আগস্ট ২৩, ২০২৩ ১৯:৫৫ Asia/Dhaka

মহানবী (সা) বলেছেন, মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদতে লিপ্ত যুবক যুবতীদের ভালোবাসেন। তিনি আরও বলেছেন, বিচার দিবসে মানুষকে প্রশ্ন করা হবে: যৌবনকালকে কিভাবে ব্যবহার করেছ?

হে জাগ্রত তরুণ! এসো শহীদি কাফেলার পথ ধরে  এগিয়ে যাই

হাতে নিয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার শানিত জুলফিকার

ভেঙ্গে আধুনিক ভোগবাদের সব কারাগার

বিচূর্ণ করে দানবীয় আভিজাত্য আর বর্ণবাদের অহংকার

আবারও বঞ্চিত ও ক্ষুধার্তের মুখে হাসি ফোটাই!

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে শরীর চর্চা ও খেলাধুলা যেমন বার্ধক্যের তুলনায় যৌবন ও তারুণ্যের সময় অনেক বেশি কল্যাণ বয়ে আনে শরীরের তেমনি এ সময়ের ইবাদাত আর খোদাপ্রেম বৃদ্ধ বয়সের ইবাদাত বা খোদাপ্রেমের তুলনায় আত্মা ও পরকালীন জীবনের জন্য বয়ে আনে অনেক বেশি প্রাচুর্য ও কল্যাণ।

- খেলাধুলা ও শরীর চর্চা মানুষকে রাখে প্রাণবন্ত। যুব সমাজ ও তরুণ সমাজ খেলাধুলা এবং শরীর চর্চার মত গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকলে তাদের মধ্যে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কমই থাকে। বর্তমান যুগে নানা ধরনের মিডিয়া ও ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় শিশু-কিশোর ও যুব সমাজ আগের মত শরীর চর্চা ও খেলাধুলায় সময় দিতে পারছে না। তাই  খেলাধুলা এবং শরীর চর্চা তরুণ ও যুব সমাজের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখার জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

সুস্থ শরীরের পাশাপাশি সুস্থ মন বা বিবেকের চর্চাও জরুরি

খেলাধুলা ও শরীর চর্চা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার মাধ্যম হওয়ার পাশাপাশি তা সবার জন্য বিশেষ করে যুব ও তরুণ সমাজের জন্য অন্যতম প্রধান সুস্থ বিনোদন হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো খেলাধুলা বীরত্ব বা সাহসিকতা অর্জন এবং প্রতিরোধ বা সামরিক শিক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, কুস্তি, তির নিক্ষেপ, অশ্ব-চালনা ও সাঁতার।

মহানবী (সা) তিরন্দাজি শেখার ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং এই খেলাকে সবচেয়ে বড় বিনোদন বলে উল্লেখ করেছেন।যুব সমাজ শারীরিক দিক থেকে সমাজের অন্য শ্রেণীগুলোর চেয়ে শক্তিশালী। তাই তারা যদি অন্য সব জরুরি গুণের অধিকারী হয় তবে সমাজে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তারাই বেশি উপযুক্ত। জ্ঞান ও শারীরিক শক্তির দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হওয়ায় তালুতকে বনি ইসরাইলের সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয়েছে বলে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। -দীর্ঘদেহী ও সুঠাম এবং মজবুত শরীরের অধিকারী তালুত ছিলেন বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও পরিচালনায় দক্ষ এবং দৃঢ় মানসিক শক্তির অধিকারী।

মহানবী (সা) ওহুদের যুদ্ধের সময় ১৫ বছরের কম বয়সী বালকদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণের অনুমতি দিচ্ছিলেন ন। তিনি সামুরা বিন জুন্দাব ও রাফে বিন খাদিজকে ১৫ বছর বয়স্ক  হওয়ার পরও যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দেননি, কিন্তু পরে যখন শুনলেন যে রাফে খুব ভালো তিরান্দাজ এবং সামুরাও কুস্তি প্রতিযোগিতায় রাফেকে জমিনে ধরাশায়ী করতে পেরেছে তখন তিনি এই দুই বালককেও ব্যতিক্রম হিসেবে ওহুদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দেন। তরুণদের মাঝে বীরত্বের মনোবল ও আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে মহানবী (সা) তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। মহানবী (সা) নৈতিক মূল্যবোধের বিস্তারের বিষয়টিকে বীরত্বের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে গুরুত্ব দিতেন।

একবার একদল যুবক পাথর নড়ানোর মাধ্যমে শক্তির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে মহানবী (সা) সেখানে বিচারক হিসেবে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, সে-ই সবচেয়ে শক্তিশালী যে ক্রুদ্ধ অবস্থায়ও নিজ ক্রোধকে সংযত রাখতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে রাগ দমন করতে পারে, অন্যদিকে কোনো কিছুকে নিজের কাছে ভালো লাগলেও আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়ে উদাসীন হয় না, আর এভাবে সে রাগ ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

শরীর চর্চার পাশাপাশি চিন্তাশীলতা ও মননশীলতার চর্চাও জরুরি

সুস্থ শরীরের পাশাপাশি সুস্থ মন বা বিবেকের চর্চাও জরুরি। ইরানের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পাহলোয়ান বা বীরদেরকে শক্তির কৌশল শেখানোর পাশাপাশি ক্ষমাশীলতা ও দয়ার শিক্ষাও দেয়া হত। সংঘবদ্ধ খেলাধুলার মাধ্যমে দায়িত্বশীলতা ও সামাজিক ঐক্যের চেতনাসহ নেতৃত্বের গুণ এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশের মত নানা জরুরি বিষয়ও শেখা সম্ভব হয়। অন্য কথায় শরীর চর্চার পাশাপাশি চিন্তাশীলতা ও মননশীলতার চর্চাও জরুরি।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী সরকার তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে শরীর চর্চা এবং নিষ্কলুষ বিনোদনের চর্চাকে উৎসাহ দিয়ে আসছে আধ্যাত্মিক উচ্চতর লক্ষ্যগুলো অর্জনে উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা অয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনি তার নানা বক্তব্য ও ভাষণে এ বিষয়গুলো বেশ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করে আসছেন।  

ইসলামী ইরানের যুব সমাজ আন্তর্জাতিক নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করছেন। অনেক সময় দেখা যায় ইরান ও মুসলিম বিশ্বের এবং এমনকি অমুসলিম বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ক্রীড়াবিদও ফিলিস্তিনের মজলুম জাতির ওপর ইহুদিবাদী দখলদারদের জুলুম ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এই অবৈধ দেশটির ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এভাবে তারা ক্রীড়াঙ্গনে নৈতিকতা, বীরত্বপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিবেকের আহ্বানও তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ