অক্টোবর ০৮, ২০২৩ ১৪:৩৮ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: সিংহের লেজ নিয়ে খেলা করো না। এই প্রবাদের পেছনে দারুণ একটি গল্প আছে। ওই গল্পটি এরকম:

বনের রাজা হিসেবে মানুষ সিংহকেই মনে করে। কারণ সে ভয়ংকর শিকারী প্রাণী। বনের নিরীহ প্রাণী শিকার করেই সে তার ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটায়। একদিন এরকম এক সিংহ বনের ভেতর একটা গাছের ছায়ায় ঘুমিয়েছিল। আবহাওয়া ছিল বেশ গরম। সিংহের তাই ভালো লাগছিল না। ঘুমানোর চেষ্টা করছিল ঠিকই কিন্তু ঘুম আসছিল না। চোখ বুজে শুয়ে ছিল। ঘুম আসি আসি করে আবার ছুটে যায়। এরকম ঘুম আর তন্দ্রার মাঝে একটা ইঁদুর গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো বাইরে। এসেই সে সোজা চলে গেল সিংহের কাছে। ইঁদুরের বাসা তো মাটির অনেক নীচে গর্তের ভেতর। সেখানে মোটামুটি ঠাণ্ডাই বলা চলে। সে কারণে ইঁদুর ভালোমতোই ঘুমিয়ে নিতে পেরেছে। তাই ফুরফুরে লাগছিল তার কাছে। তাই সে তার একজন খেলার সঙ্গী খুঁজছিল-একটু খেলাধুলা করতে। তার নজর পড়লো সেই সিংহের ওপর। 

সিংহের ওপর নজর পড়তেই ইঁদুর মনে মনে বললো: এই তো আমার খেলার সঙ্গী পাওয়া গেল। যদিও সে আমার চেয়ে আকারে অনেক বড় তবু খেলার সঙ্গী হিসেবে ঠিক আছে। ইঁদুর তাই সিংহকে দুই-তিনবার ডাকলো। সিংহ কোনো সাড়াই দিলো না। ইঁদুরও আর ডাকাডাকি করলো না। বরং সিংহের লেজ বেয়ে পিঠের ওপরে উঠে বসলো। সিংহের কেশরের বিশাল বিশাল চুল ধরে খেলতে শুরু করলো, ঝুলতে শুরু করলো। লেজকে স্লিপার বানিয়ে বারবার স্লিপ কাটতে লাগলো। মোটকথা সিংহের বিশাল দেহ নিয়ে খেলতে খেলতে সে মজাই পেলো। সিংহ কিন্তু ঘুমাচ্ছিল না। প্রথম থেকেই সে ইঁদুরের ডাক শুনতে পেয়েছিল কিন্তু ক্লান্তির কারণে জবাব দেয় নি। তাই কিছুটা সময় সে ইঁদুরের খেলাধুলা সহ্য করলো এবং মনে মনে বললো: এক্ষুণি ইঁদুর ক্লান্ত হয়ে চলে যাবে।


কিন্তু ইঁদুরের মধ্যে ক্লান্তির কোনো ছাপই দেখা গেল না। সে তো গেলই না বরং নতুন করে কী নিয়ে খেলা যায় চিন্তা করছিল। সিংহের আর সহ্য হচ্ছিল না। হঠাৎ করে নড়েচড়ে উঠে পাঞ্জা দিয়ে থাবা মেরে ইঁদুরকে ধরে ফেললো। ইঁদুর তখন বুঝলো পারলো কী বিপদই না সে ডেকে এনেছে। ভীষণ ভয় পেয়ে গেল সে। এতোই ভয় পেলো যে গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিল না। সিংহ ইঁদুরের দিকে তাকিয়ে বললো: এবার দেখাচ্ছি মজা! আমার লেজ-কেশর নিয়ে মজা করেছো! কিন্তু তোর মতো পিচ্চি ইঁদুরকে কী করি-তুই তো বড়ও না যেন খেয়ে ক্ষিদে মেটাবো আবার আদব কায়দাবানও না যে ছেড়ে দেবো। তারচেয়ে বরং দূরে ছুঁড়ে মারবো যাতে তোর হাড্ডি-মাংস একসাথ হয়ে থেতলে যাস! তোকে দেখে আর কোনো ইঁদুর যাতে সিংহের লেজ-কেশর নিয়ে খেলা করার কথা ভাবতেও না পারে।

বেচারা ইঁদুর যখন দেখলো মৃত্যু থেকে আর কয়েক পা মাত্র বাকি আছে, মুখ খুললো এবং কান্নাকাটি করে অনুনয় বিনয় করে বললো: হে মহান সিংহ! আপনি এই বনের রাজা! আর আমি এক বোকা ইঁদুর। আপনাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। আমি তোমার সঙ্গে খেলা করতে চেয়েছিলাম যাতে আপনি আনন্দ পান। আমাকে ক্ষমা করে দিন। এতো বেশি কান্নাকাটি আর অনুনয় বিনয় করলো ইঁদুর যে সিংহের মনটা গলে গেল। ইঁদুরকে মাটিতে রেখে দিয়ে বললো: আমার চোখের সামনে থেকে ভাগ! ইঁদুর সিংহ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বললো: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করি সময় সুযোগ পেলে আপনার এই উদারতার প্রতিদান দেবো।

ইঁদুরের কথা শুনে সিংহ হেসে দিয়ে বললো: ওরে ছ্যাঁচড়া পিচ্চি ইঁদুর! তুই আমার কী কাজে আসবি আবার! যাই হোক, এরপর কেটে গেল বেশ কিছু দিন। আবারও একদিন বনের খারাপ আবহাওয়ায় সিংহ ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়েছিল। হঠাৎ জালে আটকা পড়ে গেল সিংহ। শিকারী ওই সিংহের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নজর রাখছিল। তাই শিকারী জানতো যে সিংহ এই সময়টায় প্রতিদিন এই জায়গায় এসে বিশ্রাম নেয়। তা্ শিকারী সিদ্ধান্ত নেয় সিংহটাকে ফাঁদে ফেলবে আটকাবে। সিংহ চোখ মেলতেই বুঝে ফেললো সে শিকারের জালে আটকা পড়েছে। সিংহ ব্যাপক গর্জে উঠলো। চেষ্টা করলো জাল ছিঁড়ে বের হতে চেষ্টা করলো। সিংহের গর্জন শুনে শিকারী নিজেও ভয় পেয়ে একটু পিছু হটে গেল। কিন্তু সিংহ কিছুতেই জাল থেকে বের হতে পারলো না।

সিংহের গর্জন ইঁদুরের কানে গেল। ইঁদুর তার গর্তে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। দ্রুত বেরিয়ে এসে দেখতে চাইলো কী হয়েছে। যখন দেখলো সিংহ জালে আটকা পড়েছে, সিংহকে বললো: চিন্তা করবেন না! আপনার উপকারের প্রতিদান দেওয়ার সময় এসেছে। আপনি আগের মতোই গর্জন করতে থাকুন যাতে শিকারী কাছে ভিড়তে সাহস না পায়। আমিও যত দ্রুত সম্ভব জাল কেটে আপনাকে বের করার চেষ্টা করছি। ইঁদুর জাল কাটতে শুরু করে দিলো। শিকারী দূরে অপেক্ষা করছিল সিংহের গর্জন কখোন থামে আর ক্লান্ত হয়ে বাঁচার আশা ছেড়ে দেয়। এরইমধ্যে ইঁদুরের কাজ শেষ হয়ে গেল। সিংহকে জাল থেকে বের হতে দেখে শিকারী ভয়ে গাছে উঠে গেল।

ইঁদুর ভীষণ খুশি হলো সিংহের জন্য কিছু একটা উপকার করতে পেরে। নাচতে নাচতে সে চলে গেল তার গর্তের বাসায়। ওইদিন থেকে যে কোনো বিপজ্জনক কাজে হাত দেয় অথচ সেই বপিদ সম্পর্কে সে তেমন অবহিত নয় এই কথাটি উচ্চারণ করা হয়: সিংহের লেজ নিয়ে খেলা করো না। কালক্রমে এই কথাটি মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে হতে আজ প্রবাদ-বাক্যে পরিণত হয়েছে।

পার্সটুডে/এনএম/৮/১০৯

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ
 

 

ট্যাগ