জুন ১৫, ২০২৩ ১৭:৪৮ Asia/Dhaka

একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা মুরব্বিরা তথা দাদা ও দাদীসহ পরিবারের বহু সদস্য একই বাসভবনে বসবাস করতেন।

সে সময় জীবন ছিল অনেক বেশি মধুর ও আন্তরিকতায় ভরপুর। সে সময় পরিবারের সদস্যরা একের বিপদে অন্যকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। পরস্পরের প্রতি ছিল ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। দুর্যোগ ও সংকটকালে এমন পরিবারের সবাই ধৈর্য ধারণ করতেন। পরিবারের সদস্যরা এইসব শিক্ষা অর্জন করতেন মা-বাবা ও দাদা-দাদির কাছে। পরিবারের প্রতি স্নেহশীল এই ব্যক্তিরা ছিলেন বরকত, সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান উৎস। নিকট অতীতেও এমন পরিবারগুলো টিকে ছিল খুব মজবুতভাবে।কিন্তু আজকাল অনেকেই বৃদ্ধ বাবা মাকে রেখে আসেন আশ্রমে বা কোনো নির্জন বাসভবনে। এ ধরনের আশ্রম বা বাসভবনে অতি-বয়স্ক মুরব্বিরা তেমন একটা আনন্দ অনুভব করেন না। বরং পরিবারের সবার সঙ্গে একই বাসভবনে থাকার যে গভীর আনন্দ তা অনেক গুণ বেশি। ফলে এ ধরনের আশ্রমে মুরব্বিরা ক্রমেই হতাশ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অথচ ইসলামের নৈতিক বিধান হল বয়স্ক বাবা-মাকে গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা নিয়ে সেবা যত্ন দেয়া। বিষয়টি সন্তানদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।

পবিত্র কুরআনে সুরা আসরার ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাঁদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাঁদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।  তাঁদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেভাবে তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। -

বাবা মায়েরা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই এ সময় তাদের বেশি বেশি সেবা যত্ন দেয়া জরুরি এবং তাদেরকে মানসিকভাবেও প্রফুল্ল রাখা উচিত। সন্তানদের মনে রাখা উচিত তারাও একদিন বার্ধক্যের শিকার হবেন। অবশ্য অনেকে বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেন।  সন্তানদের এ কথা মনে রাখা দরকার তাদের আজকের সাফল্য বা ভালো অবস্থার পেছনে রয়েছে বাবা-মা ও মুরব্বিদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট ও ধৈর্য। তাই এখনও নানা কাজে তাঁদের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং মতভেদের বিষয়গুলোতে তাঁদেরকেই বিচারক হিসেবে মেনে নেয়া উচিত।  কখনও কখনও বড়দের একটি মাত্র বাক্য বা কথা পারিবারিক হানাহানি বা হিংসা-বিদ্বেষের আগুনকে নিভিয়ে দিতে পারে। তাই পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা ও দাদা-দাদীর উপস্থিতি সত্যিকার অর্থেই এক বড় সম্পদ!

পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা ও দাদা-দাদীর উপস্থিতি সত্যিকার অর্থেই এক বড় সম্পদ

 

ইসলাম ধর্ম  বয়স্ক অমুসলিম মা-বাবাকেও সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দেখাতে বলে ও তাদের যত্ন নিতে বলে। কেবল ইবাদত বা ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের নির্দেশ এড়িয়ে চলতে হবে। এক নওমসুলিম যুবক একবার মহানবীর (সা) কাছে এসে বললেন, আমার মা খুবই বৃদ্ধা ও কাজ কর্ম করতে অক্ষম। তিনি  নিজের কাজের জন্য আমার মুখাপেক্ষী। কিন্তু তিনি কিছুটা বদমেজাজি এবং এখনও মুসলমান হননি! এই মায়ের ব্যাপারে আমার করণীয় কি? মহানবী (সা) তাকে ধৈর্য ধারণ করতে বললেন এবং যত বেশি সম্ভব তাঁর সঙ্গে সদাচরণ করও তাঁর সেবা করার পরামর্শও দিলেন।  যুবক ছেলেটি মহানবীর পরামর্শ অনুযায়ী মাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও সেবা যত্ন দিয়ে যাচ্ছিলেন। ছেলের এই মহানুভবতার প্রভাব পড়ল মায়ের মধ্যে। একদিন সেই মা ছেলেকে বললেন: আমাকে ইসলামের নবীর কাছে নিয়ে যাও। যে তোমাকে এতো ভালো ব্যবহার ও আচরণ শেখালো তাঁকে একবার খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। ওই বৃদ্ধা মহানবীর কাছে গিয়ে তাঁর উন্নত আচার-আচরণ ও আলোকিত শিক্ষার প্রভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মহানবী (সা) তখন ওই যুবককে বললেন,  দেখলে তো! তোমার ধৈর্য ধারণের কারণে তোমার মা আজ ইমান এনেছেন।- পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করা ও পরিবারের সদস্যদের খুশি রাখার রহস্যও এই ঘটনার অন্যতম বড় শিক্ষা।  

বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইসলামের অন্যতম সেরা নৈতিক মূল্যবোধ। পাশ্চাত্যে দেখা যায় অনেক সন্তান পিতার লাশ বিক্রি করে দিচ্ছেন হাসপাতালের গবেষণাগারের কাছে! আবার পাশ্চাত্যের কেউ কেউ খুব দ্রুত পিতার লাশকে বাগান বা কৃষিক্ষেত্রের সারে পরিণত করতে আগ্রহী! অথচ মহানবী (সা) বলেছেন, বৃদ্ধ মুসলমানদের সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার সমতুল্য! তিনি আরও বলেছেন, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা মা-বাবার দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকানোর মধ্যেও রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনেক সাওয়াব! মহানবী (সা) আরও বলেছেন, যে বড়দের সম্মান ও সমাদর করে না এবং শিশুদের প্রতি দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল নয় তারা আমাদের কেউ নয় তথা মুসলিম নয়।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ