সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ ১৪:৫৩ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো প্রাচীন একটি  ইরানি গল্প। গল্পটি হলো:

বেশ প্রাচীনকালে আহমাদ নামে এক ধনী লোক ছিল। সে তার ছেলেপুলে স্ত্রী পরিজন নিয়ে একটি শহরে বসবাস করতো। এক রাতে আকাশ ছিল তারায় তারায় ভরা এবং একেবারেই পরিষ্কার। তারা সেইরাতে ঘরের উঠোনে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু আহমাদের ঘুম আসছিল না।

তারাভরা রাতের স্বচ্ছ আকাশের চমৎকৃতি সে সকাল পর্যন্ত রাতজেগে কাটাতে চাচ্ছিলো। তাকিয়ে তাকিয়ে তারার ঝলমলে মিটিমিটি সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাচ্ছিলো। একরকম কল্পনার জগতে ডুবে যাচ্ছিলো সে। হঠাৎ একটা শব্দ কানে এলো তার। সে ভেবেছিলো এটা হয়তো তার কল্পনার ভ্রান্তি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারও সেই শব্দ তার কানে এলো। এবার সে কান খাড়া করে শুনলো এবং বুঝতে পারলো ঘরের ছাদ থেকে শব্দটা আসছে। এবার পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শব্দ শুনে বুঝলো: ছাদে বেশ কয়েকজন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে। আহমাদ সতর্কভাবে কান পাতলো তাদের কথাবার্তার বিষয়বস্তু বুঝতে।

জি, চোরেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিল। একজন বাকি চোরদের বলছিল: ওরা তিন জন। একটা বাচ্চা আর দুইজন বড়। আমরা খুব সহজেই ঢুকতে পারবো এবং নিশ্চিন্তে যা চাইবো চুরি করতে পারবো। আমাদের দুইজন নীচে ঘরের দরোজার পাশে থাকবে। তারা গলির দিকে লক্ষ্য রাখবে। একজন ছাদের ওপরে সতর্কভাবে থাকবে। আমি ঘরের ভেতরে ঢুকবো এবং মালামাল লুট করে গুছাবো। সাবধান, কোনোরকম ছোটোখাটো শব্দও যেন না হয়। আহমাদ ভালো করে চোরদের কথাবার্তা কান পেতে শুনলো। মোট চারজন চোর এসেছিল চুরি করতে আর আহমাদ খালি হাতে একা।

সে ভয় পাচ্ছিলো যদি চীৎকার করে তাহলে বৌ-বাচ্চার কোনো ক্ষতি না করে বসে। তাকে চুরি করার আগেই যা কিছু করার করতে হবে। কিন্তু কী করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। হঠাৎ তার কী মনে হলো-সে আস্তে তার বৌকে ডাকলো। বৌ জবাব দিলো: কী হয়েছে? কয়টা বাজে? আহমাদ বললো: 'না, কিছু না, এমনিই। ভয় পেও না। ছাদে কয়েকজন লোক আছে'। এ কথা শুনেই ভয়ে বৌ-য়ের কণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হলো। সেরকম কণ্ঠেই বললো: চোর? হেলপ, হে আল্লাহ সাহায্য করো! আহমাদ বৌয়ের মুখে হাত রেখে বললো: শান্ত হও! ভয়ের কিছু নেই। শোনো কী বলি! মহিলা এক ফাঁকে আড়চোখে দেখার মতো ছাদের দিকে তাকালো। কাউকেই দেখলো না।

আহমাদ তার বৌকে বললো: একটা প্ল্যান আছে। শোনো! তুমি ছাদের ওপর চোরেরা শুনতে পায় তেমন জোরে শব্দ করে আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করবে। প্রথম প্রশ্ন: তুমি এতো মালামাল ধন সম্পদ কোত্থেকে কীভাবে কামিয়েছো? বৌ যদিও ভয়ে কাঁপছিল তবুও তাই করলো। বললো:  আহমাদ! এতো বছর একত্রে সংসার করছি। তুমি তো গরীব ছিলে! এখন এতো ধন-সম্পদের মালিক হলে কীভাবে? আহমাদ সেরকম জোরেই বৌয়ের কথার জবাব দিলো, যাতে চোরেরা শুনতে পায়। বললো: এই প্রশ্ন করো না দয়া করে! জবাব দিতে পারবো না! বৌ বললো: আমি তোমার বৌ। কেন পারবে না? আমিই যদি না জানি তাহলে জানবে কে? আহমাদ বললো: আচ্ছা ঠিক আছে অন্য সময় বলবো। রাতের বেলা কে কোত্থেকে আমাদের কথা শুনে ফেলে আর আমার ধনী হবার গোপন রহস্য জেনে যায়-সেজন্য পরে বলবো।

বৌ বললো: গোপন রহস্য! কীসের রহস্য? এরকম কোনো রহস্য যদি থেকেই থাকে অবশ্যই আমাকে বলতে হবে। আহমাদ বললো: আচ্ছা শান্ত হও! বলছি, বলছি! ঘরে যতো সম্পদ দেখতে পাচ্ছো-সবই চুরির মাল। চুরির রহস্যটা হলো-যখনই আমি কোনো ধনী লোকের ঘরের ছাদে যেতাম চুরি করতে তখন সাত বার শোলাম, শোলাম… এই শব্দটি উচ্চারণ করতাম। তারপর নিশ্চিন্তে সবার চোখের আড়ালে ছাদের দরোজা ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়তাম এবং জিনিসপত্র চুরি করতাম। সে সময় আবারও সাত বার 'শোলাম শোলাম' শব্দ করতাম এবং ছাদে যাবার পথ ধরে লাফিয়ে ছাদে উঠে যেতাম। এরকম যাদুকরি মন্ত্রের কারণে আমার যাওয়া-আসার ব্যাপারে কেউ কখনও টেরই পেত না। আমি যেখানে খুশি সেখানে সহজেই চলে যেতে পারতাম।

এখন আমার সম্পদ অর্জনের রহস্য তো জানলে। এবার ঘুমাও! রাত অনেক হয়েছে। দু'জনই ঘুমিয়ে পড়লো। আহমাদ খুব সতর্ক ছিল। তার বৌ ছিল উদ্বিগ্ন। দুইজন চোর ছাদের ওপর অপেক্ষা করছিল কখোন স্বামি-স্ত্রী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়। চোরদের সর্দার বললো: তোমরা সবাই নীচে বাকিদের কাছে গিয়ে আমার অপেক্ষায় থাকো! আমিও ওই মন্ত্র পড়ে ছাদের দরোজা খুলে সবার অলক্ষ্যে চুরির কাজ সেরে আসছি। এই বলে সে সাত বার 'শোলাম শোলাম' মন্ত্র পড়ে চলে গেল ছাদের দরোজায়। সে ভেবেছিলো তাকে কেউ দেখতে পাবে না এবং নিশ্চিন্তে সে দরোজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকে যাবে। খুশিতে তাড়াহুড়ো করে সে দরোজার কাছে গেল এবং সশব্দে দরোজা খুলে গেল। চোরের সর্দার ভারসাম্য হারিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠানে পড়ে গেল। আহমাদ এই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিল। লাঠিটা নিয়ে চোরকে ভালোমতো আপ্যায়ন করালো।

চোরের সর্দার তো চীৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। ওই চীৎকার শুনে তার জন্য অপেক্ষমান সহযোগী চোরেরা দ্রুত পালিয়ে গেল। লাঠির আঘাতে আঘাতে নীল হয়ে যাওয়া চোর অনুনয় বিনয় করে বললো: আর মেরো না! আহমাদ বললো: তুই কে বল? এতোরাতে আমার এখানে এসছিস? চোর আহ্ উহ্ করতে করতে বললো: আমি সেই বোকা যে তোমার কথা বিশ্বাস করে এই বিপদে পড়লো। বিরক্ত আহমাদ বললো: আমি আমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বছরের পর বছর ধরে যা কিছু জমিয়েছি, তুই এক রাতে সেইসব নিয়ে যাবি? আহমাদের গলার আওয়াজ শুনে প্রতিবেশিরাও এগিয়ে এলো। তাদেরই একজন দারোগাকে খবর দিলো এবং দারোগা এসে চোরকে ধরে নিয়ে চলে গেল। প্রতিবেশিরাও যে যার বাসায় ফিরে গেল।#
পার্সটুডে/এনএম/২০/৯৮
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

 

ট্যাগ