স্বাস্থকথা: ডায়াবেটিস-পর্ব ৪
'ডায়াবেটিসে হাইপোগ্লাইসেমিয়া জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ'
শ্রোতাবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ।
পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রোগ যে রোগটি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এখন মহামারি হয়ে উঠছে সেটি হচ্ছে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র। সারা বিশ্বে এই রোগটি এখন আতঙ্কের নাম হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। তো আশার কথা প্রায় ৭০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য এই রোগটি। তো বলাচলে আমাদের সবার ঘরে বসবাস করা এই ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ রোগটি নিয়ে একে একে তিনটি পর্বের আলোচনা শেষে আজ চতুর্থ পর্বের আলোচনায় যাব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকছেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুল।
রেডিও তেহরান: জনাব ডা. আবু কামরান রাহুল রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
রেডিও তেহরান: ডা. আবু কামরান রাহুল প্রতিটি রোগেরই একটা জরুরি অবস্থা থাকে। তো ডায়াবেটিস রোগের জরুরি অবস্থা কোনটি-যদি একটু বুঝিয়ে বলেন।
ডা. আবু কামরান রাহুল: ধন্যবাদ। কোন রুগের জরুরী অবস্থা বলতে বুঝায়, তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা না নিতে পারলে রুগী যেকোন সময় মৃত্যু ঝুকিতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ডায়াবেটিস এর জরুরি অবস্থা হলো:
১. হাইপোগ্লাইসেমিয়া
২. ডায়াবেটিক কিটো-এসিডোসিস
৩. হাইপারওসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট
৪. লেকটিক এসিডোসিস
যদি বিষয় গুলো সংক্ষেপে বলি, একটা হচ্ছে রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া আর আরেকটি হচ্ছে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া।
রেডিও তেহরান: ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আমরা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কথাটা শুনে থাকি। আসলে হাইপোগ্লাইসেমিয়াটা কি?
ডা. আবু কামরান রাহুল: হাইপোগ্লাইসেমিয়া : যদি কোন কারনে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ খুব কমে যায় অর্থাৎ ৩.৯ মিলি মোল/লিটার এর কম হয় তাহলে শরীরে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে যা জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলি নিম্নরূপ :
• অসুস্থ বোধ করা
•খুব বেশী খিদে পাওয়া
•বুক ধড়ফড় করা
•অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
•শরীর কাঁপতে থাকা
•শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
•অস্বাভাবিক আচরণ করা
•অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
কেন এবং কখন এই সব লক্ষণ দেখা দেয়:
•ঔষধের (ট্যাবলেট বা ইনসুলিন) পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হলে
•ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ একই মাপের না হলে
•বরাদ্দের চেয়ে খাবার খুব কম খেলে বা খেতে ভুলে গেলে
•ইনসুলিন নেয়ার পর খুব দেরী করে খাবার খেলে
•হঠাৎ বেশী ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করলে
•বমি বা পাতলা পায়খানার জন্য
•শর্করা অন্ত্রনালী হতে শোষণ না হলে
পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা, ডায়াবেটিস নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।
রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল, হাইপোগ্লাইসেমিয়া কি তা আপনি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। তো হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কি করা উচিত?
ডা. আবু কামরান রাহুল: হাইপোগ্লাইসেমিয়া সাধারণত গ্লুকোজ লেভেল এর উপর নির্ভর করে তার চিকিৎসা।
--প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া মাত্র রোগীকে চা-চামচের ৪ থেকে ৮ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খাইয়ে দিতে হবে।
--রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ার চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে হবে
-- ইনজেকশন না থাকলে কিছু গ্লুকোজ বা চিনি বা জেলী জিহবার নীচে বা গালের ভিতেরে দিয়ে রাখতে হবে।
--উন্নতি না হলে তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধের উপায়ঃ
-দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা যাবে না
-খালি পেটে হাঁটতে বের হওয়া যাবেনা
-ইনসুলিন নেবার ১৫-৩০ মিনিটের ভেতর খেয়ে ফেলতে হবে।
রেডিও তেহরান: ডা রাহুল চতুর্থ পর্বের আলোচনার শেষ দিকে এসে ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো যদি একটু বলেন। তারপর পঞ্চম পর্বে আমরা জটিলতা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে কথা বলব।
ডা. আবু কামরান রাহুল: ডায়াবেটিস রোগীর জটিলতা গুলো হচ্ছে:
১. স্ট্রোক এর ঝুকি স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ গুন বেড়ে যায়
২. হৃদরোগ এর ঝুকি ২-৩ গুন বেড়ে যায়
৩. চোখ অন্ধ হওয়ার ঝুকি ২৫ গুন বেড়ে যায়
৪. কিডনী বিকল বা অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা ৫ গুন বেড়ে যায়
৫. পা কাটা পড়া বা ডায়াবেটিক ফুট ডিজিজ ২০ গুন বেড়ে যায়
৬. ডায়াবেটিক নিউরপ্যাথি বা শরীরের স্নায়ু ক্ষয় হওয়া, যার ফলে হাত পায়ে জ্বালা-পোড়া, প্রদাহ এর সৃষ্টি হয়
৭. খুব ঘন ঘন ইনফেকশন হয় (যেমন- প্রশ্রাবে ইনফোকশন, ফুসফুসে, চামড়ায় ইনফেকশন)
রেডিও তেহরান: তো ডা.আবু কামরান রাহুল আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যেও ডায়াবেটিস নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনায় রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরকে সময় দেয়ার জন্য আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ডা. আবু কামরান রাহুল: আপনাকে এবং রেডিও তেহরানের বিশ্বজুড়ে যেসব শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা আমার এই অনুষ্ঠান শুনেছেন প্রত্যেককে ধন্যবাদ।
আর শ্রোতাবন্ধুরা! আজ এখানেই বিদায় চাইছি স্বাস্থ্যকথার আসর থেকে। এ বিষয়ক পঞ্চম পর্বের আলোচনায় আমাদের সঙ্গ দিতে ভুলবেন না কিন্তু। সবাই ভালো সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৪