আগস্ট ১৪, ২০২৩ ২০:৫৯ Asia/Dhaka

আজ আমরা কথা বলব যুব সমাজের অবসর সময়কে যথাযথ পন্থায় কাজে লাগােনার বিষয়ে। যুব সমাজ অবসরে বিনোদনের পাশাপাশি সৃষ্টিশীল ও দেশগঠনমূলক নানা কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। তাই এ বিষয়ে পরিকল্পিত কর্মসূচি থাকা উচিত।

হে দুরন্ত পথিকের দল!

হতাশা আর অবসাদ কতকাল?

দেখো উঠছে পূর্বাকাশে মুক্তির সূর্য, উদ্দীপ্ত মহাকাল

যেন শহিদি রক্তে জ্বলজ্বল অদম্য স্বাধীনতার সকাল

মুক্তিকামী মানুষ যার অপেক্ষায় ছিল এতকাল সকাল-বিকাল

যেন যুগযুগান্তরের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন-সাধনার নও-হেলাল!

দরিদ্র ও বঞ্চিতের উত্থানে ছিন্নভিন্ন হবে শোষণের সব জাল-জঞ্জাল!

দেখো মরুর বুকে ফুটেছে হাস্না-হেনা, মুহাম্মাদি গোলাপ টুকটুকে লাল!

ইসলামের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আবু যার গিফারিকে তাঁর নির্দেশনায় বলেছেন: "হে আবু যার, দিনার ও দিরহাম খরচ করার চেয়েও নিজের জীবনের দিনগুলো অতিক্রমের ব্যাপারে বেশি কৃপণ হও এবং দিনগুলোকে বিনামূল্যে হাতছাড়া হতে দিও না।- ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে, যৌবন ও তারুণ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে এই বিশেষ সময় মানুষের জীবনের এক বড় খোদায়ি নেয়ামত। যারা যথাসময়ে জীবনের এই অপূর্ব কালকে কাজে লাগায় তারা এর সুফল পরবর্তীকালে ও বার্ধক্যের সময়ও উপভোগ করতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে যারা প্রশান্ত-চিত্ত ও স্বচ্ছ চিন্তাধারার অধিকারী, সুশৃঙ্খলিত ও পরিকল্পিত আচার-আচরণ আর কর্মসূচির অধিকারী তারা যৌবনকালেই এইসব বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন। অন্যদিকে যেসব বৃদ্ধ অবসাদগ্রস্ত, অধৈর্য-চিত্ত ও জীবন থেকে আর নতুন কিছু পাওয়ার আশা রাখেন না তারা যৌবনের সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেননি বলেই আজ এইসব অবস্থার শিকার।

মানসিক যাতনা ও হীনমন্যতা থেকে মুক্ত করারও অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে অবসরের বিনোদন, ...সামাজিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য গ্রুপ-ভিত্তিক বিনোদন কর্মসূচি বেশি জরুরি।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কোনো না কোনো প্রতিভা সুপ্ত থাকে। তাই জীবনের নানা চাহিদা, প্রচেষ্টা, গবেষণা ও প্রতিভার মধ্যে সমন্বয় জরুরি। এক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার বা বিশেষ কোনো এক দিকে ভারসাম্যহীনতা থাকলে মানুষ সৌভাগ্য ও মহতী গুণগুলো অর্জনে ব্যর্থ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে অবসর সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে যুব ও তরুণ সমাজের মধ্যে নানা গুণ এবং প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। আত্মপরিচিতি ও সুনির্দিষ্ট উচ্চতর লক্ষ্যের আলোকে পরিকল্পিত কর্মসূচি নিয়ে এই সময়গুলোকে কাজে লাগানো না হলে যা গড়ে উঠবে তা হল অলস মস্তিষ্ক-প্রসূত শয়তানি ও বিভ্রান্তির নিত্য নতুন কারখানা। অবসর সময়কে কেবল হাল্কা বিনোদনে নয় বরং শিক্ষামূলক বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত করা উচিত। এ সময়ের কর্মসূচি সৃষ্টিশীলতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্যও সহায়ক। সামাজিক দায়িত্বশীলতা শেখা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণের যোগ্যতা গড়ে তোলার জন্যও অবসর সময়ের কর্মসূচিগুলো সহায়ক হতে পারে।

 অবসর সময়ের কার্যক্রম বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি মানুষকে কিছু কালের জন্য মুক্ত করে একই ধরনের কাজের একঘেয়েমি থেকে এবং মুক্ত করে রুটিন-মাফিক কাজের ক্লান্তিকর পরিবেশ আর সীমাবদ্ধতা থেকে। বিচিত্রময় পরিবেশের স্বাদ এনে দেয় অবসরের বিনোদন ও শিক্ষামূলক নানা কর্মসূচি।

মানসিক যাতনা ও হীনমন্যতা থেকে মুক্ত করারও অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে অবসরের বিনোদন। এ ধরনের সময়ের নানা কর্মসূচি মানুষের মধ্যে যোগায় সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, মুক্ত পরিবেশে মুক্ত মন নিয়ে বিচরণ করার ও ব্যক্তিত্বকে পরিপূর্ণতা দেয়ার সুযোগ। এ সময়ে যুবক ও তরুণরা কি কাজ করবে বা কোথায় কোন্ শিক্ষামূলক সফরে যাবেন তা নিজেরাই বেছে নিতে পারেন। ইসলামের দৃষ্টিতে অবসর সময়ের বিনোদন হওয়া উচিত শালীনতাপূর্ণ ও সুস্থ বিনোদন এবং শিক্ষামূলক বিনোদন। মহান আল্লাহর ইবাদত বা ধ্যানে মশগুল হওয়া ইসলামী অবসর বিনোদনের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। যাদুঘরে যাওয়া, শিক্ষা-সফর, বই পড়া, শরীর চর্চা, খেলাধুলা ও সাঁতার কাটা, ঘোড়ায় চড়া, বা পাহাড়ে ভ্রমণ অবসর সময়ের সুস্থ বিনোদনের আরও কয়েকটি দৃষ্টান্ত। এ ধরনের বিনোদন পুরনো কর্মক্ষেত্রে মানুষের কর্ম-উদ্যম বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়।

অবসর সময়কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ তরুণ ও যুব সমাজ সামাজিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন অপরিপক্বতা ও অদক্ষতা নিয়ে।  পরিবার ও সমাজের যারা নেতৃস্থানীয় তাদের উচিত যুব সমাজের অবসর সময়গুলোকে পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা। তা না হলে অদক্ষ ও অসামাজিক যুব ও তরুণ সমাজ হীনমন্যতায় ভুগবেন এবং সমাজকে নিজের আপন বলে ভাববেন না।প্রতিদিনই তরুণ ও যুব সমাজের জন্য খানিকটা অবসর ও বিনোদন প্রয়োজন। তাদেরকে সামাজিক করে তোলার পাশাপাশি উদ্দীপ্ত ও প্রফুল্ল রাখার জন্যই এটা জরুরি। তাদের বিনোদন-কর্মসূচি হতে পারে গ্রুপ-ভিত্তিক বা একাকি।

প্রতিদিনই তরুণ ও যুব সমাজের জন্য খানিকটা অবসর ও বিনোদন প্রয়োজন

সামাজিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য গ্রুপ-ভিত্তিক বিনোদন কর্মসূচি বেশি জরুরি। এ ধরনের কর্মসূচির মধ্যে অন্যদেরকে জ্ঞান দান বা নিরক্ষরতা দূরিকরণ হতে পারে সুস্থ  বিনোদনের পাশাপাশি অন্যতম জরুরি সামাজিক উন্নয়নমূলক বা কল্যাণমূলক কর্মসূচি।  দেশ পুনর্গঠন বা গ্রাম-উন্নয়ন কর্মসূচিও হতে পারে এ ধরনের জরুরি কর্মসূচির অংশ। যেমন, গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে গ্রামে গিয়ে মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন ঘটানো বা সংস্কার করা, দাতব্য চিকিৎসালয় গড়ে তোলা, সড়ক ও সেতু নির্মাণ ইত্যাদি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে যুব সমাজ যদি তাদের অবসর সময়ে জনকল্যাণমূলক কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তা হবে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার সমতুল্য। মুসলিম যুব সমাজ ও তরুণ সমাজের জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।