মে ০১, ২০২৪ ১৯:৪১ Asia/Dhaka
  • যারা ইসলামভীতি ছড়িয়ে দিতে চায় তারা মনে করে যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণগুলোর ন্যায্যতা রয়েছে
    যারা ইসলামভীতি ছড়িয়ে দিতে চায় তারা মনে করে যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণগুলোর ন্যায্যতা রয়েছে

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে কাউকে তুলে ধরার জন্য অজুহাত খুঁজছিল যাতে তাদের মোকাবেলার করার নামে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের শক্তিশালী উপস্থিতির বিষয়টিকে সবাইকে জানান দেয়া যায়।

এ লক্ষ্যে মার্কিন রাজনীতিবিদরা ইসলামফোবিয়া অর্থাৎ মুসলমান ও ইসলাম আতঙ্কের বিষয়টি জোরেসোরে তুলে ধরার চেষ্টা করছে এবং এ জন্য তারা হলিউডের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে।

ইসলামফোবিয়ার সূত্রপাত ঔপনিবেশিকদের চিন্তা থেকে

ইরানের সম্প্রচার বিভাগের ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের শিল্প ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচালক এহসান আজারকামান্দ বলেছেন: ইসলামোফোবিয়া পশ্চিমা দেশগুলোতে উপনিবেশবাদী চিন্তাভাবনার একটি উপাদান। এই মিডিয়া গবেষকের মতে, রাজনৈতিক ইসলামের চেতনা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে গত এক শ' বছরে ইসলাম ভীতির সূচনা হয়েছিল। অর্থাৎ যখন বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম অভিজাত সমাজে আধুনিকতার বিকাশ ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল এবং শিক্ষাদিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখন পশ্চিমারা ইসলামফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার কৌশল অবলম্বন করে। তারা  ভেবেছিল, মুসলমানরা যদি তাদের পরিচয় পুনরুদ্ধার করতে পারে, নিজেদেরকে এগিয়ে নিতে পারে তবে তা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।

ইসলামভীতি বা ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য বশির ইসমাইলি মার্কিন রাজনীতিবিদদের কোনো না কোনো শত্রু থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছেন:

দুই মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার অবসানের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমেরিকা একক পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভুত হয়। কিন্তু তারা এক ধরনের পরিচয় সংকটে পড়ে এবং বিশ্বের ওপর তাদের একক মোড়লিপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে।

এই অবস্থায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকার কিছু চিন্তাবিদ কমিউনিজমের বিকল্প হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা শুরু করেন। ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তাদের সেই সুযোগ এনে দেয় এবং এমন মোক্ষম সুযোগ তারা আগে কখনেই পায়নি।

এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের নতুন চিন্তাধারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন দেশে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে সন্দেহজনক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা বিশ্বঅঙ্গনে নতুন রূপে আবির্ভুত হয়।

হলিউডের মাধ্যমে যেভাবে ইসলামকে তুলে ধরা হচ্ছে:

ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মিডিয়া বিশেষজ্ঞ আলি দারাবি, ইসলামোফোবিয়া অর্থাৎ ইসলামভীতি ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে হলিউডের ভূমিকা এবং এর পেছনে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর প্রচারণ ধরণ সম্পর্কে কয়েকটি দিক তুলে ধরেছেন।

১. ইসলাম সম্পর্কে বলা হয় যে, এই ধর্ম যুগোপযোগী নয় এবং সেকেলে।

২. ইসলামকে এমনভাবে একটি ভিন্ন অস্তিত্ব হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যার সাথে অন্যান্য সংস্কৃতির কোন মিল নেই।

৩. বলা হয় যে, ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি পশ্চিমা সংস্কৃতির চেয়ে নিম্ন স্তরে রয়েছে।

৪. ইসলামকে কেবল একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

৫. এটাও তুলে ধরা হয় যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ ও ইসলামবিদ্বেষ ন্যায্য এবং ইসলাম পশ্চিমা মূল্যবোধের জন্য হুমকি।

ইসলামের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে যেভাবে হলিউডকে ব্যবহার করা হয়:

ইমাম খোমেনী (র.) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সাইয়্যেদ হোসেন শরফুদ্দিন ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর ক্ষেত্রে হলিউডের ব্যবহৃত পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে লিখেছেন:

তাদের ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে কলঙ্ক লেপন করা, অপমান  অপদস্থ করা এবং উপহাস করা। এই প্রচারণাগুলো ধীরে ধীরে দর্শকদের অচেতন মনে প্রবেশ করেছে এবং মানুষকে প্রভাবিত করছে।

পশ্চিমা চলচ্চিত্রের একটি অংশ ক্রমাগত এটা তুলে ধরার চেষ্টা চালায় যে, মুসলিম নারীরা বিপথগামী এবং অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির যার কাজ কেবল প্রজনন করা।

 

মুসলমানদের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানো:

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর সাইদ রেজা আমেলির প্রস্তাবিত "আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আধিপত্যকামীতা প্রত্যাখ্যান"-এর মডেল ব্যাখ্যা করে আরজু মুরালি, বলেছেন: পশ্চিমা সমাজে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। হলিউড, আইন, নীতিমালা প্রণয়ন, শিক্ষা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমের মুসলমানদের সম্পর্কে, এই বিদ্বেঈ পরিবেশ তৈরি করা হয়।

এখন যা হয়েছে তা হল যে আমরা "মানুষের চেয়ে কম" হিসাবে চিত্রিত হয়েছি এবং সিনেমার শেষে কাউকে মারা যাচ্ছে তা দেখানোর পরিবর্তে এবং সে মারা গেছে বলে সবাই খুশি হওয়ার পরিবর্তে, তারা এখন একজনের বিরুদ্ধে সহিংসতার সংস্কৃতি প্রচার করছে। নির্দিষ্ট শ্রেণী।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ