গল্প ও প্রবাদের গল্প:
সিংহকে চতুর শেয়ালের বোকা বানাবার প্রাচীন গল্প
প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো সিংহ ও শেয়ালের ঘটনা নিয়ে প্রাচীন একটি গল্প।
জানেনই তো শেয়াল খানিকটা অলস প্রজাতির প্রাণী। নিজে শিকার করে কম। সিংহের শিকারের ঝুটা খেয়ে ঘুমানোই তার কাজ। বনের ভেতর দুজনেরই বাস। সুতরাং আরামেই কাটতো তার। সিংহ অসুস্থ কিংবা দুর্বল হয়ে পড়লেই তার সমস্যা দেখা দিতো। সে না শিকার করতে চাইতো না ক্ষুধা সহ্য করতে পারতো।
একদিন সিংহ লম্বা হয়ে শুয়ে আহ উহ করছিল। শেয়াল তাকে বললো: হে বনরাজ! তোমার রোগের কি চিকিৎসা নেই? মনে মনে বললো: আমি তো ক্ষুধায় মরে যাচ্ছি। সিংহের কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছিল। তবু বললো: জানি না। তবে শুনেছি গাধার গোশত এবং মগজ খেলে এই দুর্বলতা কেটে যায়। যদি একটা গাধা শিকার করতে পারতাম! শেয়াল মনে মনে বললো: আমি যদি একবার এ কাজ করি এবং সিংহ তার শক্তি ফিরে পায়, তাহলে তো মন্দ হয় না। ক্ষুধায় মারা যাওয়ার চেয়ে তো ভাল। তাছাড়া সিংহ সুস্থ হয়ে গেলে আমিও আবার আগের মতোই আরামে জীবন চালিয়ে যেতে পারবো।
শেয়াল চিন্তাভাবনা করে সিংহকে বললো: এটা তো কোনো ব্যাপারই না। আমি বহুবার দেখেছি একটা গাধা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য প্রায়ই ঝরনার পাড়ে আসে। আমি ওকে এখানে নিয়ে আসতে পারবো। এই বলেই শেয়াল যাত্রা করলো ঝরনার উদ্দেশে। পানি পরিপূর্ণ থাকায় বনের সকল পশুই এখানে আসতো। শেয়াল তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে আজ গাধা নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও গাধাকে দেখতে না পেয়ে শেয়াল ভাবলো: গাধা নিশ্চয়ই এই স্থান থেকে চলে গেছে। ব্যর্থ মনোরথে সিংহের কাছে ফেরার পথে গাধাকে একটা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলো। খুশিতে লেজ নাড়লো শেয়াল। গাধার কাছে গিয়ে সালাম করে বললো: প্রিয় গাধা! তোমাকে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে, কী হয়েছে?
গাধা বললো: কেন ক্লান্ত হতে নেই নাকি! এতো বেশি বোঝা টেনেছে যে দুর্বল হয়ে পড়েছি। আমার জালিম মনিব সাধ্যের চেয়ে দ্বিগুণ বোঝা টানায়। ক্লান্ত হয়ে গেছি। একটু পানি খেয়ে গাছের নীচে খানিক বিশ্রাম নেবো ভাবছি। শেয়াল দু:খ প্রকাশ করে বললো: এই অবস্থা হলে মনিবের কাছ থেকে পালাচ্ছো না কেন? গাধা বললো: গাধাদের জন্য যাবার কি কোনো জায়গা আছে? যেখানেই যাবো ওই বোঝাই টানতে হবে। সব মনিবই এক রকম। শেয়াল বললো: সব সমস্যারই কোনো না কোনো সমাধান আছে। তুমি চাইলে আমাদের সঙ্গে থাকতে পারো। এমন জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে যে কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না। ভালো ভালো খেতে পারবে, বিশ্রামও নিতে পারবে।
শেয়াল আরও বললো: চলো! তোমাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবো যা তুমি কখনো স্বপ্নেও দেখো নি। কাজের চাপের কথা ভেবে গাধা ফাঁদে পা দিলো। বললো: ঠিক আছে, যাবো। শেয়াল এবার মহা আনন্দে গাধাকে সঙ্গে নিয়ে পা বাড়ালো। ক্ষুধার্ত সিংহ গাধাকে দেখতে পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেলো এবং হামলা করে বসলো। গাধার রানে একটু জখম হলো। কিন্তু সে মাংসাসী সিংহের অস্তিত্ব টের পেয়ে দৌড়ে পালালো। শেয়াল ভীষণ রেগেমেগে চীৎকার করে সিংহকে বললো: এটা কী হলো? কেন তুমি ওকে মারতে পারলে না? এতোই যদি দুর্বল তুমি তাহলে তো তোমার কাছে থাকার আর কোনো মানে হয় না। সিংহ বললো: কদিন ধরে না খেতে পেয়ে দুর্বল হয়ে গেছি। সমস্যা নেই আবার যদি তুমি ওকে নিয়ে আসতে পারো অবশ্যই শিকার করতে পারবো। তাই যদি হয় তাহলে মাংসটা তুমি খাবে আর মগজ এবং কান আমি।
শেয়াল রাজি হলো তবে বুঝতে পারছিলো না গাধা তার কথায় আর কান দেবে কিনা। কিন্তু চেষ্টা না চালিয়ে কী করবে! উপায় তো আর নেই। শেয়াল গেল এবং গাধা তাকে দেখতেই বললো: ওটাই ছিল তোর বেহেশত? জাহান্নামের চেয়েও খারাপ জায়গা। মনুষ্য জাতির ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক! শত রহমত আমার জালেম মনিবের ওপর বর্ষিত হোক। সে অন্তত আমাকে প্রাণে মারতে চায় না। শেয়াল বললো: সিংহ বহুকাল গাধা দেখে নি। তাই আবেগের আতিশয্যে তোমাকে বুকে জড়াতে ওরকম করেছে। তোমার শিকার করার কোনো বদ উদ্দেশ্য ছিল না। অনিচ্ছাক্রমে তোমাকে জখম করে এখন কান্নাকাটি করছে। চলো ওকে আর কষ্ট দিও না। তুমি গেলেই শান্ত হয়ে যাবে। গাধা শেয়ালের কথা আবারও বিশ্বাস করলো এবং তার সাথে চললো।
সিংহ গাধাকে দেখে আবারও তার দিকে দৌড়ে গেল। গাধা ভেবেছিল তাকে আদর করতে আসছে তাই সরলো না। কিন্তু সিংহ তার কাজ করেই বসলো। তাকে মেরে ফেললো। তারপর শেয়ালকে বললো: দাঁড়াও! আমি হাত-মুখ পরিষ্কার করে আসি! সুস্থতার জন্য পরিষ্কার অবস্থায় গাধার কান আর মগজ খেতে হয়। এই বলে সিংহ চলে গেল। এই সুযোগে শেয়াল গাধার মাংস এবং কান-মগজও পেট পুরে খেয়ে একটা গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর সিংহ এসে দেখলো গাধার মাংসও খাওয়া হয়েছে, কান আর মগজও নেই। চীৎকার করে শেয়ালকে জিজ্ঞেস করলো।
শেয়াল হাই তুলে বললো: আপনার কি মাথা ঠিক আছে? গাধার মগজ থাকলে কি আর আমার কথায় আবারও পটে। এই বলতে বলতে শেয়াল ভয়ে দিলো দৌড়। সিংহ শেয়ালের প্রতারণা বুঝতে পারলো। কিন্তু এতোই দুর্বল ছিল যে দৌড় দিয়ে আর শেয়ালকে ধরার মতো শক্তি তার ছিল না। সুতরাং সিংহ জিহ্বা বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে তাকিয়েই থাকলো শেয়ালের চলে যাবার দিকে। কিছুই করার ছিল না তার।
পার্সটুডে/এনএম/২২/৮৬
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ