মে ০৫, ২০২৪ ১৯:২৩ Asia/Dhaka

মাদকাসক্তি ও ড্রাগ-আসক্তি কুরে কুরে খাচ্ছে বিশ্বের যুব সমাজের এক বিশেষ ও বিশাল অংশকে। এর কারণগুলো হল দারিদ্র, অজ্ঞতা, অসাধু বা মাফিয়া চক্র ও হতাশা বা উদাসীনতার মত ধংসাত্মক নানা দিক।

মাদকাসক্তি বা মন্দের প্রতি আকর্ষণ কেড়ে নেয় ভুক্তভোগী যুব সমাজের প্রফুল্লতা, আত্মবিশ্বাস ও সৃষ্টিশীলতা এবং এর ধংসাত্মক বিষক্রিয়ায় ওই যুবক বা যুবতীরা এক সময় হয়ে পড়ে অসুস্থ ও অথর্ব বা সমাজের আগাছা ও পরগাছার মতই মূল্যহীন এক বোঝা। মানসিক যন্ত্রণা ও অবসাদের শিকার হয়ে অবশেষে অকাল মৃত্যুই হয় এই শ্রেণীর যুব সমাজের পরিণতি। ভেঙ্গে যায় অনেক পরিবার বা সংসার এবং দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির জন্য বয়ে আনে অফুরন্ত ক্ষতি। মাদকাসক্ত যুবক বা যুবতী গোটা পরিবারের জন্য হয়ে পড়ে সম্মানহানির কারণ।
 
গবেষণায় দেখা গেছে মাদকাসক্তির শুরুটা হয় ধূমপানের মত কোনো কোনো বদ-অভ্যাস থেকে যা প্রথমে তরুণ বা যুব বয়সী কেউ শুরু করে এক ধরনের আনন্দ বা বিনোদন হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে বেশি মাত্রায় ও বার বার নেশা-উদ্রেককারী ওই বস্তু বা ওষুধ ব্যবহারের ফলে সেটা আসক্তিতে রূপ নেয়। প্রথম দিকে এইসব নেশাকর বস্তু অল্প পরিমাণে ব্যবহার করেই নেশার অনুভূতি পায় ব্যবহারকারীরা। কিন্তু পরবর্তীতে নেশাকর বস্তুর ডোজ বা মাত্রা বাড়িয়ে দিতে কিংবা খুব কম সময়ের মধ্যে সেসব বার বার ব্যবহার  করতে তারা বাধ্য হয় শরীরের বর্ধিত চাহিদার কারণে। কিন্তু এ পর্যায়ে নেশা বা আসক্তি তীব্রতর হয়ে পড়ার কারণে তা থেকে মুক্ত হওয়াও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক যুবক বা যুবতী মাদকাসক্তির অজুহাত বা সাফাই দিতে গিয়ে বলে যে, দৈনন্দিন জীবন বা জীবন গড়ার পথে নানা ধরনের ব্যর্থতা ও বঞ্চনার যন্ত্রণা ভুলে থাকার জন্যই তারা মাদকাসক্ত হয়েছে। 

পরিবারের কোনো তরুণ সদস্য বা সন্তান যাতে মাদকাসক্তির শিকার না হয় সে জন্য অভিভাবক বা বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা ও যত্নশীলতায় যেন কোনো ঘাটতি না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকা এবং সন্তানকে বাস্তবতা ও নিজের ভালো-মন্দ বোঝানোর জন্য নানাভাবে সক্রিয় হওয়া। ভালবাসা ও মমতা দিয়ে সন্তানকে বশে রাখা যতটা সহজ কড়া শাসনের মধ্যে রেখে বশে আনা সব সময় সব ধরনের সন্তানের জন্য সহজ নাও হতে পারে। পরীক্ষায় বা কোনো কাজে ব্যর্থতার জন্য সন্তানকে তিরস্কার করা ঠিক নয়। বরং পরীক্ষার আগেই তাকে উপযুক্ত শিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং তাকে দিয়ে বার বার অনুশীলন করানো ও তার মধ্যে আত্ম-বিশ্বাস সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যেসব শিশু শৈশবে মা-বাবার আদর যথাযথভাবে পায়নি তারা অনেক সময় খিটমিটে স্বভাবের হয়ে ওঠে। তাই তাদের ওই স্নেহের ঘাটতি মেটাতে হবে। নৈতিকতা, সদাচার ও ধৈর্য শেখানোর ভালো সময় হল কৈশোর। শৈশব ও কৈশোরে যা শেখানো হয় তা মানুষের মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। 

বেশিরভাগ মাদকাসক্তের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছর। তবে মাদকাসক্তদের মধ্যে ২৫-ঊর্ধ্ব বয়সীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। শিক্ষিত বেকার যুবকদের অনেকেই চাকরি বা কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশ হয়ে মাদকাসক্ত হচ্ছে। তরুণ ও যুব সমাজকে যেসব বিষয় আশাহীন করে এমন বক্তব্য তাদের শোনানো ঠিক নয়। বরং তাদেরকে নানাভাবে জীবন সম্পর্কে আশাবাদী করতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে যে মানুষের সম্ভাবনার দিগন্ত অসীম। মহান আল্লাহর জগত অনেক বড়। তাই কেবল কোনো একবারে  বা কয়েকবার একটি বিশেষ দিকের ব্যর্থতার জন্য হতাশ হওয়ার কোনো অর্থ নেই। বিশেষ কোনো চাকরি পাওয়া না গেলে ব্যবসার পথসহ শত পথ খোলা আছে, যেমন, নানা ধরনের খামার ও কৃষিকাজ ইত্যাদি। এটাও বোঝাতে হবে যে বৈধ যে কোনো কাজ করার মধ্যে কোনো অসম্মান নেই। বরং হালাল উপার্জন সবচেয়ে বড় ইবাদত। যুব সমাজের সঙ্গে আচরণে তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে এবং তাদের স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার চেতনাকে উৎসাহ যুগিয়ে যেতে হবে। আর এভাবে তাদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা হলে তারা কোনো খারাপ কিছুর মধ্যে ডুবে থাকা বা মন্দের আশ্রয় নেয়ার কথা ভাববে না।  

বাবা-মা বা অভিভাবক হিসেবে আপনিই হতে পারেন আপনার কিশোর বা যুবক সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় আর বিশ্বস্ত বন্ধু। অবসর সময়ে তার সঙ্গে আড্ডা দিন। খোঁজখবর নিন তার লেখাপড়া আর সহপাঠীদের সম্পর্কে। মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে ঘুরতে যান। তাহলে সে আপনার সঙ্গে সহজ হতে পারবে আর সব কিছু শেয়ার করতে পারবে। মানসিক কোনো ক্লান্তি বা হতাশা থাকলে মানসিক অবস্থার আলোকে পদক্ষেপ নিন। দৈহিক কিংবা মানসিক শাস্তি দেয়া বা জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ মানসিক বিষণ্ণতা দূর করার জন্য শ্রেষ্ঠ পন্থা হল মানসিকভাবে বিষণ্ণ ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে বিজয়ী বা সঠিক চিন্তার অধিকারী বলে ভাবার সুযোগ দেয়া। এভাবে আপনি তার জন্য বিশ্বস্ত ও তার কল্যাণকামী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এরপর সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে শান্তভাবে ও ধীরে ধীরে বাস্তবতার নানা দিক বুঝিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলতে হবে।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ