এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ২১:০২ Asia/Dhaka

মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল বিয়ে। মানুষের জীবনের বসন্তকাল হিসেবে বিবেচিত যৌবনকালই বিয়ের উপযুক্ত সময়।

বিয়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিপক্কতা বা যোগ্যতা অর্জন জরুরি। আর মানুষের জীবনে পূর্ণতা অর্জনের জন্য বিয়ে করে সংসারী হওয়া অপরিহার্য।

বিয়ের  উদ্দেশ্য কেবল বস্তুগত চাহিদা বা দেহের প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোই হওয়া উচিত নয়। একইসঙ্গে পূর্ণতা অর্জনের মত খোদায়ি ও উচ্চতর লক্ষ্যগুলোকেও এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিয়ে মানুষকে দেয় সামাজিক মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব। মানুষ সামাজিক জীব। আর সমাজ গঠনের প্রাথমিক ইউনিট গড়ার জন্যও বিয়ে করা জরুরি। অন্য কথায় সামাজিকতা রক্ষা, একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসা ও মানব প্রজন্মের ধারা অব্যাহত রাখাও বিয়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। বিয়ে করা ইসলাম ধর্মের অন্যতম বিধান। মহানবীর (সা) হাদিসে বলা হয়েছে, যে বিয়ে করল সে যেন ধর্মের অর্ধেক রক্ষা করল।  

বিয়ের নানা রহস্য বিষয়ে শহীদ অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ মুতাহ্হারি লিখেছেন, মানুষের কতগুলো নৈতিক বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো পরিবার গঠন ছাড়া অর্জন করা যায় না। পরিবার গঠন মানেই হচ্ছে অন্যদের ভবিষ্যৎ বা পরিণতির বিষয়ে আগ্রহী হওয়া... নীতিবাদী ও সংযম-সাধনায় জড়িত ব্যক্তিরা বা চিরকুমাররা এই বিশেষ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার অধিকারী নন বলে জীবনের শেষ পর্যন্ত এক ধরনের অপরিপক্বতা ও শিশু-সুলভতার অধিকারী থেকে যান। আর এ বিষয়টি এক পবিত্র বিষয় ও ইবাদাত হিসেবে বিয়ের প্রতি ইসলামের গুরুত্ব দেয়ার অন্যতম কারণ। ... বিয়ে মানুষকে আত্মকেন্দ্রীকতা থেকে বের করে আনার প্রথম পর্যায় এবং মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যম... এক ধরনের পরিপক্কতা যা বিয়ে ও পরিবার গঠনের আলো ছাড়া অর্জন করা যায় না, বিষয়টি স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অর্জন করা যায় না, নাফস্ বা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ থেকেও অর্জন করা যায় না, নৈশকালীন নামাজ কিংবা মহতী ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন থেকেও অর্জন করা যায় না। এ বিষয় কেবল বিয়ে ও পরিবার গঠন থেকেই অর্জন করা যায়।

বিয়ে হচ্ছে নারী ও পুরুষের ভালোবাসা, প্রশান্তি ও সুখের নীড় গড়ার মাধ্যম। এ বিষয়টিকে তথা পারস্পরিক প্রশান্তি পাওয়ার বিষয়টিকে পবিত্র কুরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবী (সা) যে বললেন,- 'যে বিয়ে করলো সে যেন ধর্মের অর্ধেককে রক্ষা করলো।'- প্রশ্ন হল ধর্মের বাকি অর্ধেক কিভাবে অর্জন করা যায়? মহানবী (সা) বলেছেন, আর ধর্মের বাকি অর্ধেক দায়িত্ব পালনের তথা ধর্মের বাকি অর্ধেক রক্ষার মাধ্যম হল তাক্ওয়া বা খোদাভীতি অর্জন।  -এ ছাড়াও মহানবী (সা) বিয়ে করাকে তাঁর সুন্নাত বলে উল্লেখ করেছেন।  সৎ ও যোগ্য স্ত্রী থাকাকে সৌভাগ্যের নিদর্শন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল  (সা) আরও বলেছেন, পরিবার গঠন কর, তাহলে তা তোমাদের জন্য রিজিক বয়ে আনবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ দারিদ্রের কারণে বিয়ে না করার যুক্তি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, যে পুরুষদের স্ত্রী নেই ও যে নারীদের স্বামী নেই তাদের জন্য স্বামী ও স্ত্রীর ব্যবস্থা কর, সৎ দাস ও দাসীদের জন্যও তা কর। মহান আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদের অভাবমুক্ত করবেন।  

২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে বিয়ে শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। বিয়ে দেহ ও মনে সুস্থতা আনে এবং বিয়ের ফলে আয়ু বেড়ে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন বিয়ের ফলে অকাল মৃত্যুর বিপদ ১৫ শতাংশ কমে যায়। বিয়ের ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে পড়ে। দেখা গেছে হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে যারা বিবাহিত তারা দ্রুত সুস্থ হন এবং ওষুধ তাদের মধ্যে দ্রুত কাজ করে। বিজ্ঞানীরা তিন হাজার ৬৮২ জন হৃদরোগীর ওপর দশ বছর ধরে পরিচালিত সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন: যেসব ব্যক্তির হৃদরোগ রয়েছে ও যাদের বয়স বেশি ও যাদের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ রয়েছে এবং যারা ধূমপায়ী তারা বিবাহিত হওয়ায় এইসব একই সমস্যায় আক্রান্ত অবিবাহিতদের তুলনায় তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার ২৬ শতাংশ কম। এ ছাড়াও যারা বিয়ে করেন তাদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্ণতার মাত্রাও অবিবাহিতদের তুলনায় অনেক কম থাকে। বিবাহিতরা অবসর গ্রহণের পর অবিবাহিতদের তুলনায় বেশি সুখ অনুভব করেন। বিবাহিতা নারীরাও অবিবাহিতাদের চেয়ে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে বেশি সুস্থ থাকেন, বিশেষ করে তারা যদি পারিবারিক মূল্যবোধ ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

 বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রশান্তি লাভ। সুখী পরিবার গড়তে চাইলে দুঃখের দিনে বা বিপদের দিনে হতে হবে ত্যাগী। কিন্তু কেউ যদি কেবল নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে প্রকৃত সুখী পরিবার গড়ার প্রস্তুতি তার নেই। তাই বিয়ের আগেই এসব বিষয়ে প্রস্তুত হতে হবে যুব সমাজকে। যারা ভালবাসা ও নৈতিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল বৈষয়িক স্বার্থের জন্য বিয়ে করে তাদের বন্ধন সুদৃঢ় হয় না।  আবার অনেকেই বিয়ে করেন নিছক ভাবাবেগ বা আবেগ-প্রবণতা নিয়ে। কেউ কেউ বিয়ে করেন ধন-সম্পদ ও বাহ্যিক সৌন্দর্যের মোহে। তারা বিয়েকে অত্যন্ত মুনাফাকামী বা লাভজনক একটি ব্যবসা ও বস্তুগত লেনদেনের মতই মনে করেন।  

দেরিতে বিয়ে করা সমাজের জন্য সংকট বয়ে আনতে পারে। সমাজে অবিবাহিত যুবক যুবতির সংখ্যা বেশি থাকলে তাতে সামাজিক ও নৈতিক সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে।

দেরিতে বিয়ে জনসংখ্যা কমিয়ে দেয় যা অনেক দেশের জন্য বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যথাসময়ে বিয়ের ফলে সমাজে অনৈতিক অপরাধের সংখ্যা কমে যায়। দেখা যায় যে অনেক দাগি আসামি বা অপরাধী বিয়ের পর আর অপরাধ তৎপরতায় জড়িত হয় না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে প্রশান্ত ও প্রফুল্ল জীবনের জন্য বিয়ে করা খুব জরুরি। প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানো ছাড়াও বিয়ের ফলে সন্তানের অধিকারী হওয়াও মানুষের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। মহান আল্লাহ বিবাহিতদের বেশি পছন্দ করেন। সারা জীবন দাম্পত্য-সঙ্গীহীন থাকা নারী ও পুরুষ সমাজ-দেহে যেন এক অপরিচিত বা আগন্তুক ব্যক্তি। ইসলামের প্রত্যাশা হল পরিবারগুলোই হবে সমাজের এক একটি ইউনিট বা একক, নিঃসঙ্গ ব্যক্তিরা নয়।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ