ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ ১৬:৪৫ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ১১ ডিসেম্বর সোমবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সম্পদ ১০ বছরে ১০২ কোটি বেড়েছে-প্রথম আলো/ইত্তেফাক
  • বাজারে সর্বনিম্ন চালের কেজি ৫০ টাকা, নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস-ডেইলি স্টার বাংলা
  • দূষণে শীর্ষ ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’-ইত্তেফাক
  • কূটনীতিকদের চোখ রাজনীতি অর্থনীতিতে-মানবজমিন
  • ভোটবিরোধী  সমাবেশ সভা বন্ধ চায় ইসি-যুগান্তরের  শিরোনাম

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ৩৭০ ধারা বিলোপের  মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেন মোদী-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • সংসদ থেকে বহিষ্কার কাণ্ড: সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের মহুয়ার-সংবাদ প্রতিদিন
  • জম্মু ও কাশ্মীরে দ্রুত নির্বাচনের নির্দেশও দিল সুপ্রিম কোর্ট-গণশক্তি
  •  বন্ধ চা-বাগান অধিগ্রহণ করবে সরকার, জলপাইগুড়ি থেকে জানালেন মমতা -আজকাল

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি। দৈনিকগুলো ভিন্ন ভিন্ন খবরকে প্রধান শিরোনাম করেছে। তবে রাজনীতি বিষয়ক খবরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। প্রথমে দৈনিকগুলোর  রাজনীতি বিষয়ক খবরের দিকে দৃষ্টি দেব।

প্রথম আলোর খবর-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিতের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে,  মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সম্পদ ১০ বছরে ১০২ কোটি বেড়েছে।

প্রথম আলোর মতামত কলামে-যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রিয়াজ লিখেছেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে যে আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়েছে, সাংবিধানিক ও আইনি ভাষায় একে ‘নির্বাচন’ বলে বর্ণনা করা হলেও, চলমান ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় নিলে একে নির্বাচন বলে অভিহিত করা কঠিন। যে কারণে সবার মনেই প্রশ্ন, এই নির্বাচনে সরকারে লক্ষ্য কী? এরপরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী হবে?

যেকোনো নির্বাচনের সময় একধরনের অনিশ্চয়তা থাকে, জনগণের মনে প্রশ্ন থাকে—কোন দল কাকে প্রার্থী করছে, কে জিতবেন, দলগুলো কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কে বিজয়ী হবেন? এসব প্রশ্নের কারণে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯১ সালের পর জনমত জরিপের একটি ধারা গড়ে উঠেছিল।সেই ধারা ২০১৮ সালের আগেই হারিয়ে গেছে।এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সূচনার আগে গত ২৮ অক্টোবর শক্তি প্রয়োগ করে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে দলটির বিরুদ্ধে একধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘ভায়োলেন্ট ক্র্যাক ডাউন’ বলে বর্ণনা করেছে।

 দল এবং দলছুট কয়েকজনের অংশগ্রহণকে দেখিয়ে যা সাজানো হচ্ছে, তাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তো দূরের কথা, নির্বাচন বলা যায় কি না, সেটাই প্রশ্ন। আর যেভাবে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে, তাতে নির্বাচনের পর দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কী হতে পারে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ক্ষমতাসীনেরা কেবল যে নির্বাচন সাজাচ্ছেন তা নয়, তাঁরা আসলে সাজাচ্ছেন আগামী দিনের রাজনীতি। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশে অনেক দল আছে, সেটা দেখানো, কিন্তু কার্যকর বহুদলীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটানো।

কূটনীতিকদের চোখ রাজনীতি অর্থনীতিতে-মানবজমিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, 

ভোট-পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতির নানা মেরূকরণ এবং সমস্যাসংকুল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে তা আগের মতো সরব বা  স্বশব্দে নয় বরং অনেকটা নীরবেই চলছে বিদেশি বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগীদের নিবিড় ওই পর্যবেক্ষণ। পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি এবং তার মিত্রদের দাবিকে ‘অগ্রাহ্য’ করে নির্বাচন কমিশনের তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণায় ভোটে বিদেশিদের আগ্রহ এমনিতেই কমে গেছে। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ নির্বাচনের আমেজ তৈরির বদলে ডামি প্রার্থী রাখা এবং নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে ওই নির্বাচনের ফল কী হবে তা অন্তত বিদেশিদের অনুমানের বাইরে থাকার কথা নয়। ফলে সঙ্গত কারণেই ভোটে চোখ নয় বরং ভোট-পূর্ব রাজনীতিতে আর কতো চমক আসছে- তা দেখতেই আগ্রহী কূটনীতিকরা।

ইত্তেফাকের খবরে লেখা হয়েছে, বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ সোমবার রাজধানী ঢাকার অবস্থান শীর্ষে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিলো ৩২৫, যা বাতাসের মানকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে নির্দেশ করে।১৫১-২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এছাড়া, ২০১-৩০০ একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ও ৩০১-৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

দ্রব্যমূল্য ও অর্থনীতির খবরে প্রথম আলোর দুটি খবর তুলে ধরছি। পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বর বাংলাদেশ এ খবরে লেখা হয়েছে, নেদারল্যান্ডস বিশ্বের ১৪০টি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করে।তবুও ইউরোপের এই দেশের আফসোসের যেন শেষ নেই।ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে বাংলাদেশের মতো বড় বাজারে ডাচ পেঁয়াজের পুরোনো হিস্যা পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছে না। ৭ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার রাতারাতি চড়া হয়েছে যা নিয়ে দেশব্যাপী চলছে নানা আলোচনা। নেদারল্যান্ডসের রপ্তানিকারকেরা এই সুযোগ কাজে লাগাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।এ সম্পর্কিত আরো খবরে লেখা হয়েছে, পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ভোক্তা অধিকারের জরিমানা। দেকানে লেখা পেঁয়াজ নেই গুদামে পাওয়া গেল ৩৬ বস্তা।

যুগান্তরের খবর-আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। এ খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় রোববার বিকালে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশেষ সভা করেছেন।

কোনো ক্রেতা এক কেজির বেশি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন না বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এ বিশেষ সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। 

হবিগঞ্জের ডিসি দেবী চন্দ

জেলা প্রশাসক দেবী চন্দের সভাপতিত্বে সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হলো— প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ১২০ টাকা, খুচরা ১২৫ টাকা নির্ধারণ। পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে খুচরা বিক্রেতারা ১-২ বস্তার বেশি পেঁয়াজ একসঙ্গে ক্রয় করতে পারবেন না। ক্রেতাগণও খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে ১ কেজির বেশি পেঁয়াজ ক্রয় করতে পারবেন না। 

বাজারে সর্বনিম্ন চালের কেজি ৫০ টাকা, নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে বলে খবর দিয়েছে ডেইলি স্টার বাংলা। পেঁয়াজের দাম তো লাগামহীন- এ অবস্থায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ প্রতি কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। তবে গত দুই সপ্তাহে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে।

টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোতে তার অভিমত করামের শিরোনাম করেছেন এমন- রিজার্ভ-সংকট কোন ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে?-এ কলামে লেখা হয়েছে, দেশের বৈদেশিক ঋণের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে এবং বিপরীতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ মাত্র ১৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (টিবিএস, ২৮ নভেম্বর ২০২৩)।

অভিযোগ দুটি—এক, আন্তর্জাতিক সুদের হার বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি। ফলে আমদানির পরিমাণ একই থাকলেও পণ্যমূল্যে আমদানির আর্থিক মূল্য বেড়েছে এবং দুই. আমদানির আড়ালে ওভার ইনভয়েসিং করে ডলার পাচার।

প্রতি মাসে গড়ে সর্বনিম্ন এক বিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষয় হচ্ছে। মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকে ডলার বিক্রি করাই ক্ষয়ের কারণ। একদিকে ঋণখেলাপি প্রক্রিয়া জারি থাকায় ডলার পাচারে লাগাম আসেনি। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি, আস্থাহীনতা এবং কম বিনিময় হারের কারণে প্রবাসী আয়ে স্থবিরতা এসেছে।

ইসলামী ব্যাংকের মতো বৃহৎ প্রবাসী আয় আনয়নকারী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা জালিয়াতির অভিযোগের কারণে গ্রাহকের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে এবং সে কারণেও হুন্ডি বেড়ে রিজার্ভ ক্ষয়ের কারণ ঘনীভূত হয়েছে। জরুরি জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন দরকারি পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বাজারে ডলার ছাড়তে হচ্ছে। আমদানির দায়, সরকারি-বেসরকারি ঋণ ও বকেয়া দায়, অপরাপর দেনা  মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

তবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের বাইরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু রিজার্ভ আছে বিদেশি বন্ড, স্বর্ণ কিংবা বিদেশি ঋণ (এসডিআর) ইত্যাদি হিসেবে, যা তাৎক্ষণিক খরচ করা যায় না। সরকারি হিসাবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ফেরত না আসা ঋণ, উন্নয়ন প্রকল্পের ফেরত না আসা রিজার্ভ ঋণ (আইডিএফ) ইত্যাদি মিলিয়ে গ্রস হিসেবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগতভাবে কমে যাওয়ার কাঠামোগত কারণের মধ্যে আছে—১. ডলারের বিনিময় হার হুন্ডি মার্কেটের বিপরীতে কম হওয়া, ২. এলসি খোলার কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিশ্চিত করতে না পারা, ৩. ব্যাংকিং খাতের ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণচর্চা না থামায় এসবে ঋণের একাংশ পাচার হয়ে ডলার-সংকট বাড়া, ৪. খেলাপি ঋণ হুন্ডির স্থানীয় সরবরাহ চেইনে ঢুকছে, এতে বিদেশ থেকে ডলার দেশে আসছে না, পাচারকারীরা অনলাইন জুয়া ও ক্রিপ্টো ব্যবসায়ীরা ডলার বিদেশে রেখে তাঁদের বৈধ-অবৈধ চাহিদা মেটাচ্ছেন।

এর ফলাফল হচ্ছে বিদেশে যাওয়া বাড়া সত্ত্বেও বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমে যাওয়া। সরকার ডলারের বিনিময় হার ধরে রাখতে জোরাজুরি করছে বলেও বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ছে না। অথচ কিছু ব্যাংক ডলার রেট বাড়লে তাদের প্রবাসী আয় বাড়ার প্রমাণ তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বেড়ে গেলে, আমদানি মূল্যস্ফীতি যেমন বাড়ে, তেমনি পাচারকারীদের বৈধ-অবৈধ টাকার বিপরীতে প্রাপ্ত ডলারও কমে যায়।

সরকারের হাতে মাত্র আড়াই মাসের আমদানি বিল রিজার্ভ হিসেবে আছে। তবে হ্যাঁ, রিজার্ভ আড়াই মাস পরেই শূন্য হয়ে যাবে না। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে শীতের কারণে জ্বালানি আমদানির চাহিদা কিছু কমবে। 

প্রবাসী আয় ও রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হরে বাড়ছে না বলে (বরং গড় মানে কমছে) আগামী ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যেই রিজার্ভ ২ মাসের আমদানি বিলের নিচে চলে আসার ঝুঁকি আছে। তেমনটা ঘটলে টাকার মানের আরেক দফা মূল্যপতনও সম্ভাব্য।

ডলার-সংকট আমাদের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। এই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে আমরা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছি। ডলার-সংকটে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যমূল্য বৃদ্ধিতে জর্জরিত জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো আরও প্রকট হচ্ছে।  

২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের শেষে বাণিজ্য ব্যবধান ঋণাত্মক—১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। বিদেশে শ্রম রপ্তানি বাড়লেও আনুপাতিক হারে প্রবাসী আয় বাড়ছে না। ফলে নিম্ন রিজার্ভের বিপরীতে অতি উচ্চ বিদেশি ঋণের সুদের বোঝাও (বিলাতের লাইবর ও যুক্তরাষ্ট্রের সোফার সুদ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি) আছে।

নির্বাচনের পরে সরকারকে আটকে রাখা দেনা পরিশোধ করতে বাধ্য হবে, নতুবা ঋণের কিস্তি ও বিভিন্ন সংস্থার পাওনা বিলম্বে সুদের দায় আরও বাড়বে, যা সাসটেইনেবল সীমা ছাড়াবে। তখন সরকারকে কিছু বন্ড কিংবা গোল্ড বিক্রির মতো পদক্ষেপ নিতে হবে, যদি রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে না পারে।  

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতসহ সরকারের বকেয়া আছে কয়েক বিলিয়ন ডলার

যেহেতু ঋণখেলাপির সমস্যা থামছে না; বরং সরকার খেলাপি ঋণ কম দেখতে রিরাইট-রিশিডিউলিং অব্যাহত রেখেছে, সে জন্য ডলার পুরোপুরি ফ্রি ফ্লট করতে গেলে পাচারের বিপদ কমবে না। পাচারের চাহিদা যত দিন থাকবে, তত দিন এই কাজটা করা যাবে না। এখানে কেনেসীয় ধারায় কিছু নিয়ন্ত্রণ লাগবে। পাচার বন্ধ করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সবার আগে কালোটাকার বিস্তার এবং বিশেষভাবে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২০২৪ সালের শেষের দিকে ১০ বিলিয়নের নিচে গিয়ে স্থির হতে পারে। পাকিস্তান সরকার এমন নিম্ন রিজার্ভ নিয়ে দশক পার করছে। এ রকম নিম্ন রিজার্ভ পরিস্থিতিতে নতুন ঋণ কিংবা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট পাওয়া মুশকিল, কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্র আমদানি করে দ্রুত রপ্তানি বাড়ানো মুশকিল। তাই একবার এই সাইকেলে পড়ে গেলে বেরিয়ে আসা মুশকিল এবং সময়সাপেক্ষ।

নির্বাচন সামনে রেখে রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকাতে, টাকার পতন ঠেকাতে এবং আইএমএফের ডিসেম্বর রিজার্ভ টার্গেট পূরণ করতে, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে জোর করে ডলার কিনছে, যেখানে তারা ডলারের অভাবে এলসি খোলা এবং সেটেল করতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে ব্যাংকের এলসি সক্ষমতার সংকট বেড়ে যাবে। সরকার জোর করে আমদানি কমাবে এবং অন্যদিকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের কারণে অর্থনীতি হয়তো দেউলিয়া হবে না। কিন্তু দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে যে বিপর্যয় শুরু হয়েছে, সেটা আরও গভীর হবে। মানুষের ক্ষুধার কষ্ট ও বেকারত্ব বাড়বে।

ডলার-সংকট আমাদের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। এই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে আমরা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছি। ডলার-সংকটে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যমূল্য বৃদ্ধিতে জর্জরিত জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো আরও প্রকট হচ্ছে।  

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

সংসদ থেকে বহিষ্কার কাণ্ড: সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের মহুয়ার-সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে এথিক্স কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সাংসদ পদ খুইয়েছেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। গত শুক্রবার লোকসভায় কমিটির রিপোর্ট পেশের পর ধ্বনিভোটে মহুয়াকে বহিষ্কারের(Expelled) সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন স্পিকার ওম বিড়লা। এবার এই বিষয়টিকে শীর্ষ আদালতের দোরগোড়ায় নিয়ে গেলেন মহুয়া মৈত্র। অনলাইন মারফত তিনি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) এনিয়ে মামলা দায়ের করেছেন বলে খবর। দ্রুত তা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা।যে পদ্ধতিতে তৃণমূল (TMC) সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া।

কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ অস্থায়ী, সংবিধান মেনেই ৩৭০ ধারা বিলোপ, রায় সুপ্রিম কোর্টের-সংবাদ প্রতিদিনসহ প্রায় সব দৈনিকে লেখা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত বৈধ ছিল, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, ৩৭০ ধারা একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল। তাই এই ধারা বিলোপ করার অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রপতির। সংবিধান অনুসারেই জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচন শেষ করতে হবে।

জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) বহু মামলা দায়ের হয়। সেগুলিকে একত্রিত করে সম্প্রতি শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার এই মামলার রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সহমত হয়ে জানিয়ে দেয়, “সংবিধানের ৩৭০ ধারা একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৩৭০ ধারা। এই ধারা বিলোপ করে দেওয়ার অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রপতির। সাংবিধানিক পদ্ধতিতেই ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হয়েছে।”  

শীর্ষ আদালত আরও জানায়, দ্রুতই জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দিতে চলেছে কেন্দ্র। দ্রুতই এই কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেরে ফেলতে হবে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার নির্বাচন। তাছাড়া লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সবুজ সংকেত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। 

নরেন্দ্র মোদী

আশা, উন্নতি এবং ঐক্যের পথে অসাধারণ সিদ্ধান্ত। ৩৭০ ধারা (Article 370) বিলোপের সাংবিধানিক বৈধতা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে এভাবেই স্বাগত জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, কাশ্মীর ও লাদাখের জন্য যাবতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে। সুফল পাবেন ৩৭০ ধারায় বঞ্চিত আমজনতাও। উল্লেখ্য সোমবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ১১

ট্যাগ