আমাদেরকে আবার বড় হতে হবে: মেলোনি ও ট্রাম্পের ঔপনিবেশিক বিভ্রম
(last modified Tue, 29 Apr 2025 15:44:25 GMT )
এপ্রিল ২৯, ২০২৫ ২১:৪৪ Asia/Dhaka
  • ট্রাম্প ও মেলোনি
    ট্রাম্প ও মেলোনি

পার্সটুডে- বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প এবং মেলোনি ঐসব ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন যারা পশ্চিমা শক্তির পতনের আশঙ্কা করছেন এবং ‌এ জন্য ভয় পাচ্ছেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তার সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় পাশ্চাত্যকে আবারও বড় হিসেবে তুলে ধরার অন্তঃসারশূন্য স্লোগান দিয়েছেন।

এই স্লোগানটি ট্রাম্পের বিখ্যাত "মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন" ক্যাম্পেইনের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই স্লোগানটি ভবিষ্যতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নয়, বরং সহিংস পশ্চিমা আধিপত্যের যুগে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত। সেটি ছিল এমন এক যুগ যা উপনিবেশবাদ, ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী সম্পদ লুণ্ঠনের যুগ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।

পশ্চিমাদের শ্রেষ্ঠত্বের স্লোগান: অপরাধ ও শোষণের অপর পিঠ

পাশ্চাত্যের নেতারা যখন অতীতের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেন, তখন তাদের মনে কোন চিত্রটি থাকে? তারা কি সেই একই সময়ের কথা বলছেন যখন ইউরোপ ও আমেরিকা হত্যা ও দাসত্বের মাধ্যমে মহাদেশগুলোকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব কি আদিবাসী মার্কিনীদের গণহত্যা, চীনে আফিম যুদ্ধ এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ঔপনিবেশিক যাতনা?

পশ্চিমা ইতিহাস রক্তের ইতিহাস: বেলজিয়ামের কঙ্গো গণহত্যা থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম, ইরাক এবং আফগানিস্তানে ধ্বংসাত্মক মার্কিন যুদ্ধ পর্যন্ত সবই মানুষ হত্যার নির্মম ঘটনায় পরিপূর্ণ। মেলোনি এবং ট্রাম্প কি তাদের সেই কথিত মহিমাই পুনরুদ্ধার করতে চান?

বর্তমান পাশ্চাত্য: আধিপত্যবাদের পতন এবং বহুমেরু কেন্দ্রিক বিশ্বের ভয়

ট্রাম্প এবং মেলোনি এমন সব ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন যারা পশ্চিমা শক্তির পতনকে ভয় পায়। চীনের উত্থান, ন্যাটোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রতিরোধ এবং গ্লোবাল সাউথের উত্থানের মধ্যদিয়ে পশ্চিমা আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এখন পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা বহুকেন্দ্রিক বিশ্বকে আলিঙ্গন করার পরিবর্তে সামরিকতন্ত্র, একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়ে কোনো মতে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

নিয়ম ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থা নাকি বলদর্পিতা?

পশ্চিমারা নিয়ম ও শৃঙ্খলাপূর্ণ বিশ্ব ব্যবস্থার দাবি করলেও বাস্তবে তাদের সব  পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে তাদের আধিপত্য গোটা বিশ্বের চাপিয়ে দেওয়া। আমেরিকা যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে উপেক্ষা করে, ইসরাইলি অপরাধকে ঢাকতে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কেবল আফ্রিকার ও রাশিয়ার নেতাদের বিচার করার চেষ্টা করে, তখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আন্তর্জাতিক আইন কেবল দুর্বলদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

গাজা সবার কাছে এই বাস্তবতা প্রকাশ করে দিয়েছে। পশ্চিমারা ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাকে সমর্থন করলেও এই দেশগুলাই আবার "মানবাধিকারের" অজুহাতে অন্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এই বাস্তবতা পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা স্পষ্ট করেছে। তাদের নীতি হলো- গণতন্ত্রের নামে আধিপত্য, স্বাধীনতার নামে শোষণ।

পশ্চিমারা কি সত্যিই 'বড়' হতে চায়?

যদি পশ্চিমারা সত্যিই বড় হতে চায়, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই অতীত অন্ধকার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে: নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধের পরিবর্তে  আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে মনোনিবেশ করুন। ঘাতকদের সমর্থন করার পরিবর্তে নিপীড়িত জাতির অধিকারকে সম্মান করতে হবে। যুদ্ধ ও সংঘাতের কূটনীতি এবং ন্যায় ও যুক্তিকে মেনে চলতে হবে। কিন্তু মেলোনি এবং ট্রাম্পের স্লোগানগুলো থেকে এটা স্পষ্ট, তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংস্কার নয় বরং গুণ্ডামির যুগে ফিরে যেতে চায়। তাদের ডিকশনারিতে পাশ্চাত্যকে বড় করে তোলা বলতে বিংশ শতাব্দীর সাম্রাজ্যবাদের দিকে প্রত্যাবর্তনকে বোঝায়- আর এটি এমন এক পথ যা কেবল বিশ্বকে স্থিতিশীল করার পরিবর্তে সংঘাত ও উত্তেজনার আগুনে ইন্ধন জোগায়।#

পার্সটুডে/এসএ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।