথনের শুরুতেই অপর পক্ষের উদ্দেশ্যে আপনার একটি স্মিত হাসি যোগাযোগের প্রক্রিয়াটিকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। পরবর্তী ধাপ হলো কথা বলা। একটা সহজ প্রশ্ন দিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেন। প্রশ্ন অবশ্যই এমন হতে হবে যে, ঐ পক্ষ যাতে কোনোভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন না হন। নিজের পরিচয় তুলে ধরা বা নিজের সম্পর্কে কিছু বলা যোগাযোগের আরেকটি ধাপ। নিজের সম্পর্কে বলুন। এর অর্থ এই নয় যে, ব্যক্তিগত ও গোপন তথ্য অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা। অপর পক্ষের আগ্রহের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া যোগাযোগকে আরও সফল করে তোলে।

আপনি যার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন বা যার সঙ্গে কথা বলছেন তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তার বক্তব্যের বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান।  আপনি যে তার কথা বুঝতে পেরেছেন তা বোঝাতে তার কথাকে প্রয়োজনে সংক্ষেপে এক-দুই বাক্যে পুনরাবৃত্তিও করতে পারেন। এমন আচরণ প্রকাশ করতে হবে যে, এ সময় আপনার কাছে তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কথার মাঝে যথাসম্ভব খানিকটা হেসে জবাব দেওয়া যেতে পারে। একইভাবে টেলিফোনে কথা বলার সময়ও এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই মনে করেন, টেলিফোনে কথা বলার সময় তো আর শরীর দেখা যায় না। কিন্তু সঠিকভাবে কথা বলতে না পারলে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই টেলিফোনে কথা বলতে হবে সচেতনতার সঙ্গে। মনে রাখতে হবে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় অবশ্যই আচরণে ভদ্রতা ও আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। আপনি যা বলছেন, তা স্পষ্ট হচ্ছে কি না অথবা যুক্তিযুক্ত কি না তা খেয়াল করতে হবে। যার সঙ্গে কথোপকথন হচ্ছে, তাঁকে বোঝাতে হবে কথা বলার উদ্দেশ্য কী। তাঁর কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

ধরুন আপনি একজনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করছেন। প্রতিটি আলাপেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন এবং আলাপ শেষ করার আগে অবশ্যই  সেই প্রশ্নগুলো করুন। এই অভ্যাস আপনাকে আলাপে যা বলা হচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং আলাপচারিতায় দুই পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। আজকাল আমাদেরকে অনেক কিছুই মনে রাখতে হয় আর আমাদের মস্তিষ্কে যেহেতু অনেক কিছুই ঘুরপাক খায়, সেজন্য মাঝে মধ্যে এটা-সেটা ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টুকে রাখুন। আলাপচারিতায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানার সুযোগ হলে তা লিখে রাখুন। আপনি কাগজে লিখে রাখতে পারেন অথবা মোবাইলে টুকে রাখা যেতে পারে। অন্য যেকোনো উপায়ে আপনি এ বিষয়গুলো হাতের কাছে রাখার চেষ্টা করুন। বর্তমানে যোগাযোগের একটা বড় মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে আপনার কাছে নানা বার্তা আসতে পারে। এছাড়া ইমেইলের ব্যবহারতো রয়েছেই।

অনেকেই শুধু যেকোনো বার্তা বা ইমেইলের প্রথম অংশ পড়ে থাকেন। এর ফলে তাদেরকে বারবার বার্তা দিতে হয় যাতে তারা পুরো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। এতে সময়ের অপচয় হয় এবং কাজ বাড়ে। তাড়াহুড়ো না করে পুরো বার্তা ইমেইল পড়ে নিন এবং সেই অনুযায়ী বার্তার উত্তর দিন। ইমেইল বা বার্তা পাঠানোর সময় তা সংক্ষিপ্ত রাখুন তা না হলে প্রাপকের তা পড়তে অসুবিধা হতে পারে। আপনার বক্তব্য পয়েন্ট আকারে সহজে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। যদি বলার মত অনেক কিছু থাকে, তাহলে ফোনে বা সামনা-সামনি আলাপ করে নিতে পারে।  কখন কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তার একটি রুটিন করে নিন, এতে আপনার কার্যক্ষমতা বাড়বে এবং যাদের সাথে আপনার যোগাযোগ করতে হবে তাদের প্রত্যাশাও পূরণ করা সম্ভব হবে। মনে রাখবেন অন্যের সাথে যোগাযোগ করে তার সাড়া না পাওয়াটা বেশ বিরক্তিকর।

আপনি যেমন অন্যের কাছ থেকে দ্রুত উত্তর বা প্রতিক্রিয়া আশা করেন, তেমনি অন্যরাও আপনার কাছে দ্রুত উত্তর বা প্রতিক্রিয়া পেতে চায়। তাই আপনার যোগাযোগের জন্য সময় নির্ধারণ করে নিন। হাতে সময় থাকলে এক ঘণ্টার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল বা ফোন মেসেজের উত্তর দিন। ইমেইলের ক্ষেত্রেও দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। সময় নির্ধারণ করে নিলে তা আপনার কাজটা অনেক সহজ হবে। আপনি যাদের সাথে যোগাযোগ করবেন তারাও আপনার সময়ের সাথে অভ্যস্ত হয়ে সেই অনুযায়ী আপনাকে সাড়া দেবেন। তারাও আপনার বার্তার দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

এখন পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুদে বার্তা এবং সংক্ষিপ্ত ইমেইল খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই যেকোনো বার্তার মূল সারমর্ম বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে কেউ কেউ বার্তা বা ইমেইলের মর্ম না বুঝে ভড়কে যান। সবাই তাদের নিজের মত করেই সবকিছু বুঝতে চায়। যদি দুই পক্ষের মধ্যে কোন বৈরিতা থাকলে বার্তার মূল মর্ম বা অর্থ ভুলভাবে বোঝার আশঙ্কা বেশি থাকে। সব সময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বার্তা পড়ার বা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি কোন সংশয় থাকে তাহলে সরাসরি কথা বলে তা মিটিয়ে ফেলুন, ভুল বুঝে যোগাযোগকে আরও কঠিন করে তুলবেন না।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ