নভেম্বর ২১, ২০২৩ ২০:৩১ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো ও সুস্থ আছেন।

আপনারা জানেন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। যদিও যুদ্ধবিরতির একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আলাপ আলোচনা চলছে। দেখার বিষয় কি হয়। তবে বিশ্বের সবার দৃষ্টি এখন সেদিকে। এরইমধ্যে গাজায় ইসরাইলি সেনাদের হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এরআগে জাতিসংঘ মহাসচিব যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধীতা করেছে এবং ইসরাইল জাতিসংঘ মহসচিবের পদত্যাগ দাবি করেছে। গাজায় গণহত্যা চলছে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা জোরালোভাবে বলছেন। তো গাজার এই সামগ্রি পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের বক্তব্য শুনেছি। আজও তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন গাজা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য।

জনাব অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, পশ্চিমা মিডিয়ায় তাকালেই দেখা যায়– এখনও অভিযোগ করা হচ্ছে প্রথমে হামাস হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে তারপর ইসরাইল এখন গাজায় তাদের অভিযান চলাচ্ছে। কেন হামাস হামলা চালালো এমন প্রশ্ন তুলছে তারা-আপনি এ বিষয়ে কি বলবেন?

ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: দেখুন, হামাসের আক্রমণে আমি অন্তত অবাক হয়নি। এটাই হওয়া স্বাভাবিক। একাত্তর সালে আমি নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। আমিও তখন বাবা মাকে ছেড়ে ভারতে যাই যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পরিবেশ মানুষকে ওভাবেই তৈরি করে। যে পরিবেশ গাজা, পশ্চিম তীর  বলব গোটা ফিলিস্তিনে যে পরিবেশের মধ্যে তারা প্রতিটি সময় থাকে তাতে এ ধরণের প্রতিক্রিয়া না হওয়ার তো কারণ নেই।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ইমতিয়াজ-এই যে একদিকে ফিলিস্তিনিদের নিঃস্ব করে দেয়া অন্যদিকে ইসরাইলে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে-যতটুকু জানা যায় তা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সহায়তায়-এবং একটি কলোনিয়াল স্টেট-যদি এ সম্পর্কে কিছু বলেন?

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: জ্বি, আপনি ঠিকই বলেছেন, ইসরাইল দেখাতে চেষ্টা করেছিল বিশ্বকে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, অস্ত্র-শস্ত্র, ড্রোন সবকিছুতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেখুন,প্রতি বছর যদি আমেরিকা শুধু চার বিলিয়ন ডলার দেয়, ইউরোপিয় ইউনিয়ন যে সহায়তা দেয় অর্থাৎ প্রতিবছর যে পরিমাণ ডলার সেখানে সহায়তা দেয়া হয় তাতে তো এ ধরণের উন্নয়ন কাঠামো না হওয়ার কারণ নেই। তবে বুঝা যাচ্ছে সেখানে পুরো জিনিষটাই একটি কৃত্তিম কাঠামোর মধ্যে রয়েছে। এটা রীতিমত অপ্রেসিভ কাঠামো। ইউরোপ ও আমেরিকা সেখানে একটি কলোনিয়াল সিস্টেম তৈরি করেছে। পশ্চিমা দেশের লোকরাই বলছে ইসরাইল একটি কলোনিয়াল সিস্টেমে চলছে এবং তারা সেখানে সেভাবেই একটি সামিরক কাঠামো তৈরি করেছে। ফলে ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটির মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে। আর তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর সব সবময়ই অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল। ফলে ফিলিস্তিনিদের যে এমন একটি রিঅ্যাকশন হবে সেটাই স্বাভাবিক।

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব শুনছেন ফিরছি শিগগিরি আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ইমতিয়াজ ইসরাইলে হামাসের হামলার পর ইসরাইল হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যাকে বৈধ করবে একইসাথে হিরোসিমা নাগাসাকিতে যে অ্যাটম বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেও বৈধ করা হয়েছিল এসবই গণহত্যা- বিষয়টির সাথে হামাসের হামলাকে কীভাবে দেখেন?

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: দেখুন, সেই হিসেবে হামাসের হামলাটি অস্বাভাবিক না। কারণ তাদের দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে। আমার মনে হয় না আর কোনো উপায় ফিলিস্তিনিদের কাছে ছিল। হামাস ভালো করেই জানত এ হামলার কি প্রতিক্রিয়া হবে। আর সে ব্যাপারেও হামাস প্রস্তুত ছিল। আমি যেটি আগে বললাম, ইসরাইলের ওপর হামাস যে হামলা চালিয়েছে সেইরকম হামলা ও আক্রমণ প্রতিদিন ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর চালাচ্ছিল। ফলে হামাসের দিক থেকে তো রিঅ্যাক্ট করবেই। আমি মনে করি এখন থেকে হামাস আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে পরেরবার আবারো কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে। ইসরাইল যদি এই হামলা থেকে শিক্ষা না নেয়, না বুঝতে পারে বা এই সংকটের যদি সমাধান না করে। বিশ্ব সম্প্রদায় যদি ইসরাইলের ওপর ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে চাপ সৃষ্টি না করে তাহলে হামাস আরো কঠোর হবে। তবে যেকোনো যুদ্ধে নিরীহ মানুষ যখন মারা যায় সেটি অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু যখন কাউকে বাধ্য করা হয় কাউকে আর সে বিষয়টি যদি আমরা না বুঝি তাহলে এক পাক্ষিক চিন্তা হলো আমাদের।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এ পর্বের শেষ প্রশ্নটি হচ্ছে- এই যুদ্ধের সমাধান কি সম্ভব, কীভাবে হতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ: এই যুদ্ধের কীভাবে সমাধান হতে পারে সেটি আমাদের দেখা উচিত। আমি মনে করি আপাতত দুই রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে যাওয়া যায় যেটি সবাই মেনেছিল। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই ইসরাইলের সেই প্রধানমন্ত্রীকে মেরে ফেলা হয়েছিল। সেকথাও মানুষ ভুলে গেছে।

অনেক সময় হামাস বা ফিলিস্তিনিদের দায়ী করা হয় যে তারা সমঝোতায় যেতে চায়নি। তবে অনেকে ভুলে গেছে অসলো চুক্তির পর কয়েক মাসের মধ্যেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা হয়। বর্তমানে যারা ইসরাইলের ক্ষমতায় আছে মূলত তারাই তাকে মেরে ফেলেছিল। আর অনেকেই বলছে ইসরাইলের বর্তমান সরকার কট্টোরপন্থি ফ্যাসিস্ট সরকার। আর একথাটি জুইস স্কলারাই বলছে। নোয়াম চমস্কিসহ অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিই বলছে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা জেনোসাইড বা গণহত্যা।

তো জনাব অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ-গাজা যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/জিএআর/২১

ট্যাগ