মানুষের দায়িত্বগুলো তিন ধরনের: ব্যক্তিগত, সামাজিক ও খোদায়ি
সোনালী সময়-৯ (যুব সমাজ ও দায়িত্বশীলতা)
আসল জীবন তো সবুজ প্রাণবন্ত বসন্তেই সীমিত ঝরাপাতার শরতে শ্রীহীন ফুলবন যেন অর্ধ-মৃত!
যৌবনের দিনগুলো মানেই সৌন্দর্য, শিহরণ, উত্তেজনা, উচ্ছলতা, আবেগ এবং নানা ধরনের আনন্দে ভরপুর রঙ্গিন নানা দিন-রাত। জীবনের এই সময়টা সুন্দর ও হাল-ফ্যাশনের পোশাক পরা, সুসজ্জিত থাকা, স্মরণীয় নানা উৎসব এবং মিষ্টি ও উপভোগ্য ভ্রমণের মত আনন্দময় নানা কাজে পরিপূর্ণ থাকে। বেশিরভাগ যুবক-যুবতীর মধ্যে আবেগ ও অনুভূতিই যে কোনো কাজের ইচ্ছার ভিত্তি এবং আগামীকাল বা আগামীতে কি হবে সেদিকে তাদের মনোযোগ নেই। তারা চায় তাদের প্রতিটি দিনই হোক আনন্দময়। তাই তারুণ্যের নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য বা সুবিধার পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দ্য ও বৈচিত্র্যকামিতা, ঐতিহ্য ভাঙা এবং পরিবার ও সমাজের রীতিনীতিকে উপেক্ষা করাও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় বিষয়। তরুণ ও যুব প্রজন্ম দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আনন্দ অনুভব করে না। খুব ভেবেচিন্তে কথা বলা এবং আচার-আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করাকে তারা এড়িয়ে চলতে চায়।
মানুষের দায়িত্বগুলো তিন ধরনের। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ঐশী বা খোদায়ি তথা ধর্মীয় দায়িত্ব। এই তিন ধরনের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন যুব ও তরুণ প্রজন্মের জন্য সাফল্যের উজ্জ্বল ও নতুন নানা দিগন্ত খুলে দেয়। যে শিশু শৈশবেই দায়িত্ব পালনের কাজ শিখতে পেরেছে সে যুব বয়সেও নানা দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হয় এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো ভালোভাবেই সম্পন্ন করে। দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে আত্মবিশ্বাস ও নতুন নতুন দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্যতা এবং সাহসিকতা। মানুষ ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করে স্রস্টার প্রতি ভালবাসার তাগিদে এবং বুদ্ধি-বিবেক খাটিয়ে। সচেতনভাবে ইবাদাত বন্দেগি মানুষকে করে ফেরেশতার চেয়েও মহান। এ পর্যায়ে মানুষ হন মহান আল্লাহর খলিফা।
ধর্মীয় দায়িত্বশীলতা ও অঙ্গীকারবদ্ধতা এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। ইসলামের নবী মহানবী (সা) বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোন বান্দা এক পাও এগুতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে চারটি জিনিস জিজ্ঞাসা করা হবে। তার জামাকাপড় কিভাবে এবং কোন্ পথে জীর্ণ হয়েছে? তার অস্তিত্বের একমাত্র পুঁজি থেকে, অর্থাৎ তার জীবনের বছরগুলো, কোন উপায়ে এবং কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে? তিনি কিভাবে তার সম্পদ সংগ্রহ করতেন এবং কিভাবে ব্যয় করতেন? এবং আমাদের আহলে বাইতের প্রতি তার ভালবাসা ও বন্ধুত্ব কেমন ছিল তথা তিনি আমাদের কতটা জানার চেষ্টা করেছেন ও আমাদের পরিচয় লাভের পর কতটা আমাদের ভালবেসেছেন?
ইবাদাতের মাধ্যমে মানুষ যে আনন্দ ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে তা দিয়ে মানুষ নানা সমস্যা ও সংকটের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। তাই ধর্মীয় দায়িত্ব পালন সব বয়সের ও সব শ্রেণীর মানুষের জন্যই জরুরি। বেহেশত নামক চিরস্থায়ী সৌভাগ্য অর্জনের অন্যতম পন্থা হল এই দায়িত্ব পালন।
যুব ও তরুণ প্রজন্মের জন্য দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলো বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও আত্ম-বিশ্বাস জোরদারের সহায়ক। তাদের মধ্যে যে সৃষ্টিশীলতা ও নিত্য-নতুন চিন্তাধারা বা উদ্ভাবনী ভাবনা থাকে সেসবকে কার্যকর করার বা পরীক্ষা করতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া অভিভাবক মহলের দায়িত্ব। একটি সমাজের সবাই যদি দায়িত্বশীলতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয় তাহলে সে সমাজের অগ্রগতি অপরিহার্য এবং সে সমাজে অপরাধ বলতে কিছু ঘটবে না। যুব ও তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্বশীলতা শেখাতে হলে প্রথমে অভিভাবক মহলকে পরিবারে ও সমাজে তা বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে।দায়িত্বশীলতার চেতনার সঙ্গে দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও বিবেকের সচেতনতা জরুরি। মানুষ যদি তরুণ ও যুব বয়সেই এসব বিষয়ে অভ্যস্ত হয় এবং চিন্তাশীল হয় তাহলে ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে দায়িত্বশীল হওয়া কঠিন নয়। ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।
হতাশা, ভয় বা ভীরুতা, অলসতা, অকর্মন্যতা, আরামপ্রিয়তা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও উৎসাহহীনতা কিংবা ভাগ্যের ওপর সব কিছু চাপিয়ে দেয়া দায়িত্বশীলতার চেতনার জন্য ধ্বংসাত্মক। অন্যদিকে দৃঢ় সংকল্প বা আমি অবশ্যই সফল হব-এমন মনোভাব হচ্ছে সকল জড়তা ও অবসাদ কাটিয়ে ওঠার চাবিকাঠি। এ প্রসঙ্গে জনৈক কবির এ বাণী মনে রাখা ভালো: 'পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, একবার না পারিলে দেখো শতবার"! মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা বা দোয়া ও মুনাজাতও এ জন্যই অপরিহার্য ধর্মীয় দায়িত্বের অংশ। মহান আল্লাহ সব সময় আমাদেরকে দেখছেন এই অনুভূতি আমাদেরকে পাপ থেকে দূরে রাখতে এবং দায়িত্বশীল হতে সহায়তা করে।
যুব ও তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্বশীল করতে তাদের সামনে অধ্যবসায়ী, ধৈর্যশীল ও সংগ্রামী ব্যক্তিদের সাফল্যের কাহিনী তুলে ধরা যেতে পারে। এ ছাড়াও পরোক্ষভাবে তাদেরকে এদিকে উৎসাহ দেয়াটা প্রত্যক্ষ উৎসাহের চেয়ে বেশি কার্যকর বলে অনেকেই মনে করেন। মোটকথা যুব ও তরুণ সমাজকে এটা ভালোভাবে বুঝাতে হবে যে তারা নিজের প্রতি, পরিবার, দেশ ও সমাজের প্রতি এবং আল্লাহর প্রতি দায়িত্বশীল। আর এসব বিষয়ে একদিন তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।