ডিসেম্বর ০৬, ২০২৩ ১৬:৪০ Asia/Dhaka
  • মূল্যের হেরফের বিনা কারণে হয় না
    মূল্যের হেরফের বিনা কারণে হয় না

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজকের আসরে আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: মূল্যের হেরফের বিনা কারণে হয় না। এই প্রবাদের পেছনে একটা গল্প আছে। গল্পটি এরকম:

এক ব্যবসায়ীর দুই কর্মচারী ছিল। তাদের বয়স ভালোই ছিল। কর্মচারীদের সবাই পাঁচ বছর ধরে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাজ করছিল। তার মানে দু'জনেরই কাজের অভিজ্ঞতা ছিল সমান পর্যায়ের।

সমান অভিজ্ঞতার অধিকারী হলেও ব্যবসায়ী কিন্তু কর্মচারীদের একজনকে অন্যজনের চেয়ে দ্বিগুণ বেতন দিতো। যে কর্মচারী কম বেতন পেতো সে কিন্তু ব্যবসায়ীকে পছন্দ করতো। তবে তার সহকর্মীর তুলনায় বেতন কম পাওয়ায় সে মনোক্ষুণ্ন ছিল। একবার এক বাণিজ্যিক সফরে কম বেতনের কর্মচারীর সুযোগ হলো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার। কেননা তাদের সাথে ওই সফরে আর কেউ ছিল না। কর্মচারী ব্যবসায়ীকে সুযোগমতো বললো: আপনি আমাকে যা-ই বেতন দেবেন, তাতেই আমি খুশি। আল্লাহর কাছে বরকত কামনা করি-শোকর আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু একটা প্রশ্ন আমার ভেতর ঘুরপাক করছে। অনুমতি দিলে প্রশ্নটা করতে চাই। ব্যবসায়ী অনুমতি দিলো। 

অনুমতি পেয়ে কর্মচারী জানতে চাইলো: আমি এবং আমার সহকর্মী একইসঙ্গে একই কাজে আপনার কাজে নিযুক্ত হয়েছি। দু'জনের কাজের অভিজ্ঞতাও সমান সমান। কিন্তু আমার সহকর্মীর বেতন আমার বেতনের দ্বিগুণ-রহস্যটা কী? ব্যবসায়ী মুচকি হেসে দিয়ে বললো: তুমি নিশ্চিত থাকো যে কোনো চড়ামূল্যই বিনা কারণে হয় না। ওকে তোমার চেয়ে দ্বিগুণ বেতন দেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। একটু অপেক্ষা করো, উপযুক্ত সময়ে তার কারণটা তোমাকে বলবো আমি। এর পর দুই-তিন দিন কেটে গেল। একদিন ব্যবসায়ী তার দুই কর্মচারীকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসলো। এমন সময় বাইরে থেকে কাফেলার উটের গলার ঘণ্টার ধ্বনি কানে এলো। ব্যবসায়ী প্রচুর মাল-সামানা নিয়ে এসেছিল বিক্রি করার জন্য। সে তাই ভালো ক্রেতার সন্ধান করছিল। উটের ঘণ্টার ধ্বনি শুনে তাই বললো:

আশা করি এই কাফেলার ভেতর আমার মালামাল বিক্রির জন্য ভালো ক'জন ক্রেতা পেয়ে যাবো। দ্রুত মালামাল বিক্রি করে নিজেদের বাসাবাড়িতে ফিরে যেতে পারলেই ভালো। কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে তাই বললো: তোমাদের মধ্য থেকে একজন গিয়ে দেখে আসো তো কী খবর-টবর! আদৌ কি বিক্রি করার ব্যাপারে কোনো আশা-ভরসা আছে? কম বেতনের কর্মচারী নিজেকে তৎপর এবং বুদ্ধিমান হিসেবে তুলে ধরার জন্য দ্রুত উঠে বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললো: হ্যাঁ! আপনি ঠিকই বলেছেন, একটা ব্যবসায়ী কাফেলার উটের গলার ঘণ্টার শব্দই হচ্ছিলো। তারা এদিক দিয়ে চলে গেছে। ওদেরকে তো কেনাবেচার লোক বলে মনে হলো না, কেননা তাদের মাঝে যাত্রাবিরতির কোনো লক্ষণই দেখা গেল না। 

কম বেতনের কর্মচারীর কথা শোনার পর ব্যবসায়ী তাকে ধন্যবাদ দিয়ে অন্য কর্মচারীর দিকে তাকিয়ে বললো: তুমিও যাও, দেখো তো কী খবর! বেশি বেতনের কর্মচারী উঠে গেল এবং একটু দেরি করে ফিরলো। দেরি দেখে কম বেতনের কর্মচারী খুশি হয়ে মনে মনে বললো: আমি অনেক দ্রুত গেছি এবং ফিরেছি। কিন্তু আমার সহকর্মী কীরকম দেরি করলো। ব্যবসায়ীকে কিছু বললো না। ব্যবসায়ী বেশি বেতনের কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলো: কী খবর? কর্মচারী বললো: অন্তত এক শ উটের বিশাল একটা কাফেলা ছিল। খচ্চরও ছিল পঁয়ত্রিশটির মতো। অন্তত এক শ পঁচিশটির ওপর বোঝা ছিল, দশ জন উটের পিঠে সওয়ার ছিল। তাদের মাল ছিল কাপড়, বাদাম আর আখরোট। মাশহাদ থেকে এসেছে, যাচ্ছে ইস্পাহানের দিকে। 

পরের সরাইখানাতে যাওয়ার উদ্দেশে দ্রুত যাচ্ছিলো। রাত হয়ে যাবার আগেই তারা সেই সরাইখানাতে পৌঁছতে চায় বলে তাড়াহুড়ো করছিল। রাত হয়ে গেলে চোর-ডাকাতের হাতে পড়ার আশঙ্কা করছিল তারা। পরের সরাইখানাতে তারা দুই-তিন দিন থাকবে। ওই কয়দিনে তারা কিছু তুলা, পশম এবং মশলাপাতি কিনবে। তাদেরকে বললাম: আমাদের কাছে মশলা এবং পশম আছে। কথা হয়েছে যে আগামিকাল সকালে তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে পরবর্তী সরাইখানায় যাবো। বেশি বেতনের কর্মচারীর পুরো বর্ণনা শুনে খুশি হলো ব্যবসায়ী এবং তাকে ধন্যবাদ জানালো।  বেশি বেতনের কর্মচারীর বর্ণনা শুনে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যবসায়ী বললো: ব্যবসায়ী কাফেলা সম্পর্কে ভালোই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছো। তুমি আবার পশম কিংবা মশলাপাতির দাম-দস্তুর নিয়ে কোনো কথা বলো নি তো? কর্মচারী বললো: না। বলেছি দামাদামির বিষয়টা আপনার সঙ্গে হবে। ব্যবসায়ী আবারও বেশি বেতনের কর্মচারীকে ধন্যবাদ দিলো। এরপর তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললো: আগামিকালের সফরের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাবার-দাবার ইত্যাদির ব্যবস্থা করো। আগামিকাল আমরা পরবর্তী সরাইখানা-যেখানে ব্যবসায়ী কাফেলা দুই-তিন দিন যাত্রাবিরতি করবে, সেখানে যাবো।

ওদেরও তুলা এবং পশম কেনা দরকার আর আমাদেরও মালামাল বিক্রি করা দরকার। ভালোই হবে যদি আমরা আমাদের তুলা এবং পশমগুলো তাদের কাছে ভালো দামে বিক্রি করে দিতে পারি। বেশি বেতনের কর্মচারী যখন বাইরে গেল, ব্যবসায়ী তখন কম বেতনের কর্মচারীর দিকে তাকিয়ে বললো: এখন বুঝতে পেরেছো কেন তোমার সহকর্মী তোমার চেয়ে বেশি বেতন পায়। ওই ঘটনার পর থেকে কেউ যখন কোনো দামি জিনিসের মূল্যায়ন সম্পর্কে কথা বলার চেষ্টা করে তখনই এই উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করে: কোনো জিনিসের চড়ামূল্য কিংবা কমমূল্য বিনা কারণে হয় না।#

পার্সটুডে/এনএম/৬/১১৮

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ