ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩ ১৪:১২ Asia/Dhaka
  • সুন্দর জীবন-পর্ব ২৬ (অনুমানের ভিত্তিতে কথা নয়)

যোগাযোগ দক্ষতায় ভালো করতে হলে আপনাকে আগে প্রশ্নকারীকে কথা সম্পন্ন করার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু আমাদের সাধারণ একটা অভ্যাস হলো, অন্যের কথা শোনার সময় আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। প্রশ্ন বা কথা পুরোটা না শুনেই উত্তর দেয়া ভালো অভ্যাস নয়।

আরেকটি বিষয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাফল্যের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় আর তাহলো অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলা। এই অভ্যাসটা মানুষের সম্মান মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। ধরুন আপনি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেছেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে কোন বিষয়ে না জানাটা বড় কোনো দোষের বিষয় নয়, কিন্তু অনুমানের ওপর ঢিল ছোড়া অনেক বড় ত্রুটি হিসেবে গণ্য হয়। অনুমানের ওপর নির্ভর করে যারা কথা বলেন, তাদের ওপর কারো আস্থা থাকে না। এ ধরণের লোকদেরকে কেউ সহজে বিশ্বাস করে না। এই বদ অভ্যাস থাকলে ঐ ব্যক্তির সত্য ও তথ্য নির্ভর বক্তব্যগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। যোগাযোগ দক্ষতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যা প্রশ্ন করা হয়েছে পরিমাপমত সেটার উত্তর দেয়া। আর এটা কেবল তখনই সম্ভব যখন আপনি প্রশ্নকারীর কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুটা ধরতে পারবেন। ভালো বক্তা হতে গেলে ভালো শ্রোতা অবশ্যই হতে হবে।

অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সঠিক সময় সঠিক কথা বলতে পারিনা। কখন কোন কথা বলা উচিত তা বুঝতে পারি না। ভুল জায়গায়, ভুল সময়ে ভুল কথা বলে বসি। তাই কথা বলার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আপনার সামনের শ্রোতা কী ধরণের মুডে রয়েছেন বা তার মানসিকতা অবস্থাটা কেমন। অবস্থা বুঝে কথা বলতে পারলে অপর পক্ষের সঙ্গে আপনার যোগাযোগটা সুদৃঢ় হবে। আমরা সবাই জানি, কথা বলার সময় একটু হাসলে সেটা যোগাযোগকে প্রাণবন্ত করে। তাই বলে একজনের মন খারাপ তার সামনে গিয়েও হাসাহাসি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে । তবে অন্যান্য সময় কথা বলার মুহূর্তে যদি মুখের কোণে একটা হালকা হাসি নিয়ে কথা বলেন তাহলে দেখবেন যোগাযোগ অনেকগুণ ফলপ্রসূ হবে। যখন কারো সাথে কথা বলবেন তখন সেই ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল থাকার চেষ্টা করুন। ব্যক্তির দুঃখের কথার সময় দুঃখ প্রকাশ করুন এবং আনন্দ ও খুশির বিষয়ে আসলে তার সঙ্গে নিজেকেও আনন্দিত ভাবার চেষ্টা করুন। এই প্রক্রিয়া যোগাযোগকে অনেক দৃঢ় করবে।

কথা বলার সময় অবশ্যই যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবেন। আপনি যখন কোনো কথা যুক্তি ও উদাহরণ সহকারে উপস্থাপন করবেন তখন শ্রোতারা আপনার কথা মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং আপনি সবার চোখে একদম আলাদা হবেন। অনেকেই সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন না। এটা সুদৃঢ় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে এ ক্ষেত্রে ভালো করার উপায় হলো নিজেকে কাল্পনিক শিক্ষক বানিয়ে মনে মনে অনুশীলন করা। আপনি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান তা সম্পর্কে আগে থেকেই ভালোভাবে জেনে নিয়ে তা মনে মনে বক্তৃতা দেওয়ার প্রাকটিস বা অনুশীলন করতে পারেন। এধরনের অনুশীলন আপনার জ্ঞান এবং যোগাযোগ দক্ষতার মান ও পর্যায়কে অনেক বাড়িয়ে দেবে। আপনার যদি এই প্রস্তুতি থাকে তাহলে দেখবেন আপনি যখন কোনো কিছুর জন্য ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকার দিতে যাবেন তখন আপনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকতে পারবেন এবং প্রশ্নকর্তাদের মন জয় করতে পারবেন। কিন্তু আপনার কথা বলার অভ্যাস বা অনুশীলন না থাকে তাহলে আপনি অনেক জানা বিষয়ও বলতে ভুল করবেন।

অনুশীলন না থাকলে ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পর আপনার এমন কিছু মনে পড়বে যা বলা বা করা জরুরি ছিল, কিন্তু প্রাকটিসের অভাবে আপনি সেগুলো ভুলে গেছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে আপনাকে আগে থেকেই অনুশীলন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয়  সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন যাদের বলার ধরণ সুন্দর আপনি তাদের অনুসরণ করতে পারেন। যেকোনো গণমাধ্যমে তথা ইন্টারনেটে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতা শুনতে পারেন। তাদের বলার ধরণ ও অঙ্গভঙ্গি থেকে শিখতে পারেন। তাদের শব্দচয়ন ও উচ্চারণ খেয়াল করবেন। এর ফলে আপনার মধ্যেও আস্তে আস্তে এই দক্ষতা গড়ে উঠবে। মনে রাখবেন ভাষার সুন্দর প্রয়োগ আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়। যোগাযোগ-দক্ষতার কৌশল আয়ত্তের জন্য আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীদের পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি যে ক্ষেত্রে কাজ করতে চান তা সম্পর্কে কী কী যোগাযোগ–দক্ষতা প্রয়োজন, তা জানতে পরামর্শ নিন। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য কোচ বা মেন্টর নির্বাচন করে তার কাছ থেকেও হাতে–কলমে শেখার চেষ্টা করতে পারেন।

যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশি বেশি পড়া বা লেখালেখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা অনেক বেশি জানেন কিন্তু লেখার অভ্যাস নেই। লেখালেখির অভ্যাসটা আপনাকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে যাবে। লেখালেখি করতে গিয়ে দেখবেন লেখার সময় আপনার চিন্তার সাথে লেখার বক্তব্যের অনেক কিছুই মিলছে না, তখন  আপনি বুঝতে পারবেন এতদিন কেমন জানি ভাসা ভাসা জ্ঞান ছিল আপনার। এ অবস্থায় আপনি লেখাকে পরিপূর্ণতা দিতে আরও বেশি পড়াশোনা করতে বাধ্য হবেন। এর ফলে আপনার লেখার মানের সঙ্গে আপনার জ্ঞানও বাড়বে। আর মনে রাখবেন, কথা বলার সময় বা লেখালেখির সময় অবশ্যই তা সহজভাষায় বলবেন বা লিখবেন। সবসময় সহজ ভাষায় অন্যদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ