নভেম্বর ১১, ২০২৩ ১৬:৫০ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ১১ নভেম্বর শনিবারে কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর অনলাইন ভার্সন ও ই পেপারের বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • অভিমত নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলেছে মনে হচ্ছে না-প্রথম আলো
  • দিল্লি-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার পর হাসিনা সরকারের স্বস্তি-ইত্তেফাক
  • বাংলাদেশে নির্বাচন: চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে যা বলল বিএনপি-যুগান্তর
  • আমরা উন্নয়নের নামে অত্যাচার-লুটপাট করছি, উন্নয়ন করছি না: জি এম কাদের-ডেইলি স্টার বাংলা
  • তফসিল ঘোষণা হলেই হরতাল-অবরোধ: বাম জোট/একতরফা নির্বাচনের তফসিল দেশবাসী মানবে না: বাসদ–মানবজমিন অনলাইন

কোলকাতার শিরোনাম:

  • রহমানের ‘লৌহ কপাটে’ ক্ষুব্ধ চুরুলিয়ার কাজী পরিবার, হুঁশিয়ারি আইনি পদক্ষেপের-সংবাদ প্রতিদিন
  • নজরুলের সুর বিকৃতি, সরব দুই বাংলা-গণশক্তি
  • নিয়োগ দুর্নীতিতে সব বড় মাথাকে এখনও সিবিআই গ্রেফতার করেনি কেন? প্রশ্ন শীর্ষ কোর্টের-আনন্দবাজার পত্রিকা

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক  উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে আন্তর্জাতিকমহলের অবস্থান সম্পর্কিত খবর আজকের জাতীয় দৈনিগুলোর অনলাইনের ভার্সনের প্রধান খবর হিসেবে পরিবেশিত হয়েছে। প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনের  খবর- ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে (২ +২) আলোচনা শেষে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নেই। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি, সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট। দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লির অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছেন। নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা কিছু শব্দে খুব পরিষ্কার। 

বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’, ‘স্থিতিশীলতা’, ‘শান্তিপূর্ণ’ এই শব্দগুলোর পাশাপাশি একটি ‘প্রগতিশীল’ দেশ নিয়ে ভারত তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা স্পষ্ট করেই তুলে ধরেছে। কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই বাংলাদেশ নিয়ে ভারত তাদের অগ্রাধিকার কোথায়, সেটা জানিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় কী বলেছে, সেটা আমাদের জানা নেই। তার অর্থ হতে পারে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত আছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সম্প্রতি বলেছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে।আর যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান ভারতকে জানিয়েছে। ফলে দিল্লির সর্বশেষ বৈঠকে দুই দেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

দৈনিকটির অপর একটি অভিমত কলাম লিখেছেন ও পি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেছেন, ভারত যেমন নিজের দেশে কারও হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করে না, তেমনি তৃতীয় কেউ কারও ওপর চাপ সৃষ্টি করুক, সেটাও অনুমোদন করা ভারতের পক্ষে অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত বারবার এই কথা বোঝাতে চেয়েছে। এবারেও তা বোঝানো হলো। যুক্তরাষ্ট্র বুঝবে কি না, তাদের ব্যাপার।বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ভারতের ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ। এই ঘনিষ্ঠতা গত ১৫ বছরের। বেড়েছে পারস্পরিক নির্ভরতা। কোনো দেশই চাইবে না বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ুক। স্বাভাবিকভাবে ভারতও তা চায় না। ভারত চায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক। দেশটা আরও সমৃদ্ধিশালী হোক। অসাম্প্রদায়িক থাকুক। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক।

ভারত গণতন্ত্রকে সব সময় সমর্থন জানিয়ে এসেছে। সব সময় চেয়ে এসেছে গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক। বাংলাদেশের নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক, সেটাই ভারতের কাম্য। তেমন নির্বাচন করার নিদর্শনও বাংলাদেশে রয়েছে। কাজেই এই বিষয়ে সন্দেহ করা অর্থহীন।

সেই সন্দেহে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করবে, সেটা ভারত কখনো নীতিগতভাবে সমর্থন বা অনুমোদন করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রকে সে কথা এর আগেও ভারত জানিয়ে দিয়েছে।

ইত্তেফাকের অনলাইন ভার্সনে লেখা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র 'টু প্লাস টু' সংলাপে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত 'খুব স্পষ্টভাবে' তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। তার এ মন্তব্যের পরে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনের খবর-সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন যে, তার দেশে বাংলাদেশের 'সংবিধান অনুযায়ী' আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায়। চীনা কূটনীতিকের এই মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্খার প্রতিফলন নয় বলে মনে করে বিএনপি। দৈনিকটিতে আরো লেখা হয়েছে, বিএনপি চীনকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির প্রতি আলোকপাত করবার জন্য। দেশের মানুষের চলমান সংগ্রামে বিএনপি সর্বাত্মক সমর্থন প্রত্যাশা করে, যেন অচিরেই বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন হয়। দৈনিকটির অপর এক খবরের শিরোনাম-বিএনপিকে যে পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, ‘আমি জানি, আমাদের বিরোধী দল (বিএনপি) উন্নয়নটা চোখে দেখে না। এদের আর বলার কিছু নেই, চোখ থাকতে যারা অন্ধ, তাদের আর কী বলব? তাদের একটা পরামর্শ দিতে পারি— আমি কিন্তু ঢাকায় একটা আধুনিক আই ইনস্টিটিউট করেছি, চোখ থাকতে যারা অন্ধ, তারা সেখানে গিয়ে চোখটা দেখাতে পারে। মাত্র ১০ টাকা লাগে, বেশি লাগে না।’

পোশাকশিল্পে অস্থিরতা ‘ঘাতক তুমি সরে দাঁড়াও, এবার আমি লাশ নেব না' প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনের এ শিরোনামে লেখা হয়েছে, গাজীপুরের পোশাককর্মী আঞ্জুয়ারা গুলিতে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু কি পোশাককর্মীদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে? স্বল্প বেতনের কারণে দুই সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে পারেননি। মা–বাবা থাকতেও অনাথের জীবন যাপন করছে তারা। তাদের মতো অসংখ্য পোশাককর্মীর সন্তানদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের পথ কি আমরা করে দিতে পারছি? লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা তার অভিমত কলামে আরও লিখেছেন, আজকাল পুলিশের গুলির খবরে আমাদের কোনো হেলদোল হয় না। বিষয়টা যেন আমাদের গা–সওয়া হয়ে গেছে।পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে, গ্রাম থেকে আসা আঞ্জুয়ারা খাতুনেরা গুলি খেলে কারও মনে কোনো রেখাপাত করে না। তাঁরা হয়ে যান অনেক সংখ্যার ভিড়ে নিতান্তই আরেকটি সংখ্যা। এখন এসব নিহত মানুষকে কেউ আর শহীদও বলে না।

আঞ্জুয়ারার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ‘গবেষণা’

‘মরদেহ সরিয়ে ফেলা’, ‘গুম করে দেওয়া’, ‘গুলিতে নয়, হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে পদপৃষ্ট হয়ে মারা গেছে’—এমন প্রচার ১৯৫২ সালের মতোই প্রাচীন। মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকে সেটা স্পষ্ট হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, দেশ স্বাধীন হলে মরদেহ নিয়ে এসব কূটকাচালি বন্ধ হবে। নাহ, আমাদের সেই ধারণা ভুল। আঞ্জুয়ারার মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ পুরোনো সেই পথে হাঁটছে। বলছে, তিনি গুলিতে নয়, মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন। গুলিতে মরলে নাকি তদন্ত হয়, কার গুলিতে মরেছে তাকে শনাক্ত করতে হয়। সংবিধান থাকা সভ্য দেশে নাকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাব দিতে হয়।

মা হারা শিশু জয়া-আরিফ কি আমাদের ক্ষমা করবেন? আর কত শিশু দেখবে মায়ের লাশ?

ইত্তেফাকের খবরে লেখা হয়েছে, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের জেরে শিল্পাঞ্চল সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

মানবজমিনের অনলাইন ভার্সনের খবরে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে তীব্র সংকটে ডলারের বাজার। ডলার এখন সোনার হরিণ। ডলার সংকট কাটাতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা সবই ভেস্তে যাচ্ছে। বাজারে দাম নিয়ে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে-১২৮ টাকা। যখন এই পরিস্থিতি তখন দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, ভারতে পাচারের সময় মেহেরপুর সীমান্ত থেকে ৩৩ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত 

রহমানের ‘লৌহ কপাটে’ ক্ষুব্ধ চুরুলিয়ার কাজী পরিবার, হুঁশিয়ারি আইনি পদক্ষেপের-সংবাদ প্রতিদিনের অনলাইন ভার্সনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, ‘পিপ্পা’ সিনেমা রিলিজের পর থেকেই সংবাদের শিরোনামে এ আর রহমান। ছবির গুণগত মানের থেকেও তুলনামূলক আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ (Karar Oi Louho Kopat)-এর রিমেক ভার্সন গান। আর রহমানের নজরুলগীতি বিকৃতি নিয়েই নিন্দার ঝড় সর্বত্র। তীব্র নিন্দা কবিতীর্থ চুরুলিয়াতেও।কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’কে যেভাবে নিজের আঙ্গিকে পরিবেশন করেছেন রহমান, তা শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ চুরুলিয়ার মানুষ। চলছে চরম সমালোচনা। চুরুলিয়ার কাজী পরিবারের এবং নজরুল অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। গানটি প্রত্যাহার না করলে আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কাজী পরিবার। তাঁদের আক্ষেপ, “আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে লেখা যে গান শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় আপামর বাঙালির, যে গান স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলো চোখের সামনে তরতাজা করে তোলে, সেই গানের সুরটাই বদলে দিয়েছেন এ আর রহমান।”

নিয়োগ দুর্নীতিতে সব বড় মাথাকে এখনও সিবিআই গ্রেফতার করেনি কেন? প্রশ্ন শীর্ষ কোর্টের-আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের এ খবরে লেখা হয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে সব বড় মাথাকে এখনও সিবিআই গ্রেফতার করেনি কেন, সেই প্রশ্ন তুলল এ বার সুপ্রিম কোর্টও। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলা তুলে ধরে আজ সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে প্রশ্ন ছুড়েছে, তাদের নথিতে ১৭ জন অভিযুক্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯ জনকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? বাকিরা কেন মুক্ত? কেন প্রভাবশালীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না? সুপ্রিম কোর্ট তাদের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ফলেই প্রসন্ন জামিন পেয়ে গেলেন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ১১

ট্যাগ