নভেম্বর ১০, ২০২৩ ২১:০১ Asia/Dhaka

আসছেন ত্রাণকর্তা/ মন বলল সে আনন্দের বার্তা। পাচ্ছি সুবাস পবিত্র দেহের  /শোনো স্নিগ্ধ মিষ্টি হাসির ধ্বনি তাঁদের, ঈসা ও মাহদীর আগমনী বার্তা।/বিরহ-বেদনায় কেঁদোনা আর, করোনা হাহাকার ‘ফাল’ খুলে দেখো আসছেন মুক্তির কর্ণধার / মজলুম আর বঞ্চিতের ত্রাণকর্তা।

-  গত পর্বে আমরা বলেছিলাম মানবজাতি একজন সৎ ও শক্তিশালী বৈশ্বিক ত্রাণকর্তার আগমনের প্রত্যাশা করছে যাতে মানবীয় অবস্থা প্রত্যাশিত পর্যায়ে উন্নত হয়। আর এ ধরনের প্রত্যাশা মানুষের সহজাত প্রকৃতিরই দাবি। মানুষের সহজাত প্রত্যাশাগুলোর অন্যতম হল জুলুম ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। মানবজাতি তার সৃষ্টির সূচনা থেকে যুগ যুগ ধরে ন্যায়বিচারের দাবিতে সংগ্রাম করেছে। যুগে যুগে বলদর্পী শোষক-চক্র ও খোদাদ্রোহী জালিম শক্তিগুলো গায়ের রং, ভাষা, ধর্ম ও বংশ ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছে বৈষম্য। শ্রেষ্ঠত্বের মিথ্যা দাবি তুলে তারা সমাজের দুর্বল শ্রেণী ও সাধারণ জনগণের অধিকার করেছে হরণ। তারা কখনও কখনও বহু মানুষকে করেছে দাস ও অনেক মানুষকে করেছে হত্যা। এভাবে সমাজের বেশিরভাগ মানুষকে দারিদ্র ও বঞ্চনার মধ্যে রেখে অল্প সংখ্যক লোক সম্পদের পাহাড় গড়েছে এবং অধিকারী হয়েছে বাহ্যিক সম্মানের।

 বর্তমান বিশ্বেও বঞ্চনা ও বৈষম্য দেখা যায়। কোনো কোনো দেশ তাদের শক্তি ও প্রভাব খাটিয়ে প্রকাশ্যেই লুট করছে অন্যান্য দেশের সম্পদ। লুণ্ঠন নির্বিঘ্ন করতে তারা দেশে দেশে ঘরোয়া সন্ত্রাস, বিভেদ আর হানাহানি ঘটাচ্ছে ও জাতিতে জাতিতে লাগিয়ে দিচ্ছে যুদ্ধ। ফলে এইসব দেশ দিনকে দিন হচ্ছে দরিদ্রতর  এবং হারাচ্ছে নিরাপত্তা।  

এ অবস্থায় মানুষের ন্যায়বিচারকামী প্রকৃতি এমন এক মহামানবের আবির্ভাবের প্রত্যাশা করছে যিনি মানব-সমাজ থেকে উচ্ছেদ করবেন ধনী ও দরিদ্রের, সাদা ও কালোর বৈষম্য এবং জাতিগত ও বংশীয় বৈষম্যসহ সব ধরনের বৈষম্য। এমন মহামানব সব ধরনের জুলুম, আগ্রাসন ও অবিচারকে করবেন নির্মূল।  আর এমন ন্যায়বিচারকামী মহামানবই হলেন মানবজাতির প্রতিশ্রুত শেষ ত্রাণকর্তা। তাঁর বিশ্ব-বিপ্লবের অন্যতম উদ্দেশ্যই হবে সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যাতে সবার জন্য বয়ে আনা যায় সমৃদ্ধি, শান্তি, মৈত্রী, একতা, স্বাধীনতা, প্রশান্তি ও সাম্য। 

সমাজের সর্বত্র ন্যায়বিচার যদি প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে বন্ধ হবে মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্ব এবং তারা স্বাধীনভাবে নিজের ও নিজ দেশ বা জাতির ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। মানুষের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল। শান্তি প্রতিষ্ঠারও পূর্ব-শর্ত হল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। প্রত্যেক জাতি যদি তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করে ও তাতে সন্তুষ্ট থাকে তাহলে যুদ্ধ ও আধিপত্যকামিতার কোনো অস্তিত্ব থাকতো না।  যুগে যুগে মানুষ অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু অবিচার আজও দূর হয়নি। যুগে যুগে সংস্কারক বা চিন্তাবিদরাও শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য বিপ্লবও করেছেন। কিন্তু এসব বিপ্লবের প্রায় সবই ব্যর্থ হয়েছে বা লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে। আদর্শ রাষ্ট্র বা সমাজ গঠনের তত্ত্ব দিয়ে গেছেন নানা দার্শনিক বা চিন্তাবিদ। যেমন, গ্রীসের প্লেটো, ইরানি মনীষী ফারাবি, ইতালিয় চিন্তাবিদ টমাস কাম্পানেলা, জার্মান চিন্তাবিদ কার্ল মার্কস, ফরাসি কবি ও লেখক ভিক্টর হুগো প্রমুখ। কিন্তু তাদের আদর্শ রাষ্ট্র বা আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ বলদর্পি শক্তিগুলো জনগণের সুখ ও শান্তির যে কোনো সংস্কারকে তাদের স্বার্থের বিরোধী দেখতে পেয়ে সেসব বাস্তবায়নে বাধা দিয়েছে।  

বর্তমান যুগের দিকে তাকালেও আমরা দেখতে পাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও বিশ্বে এখনও রয়ে গেছে ব্যাপক বৈষম্য, দারিদ্র, পরিবেশ দূষণ, চারিত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, শোষণ, যুদ্ধ আর অশান্তি। শোষণ আর লুণ্ঠন নিয়ে চলছে আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর মধ্যে লড়াই ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কেবল দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৮ কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা যুদ্ধে মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ এবং কোনো কোনো অঞ্চলে এখনও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি বড় শক্তির হাতে এত বিপুল সংখ্যক পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যে সেসব ব্যবহার করে পৃথিবীকে কয়েক বার ধ্বংস করা যাবে।  বিশ্বের প্রায় দশ শতাংশ মানুষ নিরঙ্কুশ দারিদ্র-সীমার নীচে বসবাস করছে এবং তাদের অর্ধেক বসবাস করছে সাধারণ দারিদ্র-সীমার নীচে। 

মাত্র ২৬ জন ব্যক্তির কাছে রয়েছে বিশ্বের মোট অর্থ-সম্পদের অর্ধেক। অথচ বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ পৃথিবীর মাত্র ১৫ শতাংশ সম্পদের অধিকারী। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত নানা মতাদর্শ এইসব সংকট সমাধান করতে সক্ষম হয়নি। কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র খুব দ্রুত নিজের অকার্যকর অবস্থা তুলে ধরেছে এবং বৈষম্য দূর করার দাবি আর করতে পারছে না এই মতবাদ বেশ অনেক বছর ধরে। লিবারেলিজমও ব্যর্থ। কারণ বর্তমান বিশ্বের সংকটগুলোর জন্য লিবারেলিজমই দায়ী। এইসব সংকটের বিস্তার ঠেকাতে পারছে না কথিত উদারতাবাদ নামক এই মতবাদ। বিশ্বে নয়া প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রশংসনীয় অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র, দুর্নীতি ও বৈষম্য-সৃষ্ট ব্যথা-বেদনা  কমতে পারছে না এইসব প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, বরং প্রায়ই জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা অপব্যবহার ঘটছে। ফলে এক শ্রেণীর মানুষ এইসব অসহনীয় সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেব এই আশায় বুক বেঁধে আছেন যে এমন একজন বিশ্ব-মহামানব বা সংস্কারক আসবেন যিনি অবসান ঘটাবেন সব বঞ্চনা ও বৈষম্যের এবং ন্যায়বিচার, মানবতা ও জনকল্যাণ আর সমৃদ্ধিকে দান করবেন পূর্ণতা।

মোটকথা বিশ্বের বিরাজমান নানা সংকটই একজন সর্বাত্মক সংস্কারকের আবির্ভাবের আশা জোরদার করে তুলেছে। এই মহামানব বলদর্পিদের দাপট ও প্রতাপকে করবেন চুরমার। তিনি উচ্ছেদ করবেন শির্ক ও কপটতাকে শেকড়সহ। সব পাপী ও খোদাদ্রোহীকে তিনি নিশ্চিহ্ন করবেন এবং বিভেদ ও অনৈক্যের সব শাখা-প্রশাখাও কেটে দিবেন তিনি। সংকীর্ণ মনোভাব ও প্রবৃত্তিপূজার রোগগুলো তিনি সারিয়ে তুলবেন এবং অপবাদ ও মিথ্যাচারের ফাঁদগুলোও ধ্বংস করবেন তিনি। তিনি তথা ইমাম মাহদি (আ) বিদ্রোহী ও উদ্ধত সীমালঙ্ঘনকারীদেরও করবেন নির্মূল। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ