ফুলপরীকে র্যাগিং এর ঘটনা
'ছাত্রলীগের এ কর্মকাণ্ড চরম নিন্দনীয়'
বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নবিন ছাত্রী ফুলপরীকে অত্যন্ত নির্মমভাবে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রী নির্যাতন করেছেন যে বিষয়টি সম্প্রতি ছিল টক অব দ্যা কান্ট্রি। সেই নিষ্ঠুর বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান বললেন, ঘটনাটি চরম নিন্দনীয়। আর এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার হবে বলে আমি মনে করি না।
তিনি আরও বললেন, ছাত্রলীগ তাদের মাদার সংগঠনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এধরনের ঘটনা ঘটাতে পারছে।
পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম। উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
জনাব ইলিয়াস খান রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
রেডিও তেহরান: জনাব, ইলিয়াস খান সম্প্রতি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রীকে অত্যন্ত নির্মমভাবে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রী নির্যাতন করেছেন এবং এ নিয়ে তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে। ঘটনাটিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
ইলিয়াস খান: দেখুন, ঘটনাটি চরম নিন্দনীয়। তবে ভালো দিক হচ্ছে সেই ছাত্রীদের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু আপনি লক্ষ্য করবেন এটি যখন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সেদিনই দেশের অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলে না যাওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্তৃক একজন প্রহৃত হয়েছেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন -ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে যৌন নিগ্রহসহ জীবননাশের হুমকি পেয়েছেন। এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এসব ঘটনার সবগুলো পত্রিকাতেও আসে না কারণ অনেক ছাত্রী এসব ঘটনা হাইড করতে চান, প্রকাশ্যে আনতে চান না। সারা দেশব্যাপী নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বলা চলে সারাদেশব্যাপী ছাত্র লীগ এমনটি করছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের পক্ষে তাদের অবস্থান নেয়ার কথা সেখানে তারা ছাত্রদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করছে।
রেডিও তেহরান: তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলেও আপনি কি মনে করেন দোষীরা তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তির আওতায় আসবে?
ইলিয়াস খান: আমি এটি মনে করি না। কারণ ছাত্রলীগ কিংবা এখন যেটি সরকারি ছাত্রসংগঠন তারা সরকারের লেঠেল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। তারা যা করছে তাতে নেতাদের একধরনের অনুমোদন আছে বলে আমি মনে করি। তাছাড়া তাদের মাদার সংগঠনটির কাছ থেকে সমর্থন পায় বলেও মনে করি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন। আর যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে তারা তো সেই রাজনৈতিক দলেরই ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী। আর প্রথমে আমরা দেখলাম হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। তো এই সিট বাতিল তাদের শাস্তি! পরে অবশ্য অস্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও বড় শাস্তি তো হওয়া দরকার। সেগুলো কিন্তু হচ্ছে। তাছাড়া একাডেমিক পরিবেশও বিভিন্নভাবে নষ্ট হচ্ছে। সেসবের তেমন কোনো শাস্তি হচ্ছে না। সুতরাং আপনি যে প্রশ্নটি করলেন যে আদৌ বিচার ঠিকঠাকমতো হবে কি না? আমি একদমই সে ব্যাপারে আশাবাদী না। কারণ অতীতেও তারা এ ধরনের নানা কর্মকাণ্ড করে পার পেয়ে গেছে। আর এরা দেশের ছাত্র সমাজের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
রেডিও তেহরান: শুধু কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট থেকে শুরু করে দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রলীগ এই ধরনের নির্যাতনের সাথে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় নানা ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দায় কতটুকু?
ইলিয়াস খান: দেখুন, এটি পুরোটাই আওয়ামী লীগের দায়-দায়িত্ব। এই কারণে তারা যে অপরাধমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে আমরা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখে থাকি। কিন্তু সেইসব অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কি কারও হয়েছে? হয় নি কিন্তু! আর তারা এটি করছে কিন্তু তাদের মাদার সংগঠন যেটি এখন বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে বলে আমি মনে করি-তাদের সমর্থনে। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে এই অর্থে যে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। আর তারা ছাত্রলীগকে আশ্রয় প্রশয় দিচ্ছে বলেই আজ তারা এগুলো করতে সুযোগ পাচ্ছে। আপনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমরা যখন ছিলাম তখন দেখেছি সকল সংগঠনের কিন্তু একধরনের তৎপরতা ছিল। কিন্তু এখন খুব মোটা দাগে বললে-বলা যায় যে, পুরো দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাম রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সেখানে হলগুলোতে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কেউ কথা বলতে পারে না বা থাকতে পারে না এমনকি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে না। আপনি দেখবেন গত কয়েকদিন আগে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন-ছাত্র অধিকার পরিষদ তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু ছাত্রলীগ সেটি করতে দেয়নি। আর নিঃশসন্দেহে আমি মনে করি এটা আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে এটা করছে। আর তারা যত অপরাধই করুক না কেন পার পেয়ে যাচ্ছে।
রেডিও তেহরান: ছাত্রলীগের এই ধরনের নেতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে পরিষ্কার হয় যে, ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতি কোনমতেই এখন আর সঠিক পথে নেই। অনেকেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তুলে থাকেন। আপনার কি মনে হয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালু থাকা উচিত?
ইলিয়াস খান: সঠিক পথে নেই বলে যা আপনি বললেন তার সাথে পুরোপুরি আমি একমত। কারণ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পরই তারা এই তৎপরতা শুরু করেছিল। ছাত্রলীগ ডাকসুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছিল। সেই যে তারা শুরু করেছিল সেটি অব্যাহত রেখেছে এবং এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি বলব- যে মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি সংশোধন করা উচিত, সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত, সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শুধু বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই না সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন আছে। সবার ক্ষেত্রেই এই উদ্যোগ নেয়া উচিত। ছাত্র রাজনীতি হবে শুধু ছাত্রদের কল্যানের জন্য। আর সেটিই যাতে হয় সেরকম ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
তো জনাব ইলিয়াস বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণে একজন নবীন ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে আলাপনে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ইলিয়াস খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১২
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।