এপ্রিল ২২, ২০২৪ ১৮:৫২ Asia/Dhaka

শ্রোতা ভাইবোনেরা, বৈচিত্র-প্রেম, স্বাধীনতা বা স্বনির্ভরতা, সমালোচনা বা প্রতিবাদ ও নতুনত্বের প্রতি আকর্ষণ তারুণ্যের কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই প্রেক্ষাপটে এ ধারাবাহিকের গত পর্বে আমরা যুব সমাজের জন্য আদর্শ নির্বাচনের গুরুত্ব ও এর প্রভাব সম্পর্কে কথা বলেছি।

সঠিক আদর্শ নির্বাচন তাকে এনে দেয় সাফল্য ও সৌভাগ্য, আর যদি নির্বাচন সঠিক না হয় তাহলে যুব সমাজ সঠিক পথ হতে বিচ্যুত হয়। দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুব ও তরুণ সমাজ নতুন স্টাইল বা ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সর্বসাম্প্রতিক স্টাইল বা হাল-ফ্যাশনের প্রতি ঝোঁকও তরুণদের এক দুনির্বার নেশা। তাই বয়স্ক অভিভাবক বা বাবা-মায়ের যুগের ফ্যাশন বা স্টাইলগুলো থেকে তারা দূরত্ব বজায় রাখতে চায়। কারণ আজকের যুব সমাজ মনে করে বাবা-মায়ের যুগের ফ্যাশন বা প্রথাগুলো এখন সেকেলে হয়ে পড়েছে, যদিও পোশাকের সংস্কৃতিগুলো ঘুরে ফিরে আসে বার বার!

 বর্তমান যুগে তরুণ ও যুব সমাজ ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ে বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। তাই বিভিন্ন মূল্যবোধ, মানদণ্ড ও বিশ্বাসের মধ্যে কোনটি ভালো ও কোনটি মন্দ তা নির্ধারণ অনেক সময় তাদের জন্য জটিল হয়ে পড়েছে। ফলে কখনও কখনও তারা নিজ সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ বিরোধী আচার-আচরণ ও ভাবধারার প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে। পাশ্চাত্যের ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য এখন যুব সমাজের ওপর খুব সহজেই প্রভাব ফেলছে ভাষার কাঁধে ভর করেই। মুসলিম বিশ্বের যুব সমাজ ও তরুণদের অনেকেই পশ্চিমা সভ্যতার বাহ্যিক চাকচিক্য ও জৌলুস বা জাঁকজমক দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাদের পোশাক, চুল ও গয়না বা প্রসাধন সামগ্রীতে এর প্রভাব লক্ষণীয়। এই তরুণ ও যুব সমাজের অনেকেই মনে করেন যে পশ্চিমা সব কিছুই সেরা বা উন্নত এবং বেশি আভিজাত্যময়; অন্যদিকে অপশ্চিমা সব কিছুই সেকেলে বা অমার্জিত! বিশেষ করে ধনী ও অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে পাশ্চাত্য-প্রেম খুব প্রবল। কিন্তু তারা জানেন না যে এসব চাকচিক্যের মধ্যে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। 

নতুন স্টাইল বা ফ্যাশনের প্রতি তরুণ ও যুব সমাজের বেশি আকর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ হল নিজেদের জাহির করা তথা সমাজকে এটা জানিয়ে দেয়া যে আমরা ভিন্ন ধরনের! অন্য একটা বড় কারণ নিজ সমাজ ও সভ্যতার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। এক্ষেত্রে আরেকটি বড় কারণ হল অন্যদের নকল করা বা অনুকরণকামিতা! আবার অনেকেই কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের পছন্দকে নিজের পছন্দ বলে মেনে নেয় কোনো যুক্তি বা ঝোঁক ছাড়াই এবং এভাবে তারা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে অভ্যস্ত। যেমন, দেখা যায় আজকাল তরুণ ও যুব সমাজের কেউ কেউ অক্ষত ও ত্রুটিমুক্ত পোশাকের পরিবর্তে ছেঁড়া বা ত্রুটিযুক্ত পোশাক পরছেন কেবল এ জন্যই যে অনেকেই এই জাতীয় পোশাককে অভিজাত ফ্যাশন বলে মনে করছেন এবং তারা তুলনামূলকভাবে বেশি দাম দিয়ে এ জাতীয় পোশাক কিনছেন! 

একদল ইরানি যুব ক্রীড়াবিদ 

 

ইসলাম ধর্ম নতুনত্বের বিরোধী না হলেও অশালীন পোশাক বা ইসলামী নীতিমালার বিরোধী পোশাক পরার বিরোধী। ইসলাম সাদাসিধে পোশাককে গুরুত্ব দেয় এবং আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও সুন্দর আচরণের পক্ষপাতি। পাশ্চাত্যে তরুণ ও তরুণীদের অবাধ মেলামেশা সাধারণ বা বেআইনি বিষয় না হলেও মুসলিম সমাজের জন্য তা ধ্বংসাত্মক বলে বিবেচিত হয়। ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) বলেছেন, সুন্দর পোশাক পর, কারণ মহান আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তবে সুন্দর পোশাক হতে হবে বৈধ বা হালাল। তিনি আরও বলেছেন, মহান আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন ও বান্দাহদের সুসজ্জিত হওয়াকেও পছন্দ করেন। তিনি দারিদ্র ও দারিদ্রব্যঞ্জক  অবস্থা বা ভাবকে পছন্দ করেন না। তিনি বান্দাহকে যখন কোনো নেয়ামত দান করেন তার প্রভাবও তার মধ্যে দেখতে চান। প্রশ্ন করা হল কিভাবে? ইমাম বললেন, পরিচ্ছন্ন পোশাক পর, খুশবু ব্যবহার কর এবং ঘরে প্লাস্টারিং ও উজ্জ্বল বা সাদা রং করবে, উঠানে ঝাড়ু দিবে; আর সূর্যাস্তের আগেই বাতি জ্বালানো হলে তা দারিদ্র দূর করে ও রিজিক বাড়ায়।

ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) আরও বলেছেন,  তোমরা সুন্দর পোশাক পর এবং ঘরবাড়িকে সুসমৃদ্ধ বা আবাদ কর যাতে জনগণের মধ্যে তোমাদের অবস্থান হয় গালের তিলের মত সুন্দর। ইসলাম বাহ্যিক সাজ-সজ্জার পাশাপাশি আত্মিক পরিশুদ্ধি বা আত্মাকে সুন্দর করার ওপরও অপরিসীম গুরুত্ব দেয়। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, নিজের ভেতরটাকে সুন্দর করা বাহ্যিক সাজসজ্জার চেয়েও বেশি সুন্দর। পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে, খোদা-সচেতনতা বা তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর পোশাক। যুব সমাজসহ আমাদের সবার এটা মনে রাখা উচিত আমাদের মধ্যে যেন নিজের ব্যক্তিত্বকে বিকিয়ে দেয়ার মত পশ্চিমা সংস্কৃতির আনুগত্যের ধারা গড়ে না উঠে। মুসলমানদের জাতীয় পোশাক হওয়া উচিত ইসলামের মহান ব্যক্তিদের পোশাকের মতই। পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার নামে বা নূতনত্ব বা নতুন মডেল কিংবা নতুন স্টাইলের ফ্যাশন অনুসরণের নামে আমাদের যুব সমাজ যেন অর্থহীনতার সংস্কৃতির শিকার না হয় সে জন্য তাদেরকে সচেতন করা অভিভাবকদের দায়িত্ব। এ জন্য জাতীয় সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জ্ঞান দান করতে হবে যুব ও তরুণ সমাজকে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২২ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ