গল্প ও প্রবাদের গল্প:
প্রবাদ: হায় আল্লাহ! মনিব যেন পানি খেতে চায়
প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজকের আসরে আমরা শুনবো একটি প্রাচীন প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: 'হায় আল্লাহ! মনিব যেন পানি খেতে চায়'। এই প্রবাদের নেপথ্যে যে গল্পটি লুকিয়ে আছে সেটি এরকম:
প্রাচীনকালে ধনী লোকেরা তাদের নিজেদের কাজকর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্য চাকর-বাকর রাখতো। তারা ধনী লোকের বিশাল বিশাল ভবনের কাজ করতো। ধনীরা সাধারণত চাইতো বুদ্ধিমান এবং চালাক-চতুর চাকর নিয়োগ দিতে। কেননা যখন তারা চাকরকে কোনো কাজের দায়িত্ব দেয় যেন বোঝে এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে দ্রুত কাজটা করে ফেলতে পারে, কোনোভাবেই যেন কাজটা নষ্ট না করে মনিবের আদেশমতো সুন্দরভাবে কাজটা করে দিতে পারে।
এই ছিল প্রাচীনকালে ধনী লোকদের ব্যাপার স্যাপার। কিন্তু সে সময় এক বিত্তবান লোকের ছিল ভীষণ অলস এক চাকর। স্বাভাবিকভাবেই ওই চাকর তার মনিবের কোনো সমস্যা হলে চাতুর্যের সঙ্গে তার সমাধান দেওয়ার পরিবর্তে বরং দায়িত্ব এড়িয়ে যেত। মনিব যখনই তাকে কোনো কাজের আদেশ দিতো সে খুবই বিরক্তির সঙ্গে সে কাজ করতো। সে কারণে মনিব একটু কড়াভাবেই আদেশ দিতো যাতে চাকর ভয়ে কাজ করতে বাধ্য হয় ...। এভাবে মনিব ওই চাকরের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়লো এবং সিদ্ধান্ত নিলো তাকে বহিষ্কার করে চালাক চতুর একটা চাকরকে নিয়োগ দেবে। কিন্তু চাকরের সচেতনতা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে মনিব তার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকলো।
একদিন আবহাওয়া ছিল ভীষণ গরম। মনিব ওই গরমের ভেতর চাকরকে নিয়ে গেল কৃষি-খামারে। তার কৃষি-ক্ষেতে কী রকম কাজ হচ্ছে দেখার ইচ্ছে ছিল। খানিকটা ঘুরে ফিরে মনিব ক্লান্ত হয়ে গেল এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটা গাছের নীচে আশ্রয় নিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম এসে গেল। অলস চাকর মনিবের চেয়েও বেশি ক্লান্ত ছিল, সেও গাছের নীচে গিয়ে বিশ্রাম নিলো। মনিবের দ্রুত ঘুম পেয়ে গেছে কিন্তু চাকর তো শ্রান্ত-ক্লান্ত'র পাশাপাশি তৃষ্ণার্তও ছিল সে কারণে মনিবের মতো ছায়াবৃক্ষের নীচে সুখনিদ্রা দিতে পারলো না।
অর্ধঘুমে, অর্ধ জাগরণ-এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়ে রইলো চাকর। একবার ভাবলো সে একটু ঘুরে ফিরে পানি খুঁজে বের করে একটু পান করবে। কিন্তু অলসতার কারণে উঠতে ইচ্ছে করছিলো না তার। কোথায় কুয়ো আছে সেটা খুঁজে বের করা তো দূরেরই কথা। বুঝে উঠতে পারছিলো না কী করবে সে। একদিকে ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। আবার অন্যদিকে তার ঘুমও পাচ্ছিলো। তাই অলস ঝিমানির পরিস্থিতি থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পানির কুয়োর সন্ধানে যাবার মতো শক্তি পাচ্ছিলো না সে। কী করে সে আর পানি পাবে আর খেয়ে তৃষ্ণা মেটাবে। লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়েই সে বলছিল: আহা রে… মনিব যদি না ঘুমাতো! হে আল্লাহ! মনিবের যেন পিপাসা লাগে এবং সে যেন পানি খেতে চায়!
মজার ব্যাপার হলো মনিবের কিন্তু ঘুম একেবারে গভীর ছিল না। আধা ঘুম, আধা জাগরণ-এরকম একটা অবস্থার মধ্যে ছিল। চোখ বন্ধ থাকলেও কান কিন্তু খোলাই ছিল। সুতরাং অলস চাকরের গুন গুন করে বলা কথাগুলো শুনে ফেললো মনিব। কথাগুলো শুনে মনিবের হাসিই পেল। এতোটা অলস কেউ হতে পারে-এই চিন্তা করেই মনিব মনে মনে হাসলো। একটু পরে রাগের স্বরে চীৎকার করে বলে উঠলো: 'অলস খান! গাছের ছায়ায় এভাবে শুয়ে আছিস কেন?' হায় আল্লাহ! কী অবস্থা এই অলসের! মনে মনে একথা বলেই চাকরকে বললো: উঠে বস! যা, আমার জন্য এক বাটি পানি নিয়ে আয়।
যেই আদেশ সেই কাজ। এবার আর তাকে রেগেমেগে কিংবা চীৎকার করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কিছু বলার প্রয়োজন হয় নি। পানি চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরের ঝিমুনি কেটে গেল। উঠে গিয়ে সোজা পানির সন্ধানে বের হয়ে গেল। মনিবের তৃষ্ণা পেয়েছে সুতরাং পানির সন্ধান করতেই হবে। অবশ্য চাকর তো নিজেই তৃষ্ণার্ত ছিল। তারও পানি খাওয়ার প্রয়োজন ছিল। সে কারণে চাকর নিজের আগ্রহেই পানির সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো যাতে অন্তত এক বাটি পানি খেয়ে তৃষ্ণা থেকে মুক্তি পায়। এই ঘটনার পর থেকে যখনই কোনো অলস অতিরিক্ত অলসতার কারণে নিজের আরাম-আয়েশের স্বার্থেও কোনো কাজ করতে না চায়, তাদের সম্পর্কে রূপকভাবে বলা হয়: 'হায় আল্লাহ! মনিব যেন পানি খেতে চায়'।#
পার্সটুডে/এনএম/৩০/৭৪
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ