জুলাই ১৬, ২০২৩ ১৭:২৯ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে আমি গাজী আবদুর রশীদ। কেমন আছেন আপনারা? নিশ্চয়ই ভালো আছেন।

আপনারা জানেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রোগ  যে রোগটি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এখন মহামারি হয়ে উঠছে সেটি হচ্ছে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র। সারা বিশ্বে এই রোগটি এখন আতঙ্কের নাম হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। তো আশার কথা প্রায় ৭০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য এই রোগটি। তো বলাচলে আমাদের সবার ঘরে বসবাস করা এই ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা মধুমেহ রোগটি নিয়ে একে একে চারটি পর্বের আলোচনা শেষে আজ পঞ্চম পর্বের আলোচনায় যাব। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকছেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুল।

রেডিও তেহরান: জনাব ডা. আবু কামরান রাহুল রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

ডা: রাহুল: আপনাকেও ধন্যবাদ এবং রেডিও তেহরানের বিশ্বজুড়ে শ্রোতা পাঠক বন্ধুরা যারা স্বাস্থ্যকথা অনুষ্ঠানটি শুনছেন সবাইকে ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: ডা, আবু কামরান রাহুল আমরা চতুর্থ পর্বের আলোচনার শেষ দিকে ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো আপনার মূল্যবান আলোচনা শুনেছি। আজকের আলোচনার শুরুতে আপনি যদি ডায়াবেটিসের জটিলতা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বলেন।

ডা: রাহুল: আমরা জানি ডায়াবেটিস রোগীর জটিলতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:  ব্রেইন স্ট্রোক, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক, চোখে কম দেখা বা অন্ধ হওয়া, কিডনি অকেজো বা বিকল হয়ে যাওয়া, পায়ে রক্ত চলাচলে জটিলতা সহ বিভিন্ন সমস্যা হওয়া। 

এসব জটিলতা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় হচ্ছে :

রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং একজন ডায়াবেটিস /মেডিসিন চিকিৎসকের অধীনে নিয়মিত চেকআপে থাকা।

  • স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে : ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধুমপান বর্জন করতে হবে, বছরে অন্তত একবার ব্লাড প্রেসার মাপা, রক্তের কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা জরুরী।
  •  কিডনি রোগ প্রতিরোধে: ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে, যেমন সতর্কতার সাথে ব্যাথার ঔষধ ব্যবহার করতে হবে, ৬ মাস অন্তর প্রস্রাবের এলবুমিন পরীক্ষা করতে হবে, কারো যদি নিকট আত্মীয় রোগীর ডায়াবেটিক কিডনি রোগ  থাকে তাহলে আরো বেশী সতর্ক হতে হবে।
  •  অন্ধত্ব প্রতিরোধে করণীয় : ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ১-২ বছর অন্তর চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার  দেখাতে হবে। নিয়মিত চেকআপে থাকলে চোখের প্রি-প্রোলিফারেটিব রেটিনোপ্যাথি খুব প্রাথমিক পর্যায়েই সনাক্ত করা যায় যা চিকিৎসা করলে ভালো হয়।
  • পায়ের রোগ প্রতিরোধে: নিয়মিত পায়ের পরিচর্চা করতে হয়ে, পা পরীক্ষা করতে হবে।

রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল ডায়াবেটিস হলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো নানাভাবে অসহযোগিতা করতে থাকে। তখন বিশেষভাবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যত্ন নিতে হয় বলে শুনেছি। তো ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনি এসব যত্নের ক্ষেত্রে- আজ কি পায়ের যত্ন নিয়ে কিছু বলবেন?

ডা: রাহুল:  পায়ের যত্ন:

পায়ের যত্ন

ডায়াবেটিস জনিত দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাগুলির মধ্যে পায়ের সমস্যা অন্যতম। পায়ের যত্নের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ অতি গুরুত্বপূর্ণ ।পায়ের যত্নসমূহ হচ্ছে:

১. পায়ের ত্বক ও নখের যত্ন

২. পায়ের ব্যায়াম এবং

৩. সঠিক জুতা ব্যবহার

পায়ের ত্বকের যত্ন:

  • # প্রতিদিন পা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছতে হবে যাতে আঙ্গুলের ফাঁকে পানি না থাকে ।
  • পায়ের ত্বক অত্যধিক শুকনো হলে লোশন বা তেল ব্যবহার করতে হবে।
  • পায়ের ত্বক ভিজা থাকলে পা শুকিয়ে পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
  • পায়ে কড়া পড়লে নিজে না কেটে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ।

নখের যত্ন:

  •  নখ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • পায়ের নখ সামান্য বাড়তি রেখে কাটতে হবে।
  • পায়ের নখ কাটার জন্য বেড বা কাঁচি ব্যবহার না করে নেইল কাটার ব্যবহার করতে হবে।

পায়ের ব্যায়াম:

  •  পায়ের রক্ত চলাচল ও মাংশপেশীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য পায়ের ব্যায়াম করা খুবই দরকার।
  • প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করুন কমপক্ষে আধা ঘন্টা। 
  •  পায়ের নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে।
সঠিক জুতা ব্যবহার

সঠিক জুতা ব্যবহার :

১. জুতার ভিতরের আয়তন পায়ের আয়তন থেকে কিছু বেশি হতে হবে।

২. অগ্রভাগ এতটাই প্রশস্ত থাকবে যাতে আঙ্গুলের উপর কোন চাপ না পড়ে 

৩. জুতার গভীরতা শুকতলা থেকে উপরিভাগ এর দূরত্ব পর্যন্ত হতে হবে যাতে উপরের অবাঞ্ছিত চাপ না পড়ে 

৪. জুতা হতে হবে নরম চামড়া  কিংবা কাপড়ের তৈরি। 

৫. মোজা হতে হবে সুতির /উলের তৈরি ইলাস্টিকবিহীন ও অক্ষত। 

৬. প্রতিদিন জুতা পায়ে দেখে নিতে হবে এর ভিতর ইটের টুকরা আলপিন পেরেক অথবা অন্য কোন জিনিস রয়েছে কিনা যা পা সৃষ্টি করে। 

৭. নতুন জুতা কিনার পর প্রথমদিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পড়বেন না।

পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা, ডায়াবেটিস নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু কামরান রাহুলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: ডা, রাহুল  পায়ের যত্নের কথা বললেন-ডায়াবেটিস রোগী মুখ, দাঁত ও মাড়ির যত্ন কীভাবে নেবে?

ডা: রাহুল: ডায়াবেটিস রোগীর দাঁত ও মাড়ির যত্ন:

ডায়াবেটিসে রক্তের অতিরিক্তি গ্লুকোজের উপস্থিতির কারনে শরীরের অন্যান্য অংশের মত মুখ ও দাঁতেও রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং অক্সিজেন সরবারাহ কমে যায়। এ জন্য সামান্য কোন আঘাতেই জীবানু সংক্রমন ঘটাতে পারে। আর ইতোমধ্যেই

কোন প্রদাহ থেকে থাকলে তা জটিল রূপ ধারণ করে।

ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে মুখ, দাঁত ও দাঁতের মাড়ির ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ :

* দাঁতের মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায় ও ব্যথা হয় ।

* দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে।

* মুখে দূর্গন্ধ হয় ৷

* মুখে বারবার ঘা হয় ।

* দাঁতের কামড় অস্বাভাবিক অনুভূত হয় এবং শিরশির অনুভূতি হয়।

এই ধরনের কোন সমস্যায় ডেন্টিষ্টের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করা প্রয়োজন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু  পরামর্শ মেনে চলতে হবে :

  •  নিয়মিত সকাল ও রাতের খাবারের পর নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা।
  • খাবারের পর হালকা গরম পানি ও লবণ দিয়ে কুলি করতে পারেন। এতে মুখের ভেতর লেগে থাকা খাবারের অতিরিক্ত কণা বের হয়ে যাবে।
  • দু বেলা সকাল ও রাতে খাবারের পর দাঁত আঙুলের সাহায্যে অন্তত ২-৩ মিনিট মাড়ি মেসেজ করা যেতে পারে। এতে মাড়ি মজবুত হবে ।
  •  দিনে অন্তত একবার বিশেষত: রাতে খাবার পর ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা যাতে প্ল্যাক জমতে না পারে। এতে দুই দাঁতের মাঝখানে খাবার জমবে না।
  • ডেনচার (নকল দাঁত) ব্যবহার করলে তা পরিষ্কার রাখা।
  •  বছরে কমপক্ষে দু'বার ডেন্টিষ্টের শরণাপন্ন হওয়া এবং ডায়াবেটিসের উপস্থিতি সম্পর্কে জানানো। 
  • পরিশেষে ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখা।

রেডিও তেহরান: পঞ্চম পর্বের আলোচনার শেষ দিকে এসে জানতে চাইব-ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে- ঝুঁকিপূর্ণ পায়ের বিষয়টি কি যদি একটু বলেন?

ডা. রাহুল:     ঝুঁকিপূর্ণ পা: 

নিম্নলিখিত এক বা একাধিক ঝুঁকি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

১. পায়ের রক্ত চলাচল কমে গেলে

২. পায়ের অনুভুতি কমে গেলে

৩. পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে

8. যেকোন পায়ের সম্পূর্ণ বা কিছু অংশ কাটা

৫. পায়ের গঠনগত ত্রুটি থাকলে

৬. পায়ের অস্থিসন্ধির জড়তা থাকলে

রেডিও তেহরান: তো ডাক্তার আবু কামরান রাহুল, ডায়াবেটিস নিয়ে একে একে পাঁচটি পর্বের আলোচনায় আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

ডা. রাহুল: আপনাকও অনেক ধন্যবাদ।

নিয়মিত দৌঁড়ানো

আর শ্রোতাবন্ধুরা!  আগামী পর্বে  ডায়াবেটিস রোগীর সঠিক জুতা ব্যবহার, নিজে নিজে গ্লকোজ পরীক্ষা ইনসুলিন ইনজেকশন কীভাবে নিতে হয় এসব বিষয়ে আলোচনা শুনব। সে আসরেও আপনাদের সঙ্গ পাওয়ার আশা করছি। তবে সবচেয়ে জরুরি কথা আপনারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করবেন পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম নেবেন। আজ এ পর্যন্তই। ভালো ও সুস্থ থাকুন।#

সাক্ষাৎকার গ্রহণ, উপস্থাপনা ও অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

পার্সটুডে/জিএআর/১৬

ট্যাগ