সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
সুন্দর জীবন-পর্ব ৩৬
শব্দ ও বাক্য লিখে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা মানেই লিখিত যোগাযোগ। তবে যার উদ্দেশ্যে শব্দ ও বাক্য লেখা হলো তার কাছে তা পৌঁছালো কিনা অথবা সে ঐসব শব্দ ও বাক্য বুঝল কিনা তা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কারো সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছেন তা তখন এই দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেন। তবে লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে লেখার দক্ষতা থাকা জরুরি।
যেনতেন লিখে দিলেইতো আর হবে না। লেখাটা হতে হবে বোধগম্য। আপনি যে বার্তা দিতে চাইছেন বা যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে চাইছেন তা লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে। চিঠিই হোক আর অন্য যা কিছুই হোক, তা লেখার আগে একটু ভেবে নিতে হবে। এমনভাবে লিখতে হবে যাতে অপর পক্ষ তা পড়ে আপনার উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন। আপনি একটি বাক্য থেকে শুরু করে হাজার হাজার বাক্য লিখে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
তবে আপনি যখন কাউকে নির্দেশনামূলক জরুরি বার্তা দিচ্ছেন এবং জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশের বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছেন তখন অবশ্যই তা সংক্ষিপ্ত হওয়া জরুরি। অর্থাৎ খুব অল্প কথায় আপনার উদ্দেশ্যটা তুলে ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে বার্তাটি দীর্ঘ হলে তা পড়তে গিয়ে পাঠকের সময় ক্ষেপণ হবে এবং নির্দেশ বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে। কিন্তু আপনি যদি কাউকে জটিল কোনো বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে বড় লেখা লিখতেই হবে। আপনি যখন কোনো গণমাধ্যমে লেখা প্রকাশ করছেন তখনও আপনি পাঠকবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছেন। এর ফলে আপনাকে এ ধরণের লেখার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে, স্পষ্ট করে লিখতে হবে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়। সবার জন্য বোধগম্য শব্দ ও বাক্য লিখতে হবে। যেকোনো বিষয়ে লেখার প্রথম ধাপেই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। লেখার উদ্দেশ্য কী এবং কোন কোন তথ্য সংযোজন করতে হবে তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। এভাবে পরের ধাপে যেতে হবে।
আপনার লেখাটি কোন আঙ্গিকে হবে, কীভাবে লিখতে হবে, কী কী তথ্য থাকতে হবে তা নির্ধারণ করে একটি খসড়া তৈরি করতে হবে। খসড়া তৈরি হলে তা কয়েক বার পড়ে অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। যে লেখাটি আপনি অন্যকে দিতে চাইছেন বা প্রকাশ করতে চাইছে তার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ও কার্যকর যোগাযোগ স্থাপিত হবে কি না, বানান ঠিক আছে কি না, ব্যাকরণ ঠিক হলো কি না, কোনো তথ্য বাদ পড়ল কি না- এসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং এরপর লেখাটিকে ভালোভাবে পড়ে নিজে নিজেই সম্পাদনা করতে হবে। যেকোনো বিষয়ে লেখার আগে অবশ্যই যার বা যাদের উদ্দেশ্যে লিখছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞান ও সচেতনতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা জরুরি এবং এসবের ভিত্তিতেই লেখাটা সাজানো উচিত। আপনি যে বিষয়ে লিখছেন সে বিষয়টি সম্পর্কে যদি পাঠকের ধারণা না থাকে তাহলে যোগাযোগ সফল হবে না। সাধারণত যাদের অক্ষরজ্ঞান আছে তারা লেখার মাধ্যমে কম-বেশি যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন। তবে একটি রোগ আছে যা মানুষের লেখার শক্তিকে কেড়ে নিতে পারে অথবা দুর্বল করতে পারে। যেহেতু লেখার দক্ষতা নিয়ে কথা বলছি আমরা সে কারণে এই অনুষ্ঠানে এই রোগের বিষয়ে একটু ধারণা দিয়ে রাখতে চাই।
কখনো কখনো দেখা যায় ছোট ছেলে বা মেয়ের সব কিছু একদম স্বাভাবিক। কোথাও কোনও ছন্দপতন নেই। স্কুলে যাচ্ছে, খেলছে ও দুষ্টুমি করছে কিন্তু যখনই কিছু লিখতে হচ্ছে তখনই কোথা থেকে একরাশ জড়তা এসে ঘিরে ধরছে তাকে। পেনসিল ধরতে সমস্যা হয়, অক্ষরগুলো কেমন যেন উল্টোপাল্টা হচ্ছে, বানানও ভুল হয়। বাবা-মা ভাবছেন পড়াশোনায় অনীহা বা দুষ্টুমি করছে। অথচ সে কিন্তু অন্যান্য পড়া মুখস্থ বলতে পারছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় ডিসগ্রাফিয়া। এটা একটা রোগ। এ রোগে আক্রান্তরা দিক-নির্দেশনা শুনে সেই আকৃতিটা ভেবে তা সহজেই লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে না। সাধারণত বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো, সে যে কাজটা পারে না, সেটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ডিসগ্রাফিয়া আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও তাই। এ কারণে এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা লেখার প্রসঙ্গ এলেই নার্ভাস হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে বকুনি দেওয়া যাবে না। যে কারণে শিশুদের বুঝিয়ে বা নানা কৌশলে লেখাতে হবে।
বড়দের এটা বুঝতে হবে যে, সামান্য একটা কিছু লিখতে গেলেও এ ধরণের সমস্যার শিকার মানুষের মাথায় অনেক চাপ পড়ে, এ কারণে তারা এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। এ ধরণের ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের মতো লিখিত যোগাযোগে অতটা দক্ষ হবে না, এটা মেনে নিতে হবে। শিশুকালেই এই সমস্যার চিকিৎসা করা হলে তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাইহোক আমরা আবারও লেখার দক্ষতা সংক্রান্ত আলোচনায় ফিরে আসি। লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই যা লিখছেন তা অন্যকে দেওয়ার আগে অথবা কোথাও পাঠানোর আগে অন্তত একবার পড়ে দেখবেন। সম্ভব হলে শব্দ করে লেখাটি পড়বেন, তাহলে আপনি লেখার ত্রুটি সহজে ধরতে পারবেন। বাক্যগুলো বেশি বড় হয়ে থাকলে প্রয়োজনে তা ছোট করে একাধিক বাক্যে তুলে ধরুন। লেখার সময় অন্তত একবার হলেও নিজেকে ঐ লেখার পাঠকের স্থানে বসিয়ে ভেবে দেখুন, লেখাটি জটিল মনে হচ্ছে কিনা।
আপনি যখন অনেক মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু লিখবেন তখন অবশ্যই সবচেয়ে সহজ ভাষায় লিখার চেষ্টা করুন, কারণ আপনার পাঠকদের মধ্যে সবাই সমান শিক্ষিত বা যোগ্যতাসম্পন্ন নন এবং স্বাভাবিকভাবেই সবাই সব কিছু সম্পর্কে সমান জ্ঞান ও ধারণা রাখেন না। এ কারণে সবাই যাতে বুঝতে পারে সেভাবেই লিখতে হবে। আপনার লক্ষ্য হবে সবার কাছে আপনার বার্তাটিকে বোধগম্য করে তুলে ধরা।
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।