এপ্রিল ২৪, ২০২৩ ১৮:৫৪ Asia/Dhaka

মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।

এইসব পবিত্র নাম কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বিচিত্রময় এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা বিপুল সংখ্যক এইসব নামের প্রকাশ এবং ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর।

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও একটি নাম বুরহান بُرْهَان। মহান আল্লাহর বিশেষ ঔজ্জ্বল্য ও গুণ প্রকাশক এই নামের অর্থ প্রমাণ তথা যিনি নিজেই নিজ অস্তিত্বের প্রমাণ। বুরহান শব্দের আভিধানিক অর্থ ঔজ্জ্বল্য, শুভ্রতা ইত্যাদি। যা অস্পষ্টতা বা অন্ধকার বা অনুজ্জ্বল বিষয়কে উজ্জ্বল বা শুভ্র তথা সুস্পষ্ট করে দেয় তা-ই বুরহান তথা প্রমাণ। তবে যুক্তিবিদ্যায় বুরহান বলতে সুনিশ্চিত যুক্তি ও সুদৃঢ়- সুপ্রতিষ্ঠিত প্রমাণকেই বোঝানো হয়। তাই বুরহান বাস্তবতা হতে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়।  অন্য কথায় বুরহান এমন অকাট্য প্রমাণ ও যুক্তি তুলে ধরেন যে তা সবাই সসম্মানে মেনে নিতে বাধ্য হয়। বুরহান নিজেই উজ্জ্বল ও অন্যদেরও ঔজ্জ্বল্য বা স্পষ্টতা দান করেন।

মহান আল্লাহ নিজেই নিজের অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ

মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সত্যতার অজস্র প্রমাণ ও যুক্তি রয়েছে। কার্যকারণের যুক্তি এসবের অন্যতম। এ যুক্তির রূপরেখার দৃষ্টান্ত  হিসেবে বলা যায় আমরা তথা মানুষেরা কি কারণে সৃষ্ট হয়েছি?  প্রকৃতি? বাবা-মা? –এসব তথা 'প্রকৃতি' বা 'বাবা-মা' আমাদের অস্তিত্বের প্রকৃত যুক্তি বা কারণ নয়। কারণ বাবা-মা ও প্রকৃতি –এসবই স্বাধীন অস্তিত্ব নয় বরং নির্ভরশীল অস্তিত্ব এবং তারা অনস্তিত্ব থেকেই অস্তিত্বে এসেছে। এভাবে আমরা যদি আমাদের সৃষ্টির পেছনে সক্রিয় অস্তিত্বগুলোর ধারাক্রম অনুসরণ করতে থাকি তাহলে এক সময় কেবল সৃষ্টি বিষয়ক কাজের কারণকেই খুঁজে পাওয়া যাবে কাজের ফলকে আর দেখা যাবে না। আর সেই মহাকারণ তথা কার্যকারণই হলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ।

যদিও আমরা জানি যে প্রকৃতির অনেক কিছুই মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে কিন্তু খোদ মহান আল্লাহ নিজেই নিজের অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ। মহান আল্লাহ সত্তাগতভাবে প্রকাশক বা জাহির বলে তিনি বিশ্বজগতকে প্রকাশ করেন  এবং নুর হিসেবেও গোটা জগতকে করেন আলোকিত, তদ্রূপ তিনি নিজেই নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী-আ. দোয়া-ই সাব'হ্ নামক বিখ্যাত দোয়ায় মহান আল্লাহ'র প্রশংসা করে বলেছেন, হে তুমি যে নিজেই নিজের দলিল বা প্রমাণ!-এর অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোনো কিছু আল্লাহর অস্তিত্বের যুক্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রে তুচ্ছ বা অনুপযুক্ত। হযরত ইমাম হুসাইন-আ.ও দোয়া-ই আরাফাহ নামে খ্যাত দোয়ায় বলেছেন, যারা নিজ নিজ জীবন ও অস্তিত্বের বিষয়ে আপনার মুখাপেক্ষী তারা কিভাবে আপনার জন্য যুক্তি-প্রমাণ বা সাক্ষ্য হতে পারে? অন্য কথায় যারা স্বাধীন ও স্বনির্ভর অস্তিত্ব নয় তারা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ বা বুরহান হতে পারে না। মানুষ তখনই কোনো বস্তুকে দেখে যখন ওই বস্তু থেকে আলো এসে চোখের ওপর তার প্রতিফলন ঘটায়। অন্য কথায় বস্তু থেকে আলোটা না আসলে আমরা ওই বস্তুকে দেখতে পেতাম না। একই কারণে আমরা নিরেট অন্ধকারে কিছু দেখতে পাই না।  

হে মানবকুল! তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে  প্রমাণ বা সনদ পৌঁছে গেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি স্পষ্টকারী আলো অবতীর্ণ করেছি

পবিত্র কুরআনে বুরহান শব্দ নানা রূপে ৮ বার এসেছে। অবশ্য বুরহান শব্দের অর্থের কাছাকাছি অর্থে আয়াত, বাইয়্যিনা ও হুজ্জাত শব্দও এসেছে সর্বোত্তম ও অবিকৃত এই খোদায়ি মহাগ্রন্থে। পবিত্র কুরআন নিজেই আলো, প্রমাণ-জ্ঞাপক মহাগ্রন্থ এবং সব ধরনের সন্দেহ থেকে মুক্ত, আর সন্দেহ দূরকারী ও সব বিষয়কে স্পষ্টকারী। তাই পবিত্র কুরআনও মহান আল্লাহর বুরহান হওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুরা নিসার ১৭৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে মানবকুল! তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে  প্রমাণ বা সনদ পৌঁছে গেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি স্পষ্টকারী আলো অবতীর্ণ করেছি।– পবিত্র কুরআন মৌলিক বিশ্বাসগত নানা বিষয়ে যেমন, মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সত্যতা, একত্ববাদ, পরকাল এবং ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রমাণ বা যুক্তি তুলে ধরেছে। এ ছাড়াও পবিত্র কুরআন নানা বিষয়ে সবাইকে চিন্তাভাবনা করার, যুক্তি ও মুক্ত-বুদ্ধি প্রয়োগের, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার ও অন্যদের ভুল প্রথা বা অযৌক্তিক ভাবনার অন্ধ অনুসরণ না করার আহ্বান জানায়। 

অবশ্য পবিত্র কুরআনের কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে মহানবীর (সা) পবিত্র অস্তিত্ব হচ্ছে বুরহান। প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ, মুফাসসির ও ফকিহ ইমাম ফাখরে রাজি (র.) লিখেছেন, হযরত মুহাম্মাদ (সা) বুরহানের মূল বা প্রধান দৃষ্টান্ত। কারণ মহানবীর দায়িত্বই ছিল সত্যকে প্রমাণ করা ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে বাতিল করে দেয়া।  

পবিত্র কুরআনও বুরহান হিসেবে প্রচার বা দাওয়াতি কাজে বুরহান তথা যুক্তি প্রয়োগ করতে মহানবীকে পরামর্শ দিয়েছে। বিভিন্ন বিষয় ও নীতির ক্ষেত্রে বিরোধী মতাদর্শ বা ধর্মের দাবিদারদেরকেও যুক্তি-প্রমাণ দেখাতে বলে পবিত্র কুরআন। যুক্তি ও প্রমাণহীন কোনো দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও উল্লেখ করে আসমানি এই মহাগ্রন্থ। বেহেশত কেবল ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারিত বলে যারা দাবি করে তাদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন: তোমরা যদি সত্য বলে থাকো তাহলে তোমাদের এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ দেখাও।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


 

ট্যাগ