জুলাই ০৩, ২০২৩ ২৩:২০ Asia/Dhaka

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি নির্বাচন দেখেই এখনই বলা যাচ্ছে না এই নির্বাচন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পথ দেখাচ্ছে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমার যেটা মনে হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ সামনে আরও সংঘাতময় ও সহিংস হয়ে উঠবে। রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

বিশিষ্ট এই সাংবাদিক আরও বলেন, আমরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর যেটি দেখতে পাই নির্বাচন করা এবং নির্বাচন প্রতিহত করা এই দোলাচলের মধ্যেই কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের প্রাণ যায় সম্পদহানি ঘটে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হয় এবং একটা সাংঘাতিক রকমের অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: বাংলাদেশে সম্প্রতি পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, পাঁচ সিটির ভোট জাতীয় নির্বাচনকে উৎসাহিত করবে। কীভাবে দেখবেন তার এই বক্তব্যকে?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: দেখুন, প্রথমেই বলে রাখছি পাঁচটি সিটি নির্বাচন হয়েছে কিন্তু যেহেতু বিরোধী দল ছিল না ফলে যে পরিমাণ ভোটার হওয়ার কথা সেটা কিন্তু এই নির্বাচনে হয়নি। ভোটারদের উৎসাহ তেমন ছিলনা, তাছাড়া ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা –সেসব কিন্তু হয়নি। গড়ে ৫০ শতাংশ বলা যেতে পারে কিন্তু গত ৫ বছর আগে যে সিটি নির্বাচন হয়েছিল সেখানে কিন্তু অনেক বেশি ভোটার এসেছিল। আর সেই জায়গা থেকে দেখলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যে প্রত্যাশা সেটির সাথে বাস্তবের মিল পাচ্ছিনে। তবে একটা কথা ঠিক যে পাঁচটি নির্বাচনই সুষ্ঠু  ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা রেখেছে। এই ধারা রাখতে পারলে হয়তো আগামী নির্বাচনে এক ধরনের আস্থা কিছুটা হলেও আসতে পারে। কিন্তু নির্বাচন তো শুধুমাত্র কমিশনের বিষয় নয় নির্বাচন তো একটি রাজনৈতিক বিষয়। সুতরাং সবদলের অংশগ্রহণের জন্য যে রাজনৈতিক জায়গাটা প্রয়োজন সেটি রাজনীতিবিদদের ঠিক করতে হবে এবং দলগুলোকে ঠিক করতে হবে।

রেডিও তেহরান:  পাঁচ সিটির মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এটাকে কী ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা হিসেবে দেখবেন আপনি?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: না, এখানে জনপ্রিয়তা হিসেবে দেখা যাবে না এই কারণে যে এবারের নির্বাচনে নৌকার যে চির প্রতিদন্দ্বী ধানের শীষ ছিল না। এমনকি গাজীপুরেও কিন্তু নৌকা জিততে পারেনি। হেরে গেছে একজন সাধারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। সুতরাং পাঁচটি সিটিতেই নৌকা জিতেছে এটা বলা যাবে না বা আওয়ামী লীগ জিতেছে সেকথা বলা যাবে না। বাকি যে চারটিতে জিতেছে এরমধ্যে রাজশাহীতে কোনো প্রতিদন্দ্বিতা হয়নি। উনি তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে নিয়মরক্ষার নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন। প্রতিযোগিতা ছিল কিন্তু প্রতিদন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়নি।

রেডিও তেহরান:  সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোট দেয়ার বিষয়টি উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। যারা রাজনীতিবিদ, সম্ভাব্য প্রার্থী এবং ভোটাররা- সবার মধ্যে একটা ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা সৃষ্টি হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময় নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। তাহলে ভোট দেয়ার বিষয়ে উন্নয়নের প্রশ্ন কেন আসছে?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: না আমার মনে হয় এখানে একটা হিসাব নিকাশের ব্যাপার আছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেকথা বলেছেন, সেখানে দেখবেন কিছু কিছু উপনির্বাচনে ভোট কম পড়েছে। এমনকি সেটা ৫,১০,১৫, ২০,২২ কিংবা ২৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। সেই তুলনায় সিটি নির্বাচনের ভোটারের উপস্থিতি শতকরা ৫০ ভাগ হওয়াকে উনি উন্নতি হিসেবে দেখছেন। কিন্তু পার্থক্য হলো যদি শুধু মেয়র নির্বাচন হতো কাউন্সিলররা যদি নির্বাচন না করতেন তাহলে এখানেও কিন্তু ভোট কমে যেত। কাউন্সিলরা নিজেদের স্বার্থে ভোটারদের টেনে এনেছেন কেন্দ্রে। তানাহলে ভোটারের শতকরা ভাগ কমে যেত। তো আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী যে প্রেক্ষাপট থেকে বলেছেন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে জায়গা থেকে বলেছেন সে দুটি আলাদা পরিপ্রেক্ষিত। দুজন দুজনের জায়গা থেকে বলেছেন।

রেডিও তেহরান: সিইসি বলেছেন, ‘আমরা যে কারণে সন্তুষ্ট বোধ করছি সেটা হচ্ছে, কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তিনি একই রকম আশা করেছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। আপনার কী মনে হয়?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: দেখুন, আমরা প্রত্যাশা করতে চাই এটাই যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু। মানুষ সুন্দর করে আন্তরিকতার সাথে ভোট দেবে। ব্যবস্থাপনা ভালো থাকবে, নির্ভয়ে ভোট দেবে, যার যার ভোট সে সে দিতে পারবে এটা একটা প্রত্যাশার জায়গা। তাছাড়া আমাদের প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী সেই পরিবেশটা দেবে, রাজনৈতিক দলগুলো সেই পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এসবই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবতা হলো ৫ টি সিটি নির্বাচন ভালো হওয়াতে আমরা খুশি। কিন্তু আবারও সেই বিষয়টি বলতে চাই যে এখানে প্রতিদন্দ্বিতা ছিল না।

বাংলাদেশের সমস্যা হলো নির্বাচনের আগে থেকেই বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা দেখি প্রাক নির্বাচনি সন্ত্রাস-সহিংসতা বেড়ে যায়, উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং সেটা নির্বাচন পরবর্তী সহিসংতা পর্যন্ত চলতে থাকে। নির্বাচনের অনেকগুলো বিষয় আছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে জায়গাগুলো হবে সেটির প্রথম বিষয়টি হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে? পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হয়ে ওঠে কি না সেটা আমাদের ভাবনার ব্যাপার আছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে সব দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং নির্বাচনের মাঠ যদি সুন্দর রাখতে হয় প্রশাসনকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের যে শক্ত সামর্থ্য প্রয়োজন সেটা কি নির্বাচন কমিশনের হাতে আছে? কারণ আমরা কাগজে কলমে বলি যে সবকিছু নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর যদি রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয় তখন কী পরিস্থিতি হবে! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে কী ধরনের পরিস্থিতি হবে! আসলে এতসহজ করে বলা যাবে না সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভালো হয়েছে বলে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব ভালো হবে। আমার মনে হয় অতি প্রত্যাশার জায়গা তৈরি হচ্ছে। প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি কিন্তু বাস্তবতার সাথে সেই প্রত্যাশা মিলবে কি না আমরা সেটা এখন বলতে পারিনে। ফলে আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ সামনে আরও সংঘাতময় ও সহিংস  হয়ে উঠবে। আমরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর যেটি দেখতে পাই নির্বাচন করা এবং নির্বাচন প্রতিহত করা এই দোলাচলের মধ্যেই কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের প্রাণ যায় সম্পদহানি ঘটে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হয় এবং একটা সাংঘাতিক রকমের অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সুতরাং এখনই বলা যাচ্ছে এই নির্বাচন সেই নির্বাচনকে পথ দেখাচ্ছে!

রেডিও তেহরান: তো জনাব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশের সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ইশতিয়াক রেজা: আপনাকেও ধন্যবাদ। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩

ট্যাগ